আইসিডিডিআরবি’র কৃত্রিম পথ্যের গবেষণা বন্ধের দাবি


প্রকাশিত: ০৩:২৪ পিএম, ১৮ জুন ২০১৫

শিশুর তীব্র অপুষ্টি দুর করতে আইসিডিডিআর’বির রেডি টু ইউজ থেরাপেটিক ফুড (আরইউটিএফ) গবেষণা অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্রেস্ট  ফিডিং ফাউন্ডেশন (বিবিএফ)। বিবিএফ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন সিনিয়র বিজ্ঞানী ড. এস কে রয় জাগো নিউজকে জানান, বিবিএফ’র পক্ষ থেকে ১৬ জুন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে এ চিঠি পাঠানো হয়।

শিশুর অপুষ্টিজনিত সকল প্রকার সমস্যা সমাধানে ছয় মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো ও পরবর্তীতে মায়ের দুধের পাশাপাশি ঘরের তৈরি পরিপূরক খাবার খাওয়ানোই যথেষ্ট বলে ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘তীব্র অপুষ্ট শিশুর সঠিক ব্যবস্থাপনা নিরুপণ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে শিশু ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করেন, আইসিডিডিআরবি বিশেষ বাণিজ্যিক গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষায় তাদের অর্থায়নে আরইউটিএফ সংক্রান্ত এ গবেষণা করেছে। কৃত্রিম ওই পথ্য খেলে ভবিষ্যতে শিশু স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়বে।

প্রখ্যাত শিশু ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম কিউ কে তালুকদার প্যাকেটজাত খাবারকে না বলতে শিশুর মা ও অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আরইউটিএফ সংক্রান্ত আইসিডিডিআরবির এ গবেষণা দেশের জন্য মারাত্মক অমঙ্গল বয়ে আনবে।

তিনি জানান, ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে শিশু স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সমস্যা নিয়ে কাজ করছেন, তার অভিজ্ঞতায় শিশুর অপুষ্টিজনিত সমস্যা দূর করতে কৃত্রিম খাবারের কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে করেননা।

শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত ও অপুষ্টিজনিত সমস্যা দূর করতে জন্মের পর প্রথম ছয়মাস শিশুকে শুধুমাত্র বুকের দুধ এবং ছয়মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত দেশীয় উপাদানে ঘরে তৈরি বিভিন্ন পরিপূরকই যথেষ্ট।

ঘরে বসেই সম্পূণ দেশীয় উপাদানে ৩৫ প্রকারের খাবার তৈরী করা যায় বলে ডা. তালুকদার অভিমত ব্যক্ত করেন। এ ব্যাপারে মায়েদের মধ্যে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্য তিনি সরকার ও মিডিয়ার সহায়তা কামনা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্যপাঠ করেন, বিবিএফ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপার্সন ড. এস কে রয়। তিনি জানান, দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী দুই কোটি শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। তাদের মধ্যে মাত্র শতকরা ৩ ভাগ তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আরইউটিএফটি একটি উচ্চমাত্রার শক্তিদায়ক খাবার। এর শতকরা ৬০ ভাগ আসে চর্বি থেকে যা শিশুর অপুষ্টি দূর করতে একটি ভুল পথ্য ব্যবস্থাপনা।

স্থানীয় উপাদান ও খাদ্যাভাসে গ্রহণযোগ্য প্রথাগতভাবে রান্নার প্রণালী ব্যবহার বাড়িতে তৈরি ফিরনী, পায়েস, বুটের হালুয়া, ডিমের হালুয়া খিঁচুড়ি ইত্যাদি খাবার দ্বারা যে কোন ধরনের পুষ্টি পুনর্বাসন করা যায় বলে সাংবাদিকদের অবহিত করা হয়।

ড.এস কে রয়  জানান, শিশু স্বাস্থ্য ও পুষ্টি উন্নয়নের জন্য আরইউটিএফ ব্যবহার অত্যন্ত ক্ষতিকর। যা ভবিষ্যত প্রজন্মের সুস্বাস্থ্য গঠনে মারাত্মক খারাপ প্রভাব ফেলবে। ফ্রান্স এর বাণিজ্যিক কোম্পানি নিউট্রিসেট প্রথম আরইউটিএফ তৈরি ও বিক্রির ব্যবসা চালু করে। দুঃখজনক হলেও ইউনিসেফসহ বিভিন্ন ইউএন সংগঠন তা ক্রয় করে বিনামূল্যে বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে বিক্রি করে।

২০১২ সালে বাংলাদেশ শিশু স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে আমদানি ও বিতরণ নিষিদ্ধ করে। লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়- প্রাতিষ্ঠানিক বা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার জন্য আইসিডিডিআরবিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সরকারের অগোচরে অবৈধভাবে আরইউটিএফ বিতরণ করছে। তারা এ ধরণের অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানান।

৯ জুন আইসিডিডিআরবিতে পুষ্টি বিষয়ক আন্তজার্তিক সিম্পোজিয়ামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশীয় উপাদানে তৈরি নতুন আরইউটিএফ পথ্য তৈরির তথ্য প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে গবেষকরা দাবি করেন এ পথ্যে ব্যবহার করে ৮০ শতাংশ শিশুর অপুষ্টি দূর হয়েছে।

আইসিডিআরবি মহাখালী কলেরা হাসপাতাল, কুড়িগ্রামে টেরে দেস হোমসের ক্লিনিক ও ঢাকার বাড্ডার বারনেনের ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা ৩২৭ জন শিশু রোগীর চিকিৎসায় এ গবেষণাটি করেন। গবেষণায় তিন বছর সময় লেগেছে বলে জানান তারা।

এ খবরটি বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে এলে দেশের প্রখ্যাত শিশু ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা আইসিডিডিআরবির গবেষণাটি ভুল ও আরইউটিএফ শিশু স্বাস্থ্যর জন্য হুমকি বলে তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।

এমইউ/এসএইচএস/আরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।