কাজে আসছে না নাইলন থেরাপিও

সাঈদ শিপন
সাঈদ শিপন সাঈদ শিপন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:১৭ পিএম, ১০ অক্টোবর ২০১৭

মহাখালীর দিক থেকে আসা বাড্ডা অভিমুখী বেশকিছু পরিবহন সিগন্যালে আটকে আছে। একই অবস্থা হাতিরঝিলের দিক থেকে আসা গুলশান-১ অভিমুখী পরিবহনগুলোর। শুধু গুলশান-১-এর দিক থেকে আসা পরিবহনগুলোকে বাড্ডা ও হাতিরঝিলের দিকে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এ জন্য গোল চত্বরের মাঝামাঝি লম্বালম্বিভাবে নাইলনের দড়ি টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে।

দড়িটি এমনভাবে টাঙান হয়েছে যে, এর দুই মাথায়ই যথেষ্ট ফাঁক রয়েছে। গত রোববার দুপুরে মিনিট পাঁচেকের জন্য মোড়টিতে অবস্থান করে অন্তত ২০টি মোটরসাইকেলচালককে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করে দড়ির মাথার ওই ফাঁকা স্থান দিয়ে চলে যেতে দেখা যায়।

দড়ির মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে ছিলেন দু’জন ট্রাফিক পুলিশ। মোটরসাইকেলচালকরা একের পর এক আইন লঙ্ঘন করলেও সেদিকে দৃষ্টি নেই তাদের। আইন লঙ্ঘন হলেও কোনা তৎপরতা দেখা যায়নি তাদের মধ্যে।

গুলশান-১ গোল চত্বরের এমন দৃশ্য এখন রাজধানীজুড়ে। ট্রাফিক সিগন্যালের লাল-সবুজ-হলুদ বাতি জ্বলছে আর নিভছে। সঙ্গে চলছে ট্রাফিক পুলিশের মুখের বাঁসি আর হাতের ইশারা। কিন্তু কোনো কিছুতেই যেন কাজ হচ্ছে না। শেষমেষ ভরসা হলো নাইলনের দড়ি। কিন্তু দড়িতেও যেন কাজ হচ্ছে না। সামান্য ফাঁক পেলেই দুরন্ত গতিতে বেরিয়ে যাচ্ছে মোটরসাইকেল।

বিশেষ করে প্রভাবশালী মোটরসাইকেলচালকরা অহরহ আইন লঙ্ঘন করছেন। ট্রাফিক বাতির সংকেত, ট্রাফিক পুলেশির হাতের ইশারা কোনো কিছুই মানছেন না তারা। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়ে ট্রাফিক সিগন্যালে ব্যবহার শুরু হয়েছে নাইলনের দড়ি। তবে ট্রাফিক পুলিশের এ নাইলন থেরাপিও বন্ধ করতে পারছে না আইনের লঙ্ঘন।

রাজধানীর গুলশান, বিজয় সরণি, পান্থপথসহ বিভিন্ন সিগন্যালে যন্ত্রদানবদের নিয়ন্ত্রণে শেষ ভরসা হিসেবে নাইলনের দড়ির ব্যবহার শুরু করেছে রাজধানীর ট্রাফিক বিভাগ। নাইলনের দড়িই যদি শেষ ভরসা হয় তাহলে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে মোড়ে মোড়ে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি স্থাপনের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

গুলশান-১ গোল চত্বরে ট্রাফিক সিগন্যাল লঙ্ঘন করে নাইলনের দড়ির পাশ দিয়ে একের পর এক মোটরসাইকেল চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখে সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকা এক মোটরসাইকেল আরোহী পাশের একজনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমরা আর কবে সভ্য হব! ট্রাফিক বাতির সিগন্যাল তো মানিই না, এখন নাইলনের দড়ি টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে তাও মানছি না। কোনো সভ্য দেশে এমন দৃশ্য দেখা যায় না।’

একপর্যায়ে ওই দুই ট্রাফিক পুলিশের একজনের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের। তিনি জানান, রাজধানীর ট্রাফিক পয়েন্টগুলোতে লাল-নিল-হলুদ সিগন্যাল বাতি অনেক আগেই অকার্যকর হয়ে গেছে। মোটরসাইকেলচালকরা ট্রাফিক সিগন্যাল না মানায় রাজধানীজুড়ে ট্রাফিক পুলিশ হাতের ইশারায় ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ শুরু করেন। এ ব্যবস্থাও কাজে না আসায় অনেকটা বাধ্য হয়ে নাইলনের দড়ির ব্যবহার শুরু হয়েছে।

তবে নাইলনের দড়ির ব্যবস্থা বেশ কাজে আসছে বলেও জানান তিনি।

ট্রাফিক পুলিশের ওই সদস্যের সঙ্গে কথা বলার মধ্যেই ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করে দড়ির মাথার ফাঁক গলিয়ে এক মোটরসাইকেলচালককে চলে যেতে দেখা যায়। এ বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বলেন, ভাই এমন দু-একটা যাবেই। বোঝেন তো এটা গুলশান। এ অঞ্চলে যারা চলাচল করেন তারা সবাই হেডামওয়ালা। কিছু বলতে গেলে উল্টো আপনার ওপরেই চড়াও হবে।

‘আমরা হলাম ট্রাফিক পুলিশ, কোনো গাড়িকে থামিয়ে জরিমানা করা বা কাগজ চেক করার ক্ষমতা আমাদের নেই। তবে যাই বলেন নাইলনের দড়ি ব্যবহারের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ চলাচল কিছুটা হলেও কমেছে।’

রাজধানীর বিজয় সরণি ও পান্থপথ ঘুরেও একই চিত্র দেখা গেছে। মোড়গুলোতে লাগান ট্রাফিক বাতিগুলো জ্বলছে। তবে সেই বাতির ওপর নির্ভর করে ট্রাফিক সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের দড়ি বাঁধার ওপর সিগন্যাল নির্ভর করছে।

সিগন্যাল পড়লেই দারিত্বরত ট্রাফিক পুলিশ নিজ হাতে দড়ি বেঁধে দেন। দড়ি বেঁধে দেয়ার পরও অনেক মোটরসাইকেলচালককে দেখা যায় সেই দড়ি অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যেতে। অনেকে আবার রাস্তার মাঝামাঝি স্থানে অবস্থান নিয়ে সিগন্যালের অপেক্ষা করেন। কোনোরকম একটু ফাঁক পেলেই মোটরসাইকেল টান দিয়ে রাস্তা পার হয়ে যান।

বিজয় সরণিতে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করা সেলিম আহমেদ নাইলনের দড়ি ব্যবহারের বিষয়ে বলেন, মোটরসাইকেলচালকরা অনেক সময় সিগন্যাল না মেনেই চলাচল করেন। বিশেষ করে অফিস শুরু ও শেষের সময় গাড়ির চাপ বেশি থাকায় এ প্রবণতা বেশি দেখা যায়। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে এবং মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণে দড়ি টাঙিয়ে দেয়া হয়।

দড়ি টাঙিয়ে দেয়ার কারণে কেউ সিগন্যাল পয়েন্ট অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যেতে পারে না বলেও জানান তিনি।

এমএএস/এমএআর/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।