সুইস ব্যাংককে আবারো চিঠি দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
টাকা পাচারের নিরাপদ জায়গা হিসেবে সুইস ব্যাংকের পরিচিতি বিশ্বজুড়ে। আর আইনি প্রক্রিয়া কঠিন থাকায় সুইস ব্যাংকের তালা ভেঙে পাচারকৃত টাকা দেশে আনা কঠিন। বাংলাদেশ গত বছর দু`দফা সুইস ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েও কোনো উত্তর পায়নি। তবে নতুন করে টাকা পাচারের তথ্য প্রকাশ পাওয়ার পর, আবারো বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের চিঠি দেবে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে শনিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টেলিফোনে জাগো নিউজকে বলেন, আমরা আবারো চিঠি দেবো। তবে সুইস ব্যাংকের তালা ভাঙা সহজ নয়। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করেছে। শেষ পর্যন্ত ২০১৪ সালের অক্টোবরে ভারত ও সুইজারল্যান্ডের মধ্যে চুক্তি হয়েছে। সম্প্রতি গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, ভারতকে তথ্য দিয়েছে সুইস ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
গত বৃহস্পতিবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী সুইস ব্যাংকে ২০১৪ সালে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ ৫০ কোটি ৬০ লাখ সুইস ফ্রাঁ, বাংলাদেশি টাকায় যা চার হাজার ৫৫৪ কোটি টাকার সমান (এক ফ্রাঁ ৯০ টাকা হিসেবে)। ২০১৩ সালের জমা তিন হাজার ২৩৬ কোটি টাকা থেকে তা এক হাজার ৩১৮ কোটি টাকা বেশি।
নাগরিকত্ব গোপন রেখে যারা সুইস ব্যাংকে টাকা রেখেছেন, তাদের তথ্য অবশ্য প্রতিবেদনে আনা হয়নি।
সাধারণত, সুইস ব্যাংক কখনোই আমানতকারীদের তথ্য প্রকাশ করে না। টাকার পরিমাণও জানতে দেয় না। ব্যাংক টাকা জমা রাখে একটি কোড নম্বরের ভিত্তিতে। তবে বিশ্বব্যাপি টাকা পাচার রোধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ব্যাপকভাবে কার্যকর হওয়ায় সুইস ব্যাংক গত বছর থেকে দেশওয়ারি অর্থের পরিমাণ প্রকাশ করছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবারের প্রতিবেদন।
জানা গেছে, গতবছর সুইস ব্যাংকের প্রতিবেদনে বাংলাদেশিদের তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক তথ্য বিনিময়ের আগ্রহ দেখিয়ে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) করতে চিঠি দেয় সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে।
সূত্রে জানা গেছে, ওই চিঠির কোনো জবাব দেয়নি তারা। হংকং-সাংহাই ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (এইচএসবিসি) মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরও একই আগ্রহের কথা জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক আবারো চিঠি দেয় সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। এরও জবাব পায়নি বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মাহফুজুর রহমান বলেন, সুইজারল্যান্ড আইনের বাইরে কিছু করতে আগ্রহী নয়।
সূত্র মতে, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের টাকা উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ২৮ জুন জাতীয় সংসদে বক্তব্য দেন। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে সুইজারল্যান্ডের এফআইইউর কাছে সুইস ব্যাংকগুলোতে গচ্ছিত বাংলাদেশিদের অর্থের বিস্তারিত তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়।
সূত্র বলছে, সুইস ব্যাংকগুলোতে থাকা বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থ সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য পেতে এখন পর্যন্ত যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তাতে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে বিশেষ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো গুরুতর অনিয়মের জন্য সরকারি তদন্ত চলমান থাকার ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য চাওয়া হলে তা পাওয়া যেতে পারে। অথবা কোনো তালিকা পাঠালেও সে ক্ষেত্রে সুইস ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (এফআইইউ) থেকে তথ্য মিলতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, সুইস ব্যাংকগুলোতে গচ্ছিত টাকার তথ্য-উপাত্ত পেতে হলে আগে তাদের সঙ্গে একটা ভালো সমঝোতা চুক্তি করতে হবে। সেই চুক্তির শর্তের মধ্যে এগুলোকে সুনির্দিষ্ট করতে পারলে তখন তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যেতে পারে।
তার মতে, টাকা ফেরত আনার বিষয়টি আরো কঠিন, তবে অসাধ্য নয়। এজন্য প্রয়োজন সুইস আইনে দক্ষ কোনো আইনজীবী প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা।
সূত্র জানিয়েছে, সর্বশেষ চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ উল্লেখ করেছে, সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) কর্তৃক প্রকাশিত ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড ২০১৩’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনটি সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়। তাতে সেখানে বাংলাদেশিদেরও বিপুল পরিমাণ অর্থ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিএফআইইউ বলেছে, তাদের ধারণা, এর মধ্যে কোনো কোনো ব্যক্তি মানি লন্ডারিং বা অবৈধভাবেও অর্থসুইস ব্যাংকে জমা রেখে থাকতে পারেন। সে কারণে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের স্বার্থে বিস্তারিত তথ্য দেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে সুইজারল্যান্ডের কাছে।
এসএ/বিএ/এসআরজে