রমজানে বেড়েছে কাউখালীর মুড়ির কদর


প্রকাশিত: ০৯:৩১ এএম, ২০ জুন ২০১৫

পিরোজপুরে রমজানের প্রথম দিন থেকে মুড়ির চাহিদা বাড়লেও কদর বেড়েছে কাউখালীর তৈরি মুড়ির। কারণ ইফতারের মেন্যুতে মুড়ি সবার প্রিয়। সকালের নাস্তায় কিংবা বিকেলের নাস্তায় আমাদের দেশের অনেক পরিবারের মাঝে মুড়ি ব্যবহার হয়ে আসলেও প্রতি বছর রমজানে ইফতারের মেন্যুতে মুড়ির কদর সকল রোজাদারের কাছে।

ইফাতারের অন্যান্য সামগ্রী থাকলেও রোজা খোলার পর পরিবারের ছোট-বড় সবাইকে নিয়ে মুড়ি মাখিয়ে খাওয়ার রেওয়াজ সব পরিবারের মধ্যেই রয়েছে। এজন্য প্রতি বছর রমজান মাসে মুড়ির চাহিদা বেড়ে যায়। সম্প্রতি চাহিদার উপরে ভিত্তি করে কাউখালী সদরে গড়ে উঠেছে একটি মুড়ির ফ্যাক্টরি। এই মুড়ি স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতেও সরবরাহ করা হচ্ছে।

কাউখালীতে এককভাবে কোনো ব্যবসায়ী মুড়ির দোকান পরিচালনা করেন না। তবে সকল মুদি ব্যবসায়ীরা সারা বছর কম-বেশি মুড়ি বিক্রি করে থাকেন। এদিক থেকে রমজান মাসে শুরুতে সবাই নিজ-নিজ দোকানে অতিরিক্ত মুড়ি ওঠান এবং সেখান থেকে তারা বাড়তি আয় করে থাকেন।

ব্যবসায়ীদের মতে, সারা বছর যে পরিমাণ মুড়ি বিক্রি হয় এক রমজান মাসে আনুপাতিক হারে তার প্রায় সমপরিমাণ মুড়ি বিক্রি হয়। এদিক থেকে বর্তমানে কাউখালীর প্রাণকেন্দ্রে গড়ে উঠা ফ্যাক্টরির মুড়ি স্থানীয়দের চাহিদা পূরণ করছে। একই সঙ্গে চালান দেওয়া হচ্ছে কাউখালীসহ ও তার পার্শ্ববর্তী উপজেলাসমূহে।

মুড়ির বাজার প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীরা জানান, হাতে ভাজা মুড়ি প্রতি কেজি ৮০ থেকে ৭৫ টাকা, মেশিনে ভাজা মুড়ি প্রতি কেজি ৭৫ থেকে ৭২ টাকা এবং আউশ চালের মোটা ধরনের মুড়ি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৭৪ টাকার মধ্যে। আর শাপলা মুড়ির ৪০০ গ্রামের প্যাকেট দাম পড়ছে ৩৫ টাকা।

কাউখালীর বাজারের মুড়ি ব্যবসায়ী হোচেন আলী জানান, উপজেলা সদরের বাইরেও বিভিন্ন গ্রাম ও পাড়া-মহল্লার মুদির দোকানিরা অন্যান্য মালামালের মাঝে সারা বছর মুড়ি বিক্রি করে আসছেন। তবে রমজান মাসে তাদের মুড়ির চাহিদা বাড়ে।

তিনি আরো জানান, বর্তমানে ২৮ চালের মুড়ি বিক্রি করছেন ৭৫ টাকা কেজি দরে। আর কাউখালীতে মেশিনে ভাজা ২৮ চালের মুড়ি বিক্রি করছেন ৭২ টাকা দরে। এছাড়া আউশ চালের মুড়ি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৪ টাকা দরে। এছাড়া প্যাকেট মুড়ি খেজুর গাছ মার্কা প্রতি কেজি বিক্রি করছেন ৭৫ টাকায়।

কাউখালীর আরেক ব্যবসায়ী গোপাল জানান, তারা মুড়ির ব্যবসা দীর্ঘদিন থেকে করে আসছেন। তার ভাষ্যমতে বছরের অন্য দিনের চেয়ে রমজান মাসে মুড়ির চাহিদা বৃদ্ধি হয়। তার দোকানে হাতে ভাজা, মেশিনে ভাজা খোলা মুড়ি এবং বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেট মুড়ি রয়েছে।

২৮ চালের হাতে ভাজা মুড়ি প্রতি কেজি ৮০ টাকা, মেশিনে ভাজা স্বর্ণা মুড়ি প্রতি কেজি ৭২ টাকা, প্যাকেট ৫০০ গ্রাম পদ্মা মুড়ি প্রতি ৪০ টাকা, ৫০০ গ্রাম রুচি মুড়ি ৫৮ টাকা, ৫০০ গ্রাম উজ্জ্বল মুড়ি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও কাউখালীর প্রাণকেন্দ্রে গড়ে উঠা ফ্যাক্টরির মুড়ির চাহিদাও একেবারে মন্দ নয়। সেখান থেকে অনেক ব্যবসায়ীরা মুড়ি খরিদ করছেন।

এ বিষয়ে কাউখালী মুড়ি ফ্যাক্টরির পরিচালক জানান, কাউখালী ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহে মুড়ির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন সারা বছরই ব্যাপক পরিমাণ মুড়ি ক্রয় করে থাকেন। সেই সঙ্গে রমজান উপলক্ষে প্রতি বছর মুসলিম পরিবারগুলোর কাছেও মুড়ির চাহিদা বাড়ে এবং এই মুড়ি তাদের ইফতারিতে একটি নতুন মেন্যু হিসেবে যোগ হয়।

তিনি বলেন, তার ফ্যাক্টরিতে দুই ধরনের মুড়ি তৈরি হয়। এর একটির নাম রজনী গন্ধ্যা ও অপরটি দাড়ি-পাল্লা। এর মধ্যে বর্তমান বাজারে রজনী গন্ধ্যা বিক্রি হচ্ছে ৭৮ টাকা কেজি এবং দাড়ি পাল্লা ৭২ টাকায়।

জানা যায়, তিনি প্রতিদিন গড়ে ১০ কেজি ওজনের প্রায় ২০০ বস্তা মুড়ি বাজারজাত করছেন। এবং এ থেকে আর্থিকভাবে সাবলম্বী হচ্ছেন। তবে সার্বিকভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, মুড়ি ব্যবসা সংক্রান্তে বর্তমান বাজারে মেশিনে ভাজা মুড়ির চেয়ে হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা বেশি এবং সকল মানুষের কাছে এটি সমাদৃত।

হাসান মামুন/এআরএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।