৪৪ বছর পর জাবিতে পদ্ম ফুল
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভুমি খ্যাত ও জীববৈচিত্রের এক বিশাল আধার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়টিই বরেন্দ্র অঞ্চলের আওতায় পড়ায় এটা প্রকৃতিদত্ত শত বছরের বিলুপ্ত প্রায় গাছ-গাছালি অভায়রণ্য। ক্যাম্পাসে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ধরনের ফুল থাকলেও প্রতিষ্ঠার ৪৪ বছরে ছিল না কোনো পদ্ম ফুল। বহু আকাঙ্খার অবশেষে ২০১৫ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুটেছে পদ্ম ফুল।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক ও জলাশয়ে লাল শাপলার প্রাচুর্য থাকলেও কোনো লেক বা জলাশয়ে ছিল না কোনো পদ্ম ফুল। চৌরঙ্গী ও উপাচার্যের বাসভবনের মাঝখানের জলাশয়ে পদ্ম ফোয়ারা পদ্ম ফুলের গাছ রোপন করা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের নান্দনিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য। আর এই ফুল ফোটাতে অনেক কাঠখড়ি পোড়াতে হয়েছে এই সংক্রান্ত কমিটির।
অনেক বার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনের দুটি জলাশয়ে পদ্ম ফুল ফোটানের চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি বলে জানান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যাক্ষ ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল খায়ের।
সাধারণত পদ্ম ফুল দুই প্রকারের হয়ে থাকে সাদা পদ্ম ও গোলাপী পদ্ম। সাদা পদ্ম সবচেয়ে বেশি পরিমাণে দেখা যায় এবং এটা যশোরের হাওর অঞ্চলে বেশি দেখা যায়, আর গোলাপী পদ্ম একটু কম পরিমাণে দেখা যায় বাংলাদেশে এবং সিলেটের হাওর অঞ্চলে বেশি দেখা যায় বলে জানান অধ্যাপক ড. আবুল খায়ের। আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুটেছে গোলাপী পদ্ম।
এই প্রকল্পের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ অফিসের পরিচালক সালাম সাকলাইন। তিনি বলেন, ২০১৩ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭টি জলাশয়ের খনন কাজ করা হচ্ছিল, এই সাতটি জলাশয় খনন করার জন্য ছিল ৭টি কমিটি। আর ৭টি কমিটির একটি কেন্দ্রীয় কমিটি ছিল। কেন্দ্রীয় কমিটিতে একটি প্রস্তাব আনা হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নান্দনিক সৌন্দর্য বৃদ্দি করার জন্য একটি পদ্ম ফোয়ারা নির্মাণ করা যায় কিনা। এই প্রস্তাবটি কমিটিতে পাশ হয়।
তিনি আরো বলেন, যেহেতু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শাপলা ফুল আছে, এই জন্য আমরা একটি পদ্ম ফোয়ার নির্মাণ করা এবং সেখানে পদ্ম ফুল লাগানোর কথা ভাবি। উপাচার্যের বাসভবন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশমুখের কথা চিন্তা করে চৌরঙ্গী এলাকায় এটা নির্মাণের কথা ভাবি। তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ও সাবেক নির্মাণ কমিটির সভাপতি ও নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক আফসার আহমদ এর সম্মতিতে বিলটি পাশ হয়।
পদ্ম ফুল লাগানের জন্য জলাশয়টিতে ৩০টি কূপ খনন করা হয়েছিল, প্রত্যেকটি কূপে প্রথমে পঁচামাটি তারপর পঁচনশীল শ্যাওলা এবং সবচেয়ে উপরে আবার পঁচা কাদার প্রলেপ দেওয়া হয়েছিল যাতে পদ্ম গাছ খুব সহজে জন্মাতে পারে।
৩০টি কূপের জন্য গোলাপী পদ্মের ৫টি গাছ বরিশাল থেকে এনেছিলেন পদ্ম ফোয়ারার ভাস্কর হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহদী আর বাকি ২৫টি গাছ গাজীপুরের কালীগঞ্জ থেকে এনেছিলেন এস্টেট অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আজীম উদ্দিন।
চারদিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝখানের জলাশয়ে এত বেশি পদ্ম ফুল দেখতে ভিড় জমাচ্ছে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা।
এ সম্পকে জানতে চাইলে জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র শফিকুল ইসলাম বলেন, এ পদ্ম ফুল আমাদের ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে, অনেক দিন পরে হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়ে পদ্ম ফুল ফুটতে দেখে খুব ভালো লাগছে।
এমএএস/আরআই