নৈতিক স্খলনসহ ১১ অভিযোগ বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:৩৪ এএম, ১৪ অক্টোবর ২০১৭
শুক্রবার রাতে বিচারপতি সিনহার বিদেশযাত্রার আগে তোলা ছবি

ছুটিতে থাকা প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলনসহ ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সম্বলিত দালিলিক তথ্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের কাছে হস্তান্তর করেছেন বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট

শনিবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয়েছে।

এর আগে সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি প্রদান করা হয়নি উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে নির্দেশক্রমে বিবৃতিটি প্রদান করা হলো।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়-

“ছুটিভোগরত মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা মহোদয় গত ১৩/১০/২০১৭ ইং তারিখে বিদেশ গমনের প্রাক্কালে একটি লিখিত বিবৃতি উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের নিকট হস্তান্তর করেন। উক্ত লিখিত বিবৃতিটি সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টিগোচর হইয়াছে। উক্ত লিখিত বিবৃতি বিভ্রন্তিমূলক। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য নিম্নরূপঃ

গত ৩০/০৯/২০১৭ ইং তারিখে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা মহোদয় ব্যতীয় আপিল বিভাগের পাঁচজন বিচারপতি মহোদয়গণকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানান। মাননীয় বিচারপতি মো. ইমান আলী মহোদয় দেশের বাইরে থাকায় উক্ত আমন্ত্রণে তিনি উপস্থিত থাকতে পারেন নাই। অপর চারজন অর্থাৎ মাননীয় বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, মাননীয় বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, মাননীয় বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং মাননীয় বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার মহোদয়গণ মহামান্য রাষ্ট্রপতির সহিত সাক্ষাৎ করেন।

দীর্ঘ আলোচনার একপর্যায়ে মাহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা মহোদয়ের বিরুদ্ধে ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সম্বলিত দালিলিক তথ্যাদি হস্তান্তর করেন। তন্মধ্যে বিদেশে অর্থপাচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনসহ আরও সুনির্দিষ্ট গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

ইতোমধ্যে মাননীয় বিচারপতি মো. ইমান আলী মহোদয় ঢাকায় প্রত্যাবর্তনের পর ১ অক্টোবর, ২০১৭ ইং তারিখে আপিল বিভাগের উল্লেখিত পাঁচজন বিচারপতি মহোদয় এক বৈঠকে মিলিত হয়ে উক্ত ১১টি অভিযোগ (সংযুক্তিসহ) বিশদভাবে পর্যালোচনার পর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, ওই সকল গুরুতর অভিযোগসমূহ মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা মহোদয়কে অবহিত করা হইবে। তিনি যদি ওই সকল অভিযোগের ব্যাপারে কোনো সন্তোষজনক জবাব বা সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হন তাহা হইলে তার সঙ্গে বিচারালয়ে বসিয়া বিচারকার্য পরিচালনা করা সম্ভব হইবে না। এই সিদ্ধান্তের পর ওইদিনই বেলা ১১.৩০ ঘটিকায় মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা মহোদয়ের অনুমতি লইয়া উল্লেখিত পাঁচজন বিচারপতি মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয়ের ১৯, হেয়ার রোড, রমনা, ঢাকা বাসভবনে তাহার সঙ্গে সাক্ষৎ করিয়া অভিযোগসমূহ লইয়া বিশদভাবে আলোচনা করেন।

কিন্তু দীর্ঘ আলোচনার পরও তাহার (প্রধান বিচারপতি) নিকট হইতে কোনো প্রকার গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা বা সদুত্তর না পাইয়া আপিল বিভাগের উল্লেখিত মাননীয় পাঁচ বিচারপতি তাহাকে সুস্পষ্টভাবে জানাইয়া দেন যে, ‘এমতাবস্থায়, উক্ত অভিযোগসমূহের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তাহার সঙ্গে একই বেঞ্চে বসিয়া তাহাদের পক্ষে বিচারকার্য পরিচালনা করা সম্ভব হইবে না’।

এ পর্যায়ে মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সুস্পষ্টভাবে বলেন যে, সেক্ষেত্রে তিনি পদত্যাগ করবেন। তবে এ ব্যাপারে পরের দিন অর্থাৎ ০২/১০/২০১৭ ইং তারিখে তিনি তাহার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাইবেন, অতঃপর ০২/১০/২০১৭ ইং তারিখে তিনি উল্লেখিত মাননীয় বিচাপতিগণকে কোনোকিছু অবহিত না করিয়াই মাহমান্য রাষ্ট্রপতির নিকট এক মাসের ছুটির দরখাস্ত প্রদান করিলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি তা অনুমোদন করেন। তৎপ্রেক্ষিতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি, মাননীয় বিচারপতি মো. ওয়াহ্হাব মিঞাকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে প্রধান বিচারপতির অনুরূপ কার্যাভার পালনের দায়িত্ব প্রদান করেন।

উল্লেখ্য, প্রধান বিচারপতির পদটি একটি প্রতিষ্ঠান। সেই পদের ও বিচার বিভাগের মর্যাদা সমুন্নত রাখার স্বার্থে ইতোপূর্বে সুপ্রিম কোর্টের তরফ হইতে কোনো প্রকার বক্তব্য বা বিবৃতি প্রদান করা হয় নাই। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে নির্দশক্রমে উপরি-উক্ত বিবৃতি প্রদান করা হইল।”

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম।
প্রসঙ্গত, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা শুক্রবার দিনগত রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে সিঙ্গাপুরের এসকিউ-৪৪৭ ফ্লাইটে  অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন।

গত বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতির বিদেশ যাওয়া সংক্রান্ত সরকারি আদেশ (জিও) জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। বিদেশে যাওয়ার বিষয়টি গত ১০ অক্টোবর আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন প্রধান বিচারপতি। ওই চিঠিতে ১৩ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে চান বলে উল্লেখ করেন।

এফএইচ/এনএফ/এমএআর/আরআইপি/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।