ভালোবেসে বিয়ে : ৯ মাস পর খুন হলেন বুশরা
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নকালে পরিচয়। অতপর প্রেম। তিন বছর প্রেমের সম্পর্কের পর বিয়ের জন্য পরিবারকে জানায় তারা। কিন্তু দুই পরিবারেরই বিয়েতে মত ছিল না। তাই পরিবারের অমতে কোর্ট ম্যারেজ করেন জান্নাতুল বুশরা সুমনা(২৩) ও মো. রাসেল। কিন্তু বিয়ের পর সাংসারিক টানাপোড়েনে শুরু হয় সম্পর্কের অবনতি। বিয়ের ৯ মাস অতিবাহিত না হতেই স্বামীর হাতেই খুন হন গৃহবধু বুশরা।
বুশরার পরিবার বলছেন, অমতে বিয়ে করলেও মেয়ের সুখের জন্য আনু্ষ্ঠানিকভাবে ঘরে তুলি। কিন্তু একরোখা জামাই বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার জন্য মেয়েকে চাপ দিতে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ে এসবের প্রতিবাদ করায় প্রায়ই মারধর করত স্বামী রাসেল। এরই জের ধরে খুন করা হয় বুশরাকে।
বিয়ের পর রামপুরার বনশ্রী সি ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের ৩৪ নম্বর বাড়ির সপ্তম তলায় বসবাস করে আসছিলেন এ দম্পতি। ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে পাস করে প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করছিলেন দুজনই। গত রোববার রাত ১০টার দিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় জান্নাতুল বুশরা সুমনাকে।
ঘটনার পর মেয়ে জামাই রাসেলকে আসামি করে মারধরের পর শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগে রামপুরা থানায় মামলা দায়ের করেন বুশরার বাবা রফিকুল ইসলাম। রাতেই ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ(ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ। সোমবার দুপুরে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। তিনদিনের মধ্যে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে জানা যাবে মৃত্যুর সঠিক কারণ।
অন্যদিকে বুশরা হত্যা ও মামলা দায়েরের পর প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে স্বামী মো. রাসেলকে আটক করে রামপুরা থানা পুলিশ। রাত থেকে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় রাসেলকে। তবে তিনি এখনও স্ত্রী হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেননি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বুশরার মরদেহ উদ্ধারের পর রাসেল তার পরিবারকে জানায়, রাতে বনানীর অফিস থেকে ফিরে বাসার দরজা বন্ধ পান। দীর্ঘসময় অপেক্ষার পর সুমনার মোবাইল ফোনে কল দিয়েও সাড়াশব্দ না পেয়ে দরজায় আঘাত করা শুরু করেন। তখন কক্ষ থেকে তড়িঘড়ি করে এক যুবক বের হয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। ঘরে প্রবেশ করে দেখেন বিছানায় সুমনার মরদেহ। স্থানীয়দের সহায়তায় অচেতন সুমনাকে প্রথমে ফরাজী হাসপাতালে, পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে রাত সোয়া ১০টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওই গৃহবধুকে মৃত ঘোষণা করেন।
বুশরার বোন রোমানা ঢামেক হাসপাতালে অভিযোগ করে বলেন, সুমনার স্বামী বিভিন্ন সময় বুশরাকে নির্যাতন করতে। তিনিই সুমনাকে হত্যা করেছেন। সুমনার বাবার নাম মো. রফিকুল ইসলাম। গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জে। পরিবার নিয়ে থাকেন ঢাকার চকবাজারে। দুই বোন দুই ভাইয়ের মধ্যে সুমনা দ্বিতীয়।
এ ব্যাপারে সোমবার সুমনার বাবা রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, পরিবারের অমতে বিয়ে করেছে মেয়ে। আমরা মনঃক্ষুণ্ন ছিলাম। কিন্তু সুখের কথা ভেবে আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে মেয়ের বিয়েকে মেনে নিই। কিন্তু একরোখা জামাই কখনও আমাদের বাসায় আসেনি। উল্টো বিভিন্ন্ দাবি-দাওয়া (যৌতুক) আদায়ে মেয়েকে চাপ দিত। আমরা কিছু জানতে চাইলে মেয়েই সব চেপে যেত। এর আগে মেয়েকে দেখতে গিয়ে মেয়ের শরীরে মারধরের দাগ দেখেছি। কিন্তু কোনো কিছু খোলাসা করত না। বিয়ের মাত্র ৯ মাসেই মেয়েকে এভাবে খুন হতে হবে ভাবতে পারিনি। মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। এজন্য মামলাও হয়েছে। মেয়ের জামাই এর সঙ্গে জড়িত বলে আমরা পুলিশকে জানিয়েছি।
রামপুরা থানার ওসি প্রলয় কুমার শাহা বলেন, নিহতের স্বামী ও তার বোনের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, হত্যার আগে ওই গৃহবধূ পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে স্বা্মীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
জেইউ/ওআর/আইআই