রমজানে পানাহারের শাস্তি
রমজান মাসের রোজা কোনো নফল ইবাদত নয়। এটা আল্লাহর হুকুম তথা ফরজ ইবাদত। মানুষ এই হুকুমের কথা জেনেও রমজানে দিনের বেলায় পানাহার করে আল্লাহর অবাধ্যতা করছে। আল্লাহর এই হুকুম পালন না করার শাস্তির কিছু নমুনা আমরা হাদিস থেকে জানতে পারি। যা জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরছি।
হযরত আবু উমামা বাহেলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, একদা আমি ঘুমিয়ে ছিলাম, সহসা দু’জন লোক এসে আমার বাহু ধরে আমাকেসহ তারা দুর্গম পাহাড়ে নিয়ে আসলেন। তারা আমাকে বললেন, আরোহণ করুন, আমি বললাম, আমি আরোহণ করতে পারি না। তারা বললেন, আমরা আপনাকে সাহায্য করব। আমি ওপরে আরোহণ করলাম। যখন পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছলাম, বিভিন্ন বিকট শব্দের সম্মুখীন হলাম। আমি বললাম, এ আওয়াজ কীসের? তারা বললেন, এগুলো জাহান্নামিদের ঘেউ ঘেউ আর্তনাদ।
অতপর তারা আমাকে নিয়ে রওয়ানা করলেন, আমি এমন লোকদের সম্মুখীন হলাম, যাদের হাঁটুতে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে; তাদের চোয়াল ক্ষত-বিক্ষত; অবিরত রক্ত ঝরছে।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি বললাম- এরা কারা? তারা বললেন, এরা হচ্ছে সে সব লোক, যারা সওম পূণ হওয়ার আগেই ইফতার করত। (ইবনে হিব্বান, মুসতাদরেকে হাকেম, মুসনাদে শামি, তাবরানি ফিল কাবির, নাসাঈ ফিল কুবরা)
সুতরাং বুঝা গেল-
ক. এ হাদিসে কবরের আজাবের প্রমাণ বহন করে। কবরের আজাব কোরআন, সুন্নাহ ও উম্মতের ইজমা দ্বারা প্রমাণিত। ইমাম আহমদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, কবরের আজাব সত্য, গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট ব্যতীত কেউ তা অস্বীকার করতে পারে না। (আর রুহ লি ইবনিল কাইয়্যিম, ইসবাতু আজাবিল কাবর লিল বায়হাকি)।
খ. কবরের আজাব শরীর ও রূহ উভয়ের ওপর ঘটে, যার স্বরূপ আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। এ আজাব কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময় পর্যন্ত ঘটে তাকে। যখন কিয়ামত হয় তখন রুহকে শরীরে ফিরিয়ে দেয়া হয় আর তারা সবাই কবর থেকে আল্লাহর সমীপে উপস্থিত হবেন।
গ. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বপ্নে কবরের আজাব দেখানো হয়েছে। আর নবী ও রাসুলদের স্বপ্ন সত্য এবং ওহীর অংশ।
ঘ. এতে কবর আজাবের কঠিন চিত্র ফুটে উঠেছে, সুতরাং আমাদের উচিত কবরের আজাবকে ভয় করা এবং তা বেঁচে থাকার জন্য আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলা।
ঙ. রমজানে যে ব্যক্তি জেনে ও ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো কারণ ব্যতীত ইফতারের সময় হওয়ার পূর্বে পানাহার করে, তার জন্য কঠোর হুশিয়ারি রয়েছে এ হাদিসে। এটা কবিরা গুনাহ, যার জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।
চ. সূর্যাস্তের পূর্বে ইফতারে যদি এ শাস্তি হয়, তাহলে যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখে না অথবা কোনো কারণ ব্যতীত কয়েক রমজান ইফতার করে, সে এরূপ বা তার চেয়েও কঠিন শাস্তি ভোগ করবে সন্দেহ নেই। অতএব যারা এরূপ করে তারা দ্রুত তাওবা করে আল্লাহর ফিরে আসতে হবে। আল্লাহ আমাদের উপরোক্ত আজাব ও কঠিন পরিস্থিতি থেকে হেফাজত করে সঠিক পথে চলার তাওফিক দান করুন আমিন।
তথ্যসূত্র : সহিহ ইবনে হিব্বান, নাসাঈ, হাকেম।
জাগো নিউজের সঙ্গে থাকুন। রমজান সম্পর্কিত সুন্দর সুন্দর ইসলামী আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে রমজানের রহমত, বরকত ও মাগফেরাত অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।
বিএ/আরআইপি