শেখ হাসিনার উপর নির্ভর করছে সুষ্ঠু নির্বাচন
দেশে গণতন্ত্রের মান দিন দিন কমে যাচ্ছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমত দায়িত্ব পালন করছে না। এমন মুহূর্তে আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা তা নির্ভর করছে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর। এমনটাই মনে করছেন বিশিষ্টজনরা।
শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে দি ঢাকা ফোরাম আয়োজিত ‘বাংলাদেশের নির্বাচন ও গণতন্ত্র’ শীর্ষক আলোচন সভায় তারা এ মত দেন।
সভায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, একটি আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বে গণতন্ত্রের মান দিন দিন কমে যাচ্ছে। আমরাও এর বাইরে নই।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন। শুধু দেখতে হবে বাজেট ঠিক মতো আছে কিনা। এর বাইরে অন্য কোথাও তাদের তাকানোর কিছু নেই। তবে এখানে দক্ষ লোক নিয়োগ দিতে হবে। তা না হলে তারা যা ইচ্ছা তাই করবে। তাই সবার আগের প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানীকরণ।
নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এসে নির্বাচন কেমন হবে, সরকার কেমন হবে তা নিয়ে সবাই ব্যস্ত। অথচ সারা বছর এ নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা থাকে না। প্রতিবেশী দেশগুলো অনেকটা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারছে। তাহলে আমরা কেন ব্যর্থ হব-উল্লেখ করেন হুদা।
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে সাবেক সিইসি বলেন, দয়া করে নির্বাচন বর্জন করবেন না, একটা রেজাল্ট আসবে। আজ ক্ষমতায় যেতে না পারলে কাল বা পরশু তো যেতে পারবেন। ভারতে বিজেপি ১৫ বছর আগেও দুটি সিট পেত। এখন তারা ক্ষমতায়। গণতন্ত্র একদিন আসবেই। আস্তে আস্তে ধারাবাহিকতা আসবে।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ভারতের চেয়ে আমাদের নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী ও লোকবল বেশি। কমিশনের লোক দিয়ে নির্বাচন করলে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এমন ভাবা ঠিক নয়। কমিশনের লোক দিয়ে কিছু দিন আগে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পরিচালিত হয়েছে। এতে ঢাকার বাইরের সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। কিন্তু ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন কেমন হয়েছে তা সবারই জানা।
তিনি আরও বলেন, আমরা যদি নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারি তাহলে ৯০ শতাংশ সরকারি কর্মকর্তা নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, দেশের রাজনৈতিক দল এবং নেতাকর্মীদের রয়েছে প্রচণ্ড ক্ষমতার লোভ। তারা নিশ্চয়তা চায় নির্বাচনে জেতার। তাই সরকার না চাইলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আমরা যতই হাউকাউ করি না কেন।
সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার মাহফুজ উল্লাহ বলেন, দেশের প্রধান দুই দল পরস্পর পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। তারা এক টেবিলে বসে সমঝোতা করবে এমন সম্ভবনা ক্ষীণ। তাই একমাত্র প্রধানমন্ত্রী পারেন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে। তিনি যদি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন তাহলে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আরেক সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, সংসদ থাকবে, সরকার থাকবে, সবকিছু থাকবে, তাহলে কেমনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।
অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানেগুলোর মান নিম্নমুখী হচ্ছে। বিনা ভোটে ১৫৩ জন নির্বাচিত হলো কিন্তু কোর্ট চাইলে এটি অবৈধ ঘোষণা করতে পারত।
তিনি বলেন, সংসদ ভেঙে না দিলে কখনও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। ক্ষমতাসীন এমপিদের সঙ্গে একজন সাধারণ প্রার্থীর নির্বাচন করা অসম্ভব। ক্ষমতাসীন এমপিদের অর্থ, পেশীশক্তি ও ক্ষমতা আছে, তাই তাদের সঙ্গে সাধারণ প্রার্থী কি করবে।
তিনি আরও বলেন, দেশ এখন সঙ্কটের মধ্যে আছে। আগামী নির্বাচন যদি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক না হয় তাহলে এ সঙ্কট আরও ঘনিভূত হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গনর্ভর ড. সালেহ উদ্দিন বলেন, সরকার যদি অংশীদারিত্বমূলক না হয় তাহলে কোনো কিছুতেই উন্নতি আসবে না। অংশীদারিত্বমূলক সরকারের জন্য নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন কমিশনকে যতই ক্ষমতা দেয়া হোক না কেন তা যদি প্রয়োগ না করতে পারে তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন করা কঠিন।
এইউএ/এএইচ/আরআইপি