রোহিঙ্গাদের জন্য আরও ৩০ মিলিয়ন পাউন্ড দেবে যুক্তরাজ্য
নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের সহায়তায় আরও ৩০ মিলিয়ন পাউন্ড অর্থ বাংলাদেশকে দেবে যুক্তরাজ্য।
যুক্তরাজ্যের বৈদেশিক ও কমনওয়েথ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ডস্ ও আন্তর্জাতিক সহায়তা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এলিস্টার বার্টের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার সঙ্গে বৈঠকে এ সহায়তার আশ্বাস দেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘এবার প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা দেশে এসেছে, রেজিস্টার্ড ৩৩ থেকে ৩৪ হাজার, আনরেজিস্টার্ড তিন থেকে সাড়ে তিন লাখসহ সব মিলিয়ে বাংলাদেশে ১০ লাখের কাছাকাছি মিয়ানমারের নাগরিক রয়েছে। ১৯৯৮ সাল থেকে আজ পর্যন্ত তারা বসবাস করছে। অত্যন্ত ধৈর্য ও সাহসিকতার সঙ্গে বাংলাদেশে (এ পরিস্থিতি) মোকাবেলা করছে।’
তিনি বলেন, আজকে এটা শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বের সমস্যায় পরিণত হয়েছে। বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রী সফল হয়েছেন। সারাবিশ্ব এখন বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আমরা সেজন্য বিশ্ববাসীকে অভিনন্দন জানাই। এ সমস্যাটা মিয়ানমারের, এ সমস্যা তাকেই দূর করতে হবে। তাদের নাগরিকদের সসম্মানে নাগরিকত্ব দিয়ে দেশে ফিরিয়ে নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এটা আমরা ব্রিটিশ প্রতিনিধি দলকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। তারা আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন। তাদের কষ্ট আমাদের সঙ্গে শেয়ার করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তারা ইতোমধ্যে ৫ দশমিক ৯ মিলিয়ন পাউন্ড সহযোগিতা করেছে। তারা আরও ৩০ মিলিয়ন পাউন্ড সাহায্য দেবেন। সহায়তা তারা অব্যাহত রাখবেন।
মায়া বলেন, কূটনৈতিক পর্যায়ে তারা আন্তরিক, (মিয়ানমারের উপর) চাপ সৃষ্টি করার জন্য যতটুকু করা দরকার সেটা তারা করবেন। জাতিসংঘে তাদের বলিষ্ঠ ভূমিকা অব্যাহত রাখবেন। রোহিঙ্গাদের খাওয়া, বাঁচা ও দেশে ফিরিয়ে নিতে যা যা করা দরকার তাও করবেন।
রাহিঙ্গাদের স্থায়ী আবাস হবে নোয়াখালীর ভাসান চরে
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী বলেন, আমরা বলেছি রোহিঙ্গাদের আমরা দুইভাগে রাখতে চাই। তাৎক্ষণিকভাবে উখিয়া, কক্সবাজার ও বান্দরবানে যারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, তাদের একটি জায়গায় আনা দরকার। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাসহ সার্বিক দিক বিবেচনা করে আমরা কুতুপালংয়ে একটি জায়গা ঠিক করেছি। সেখানে আপাতত তাদের রাখার উপযুক্ত জায়গা।
তিনি বলেন, জায়াগাটা যখন চিহ্নিত করেছিলাম তখন রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ছিল ২ থেকে আড়াই লাখ। আজকে প্রায় ৫ লাখ হয়ে গেছে। এখন কুতুপালংয়ে ২ হাজার একর জায়গায় তাদের রাখাটা সমীচীন হবে বলে মনে করি না। সেখানে আমাদের সাড়ে ৫ হাজার একর জায়গা রয়েছে। বলেছি অস্থায়ীভাবে আমরা তাদের আরও জায়গা দিতে পারব। আমাদের জায়গার অভাব নেই।
এ সমস্যা যদি দীর্ঘায়িত হয় তবে আরেকটু ভালো জায়গায় আরেকটু খোলামেলা জায়গায় তাদের (রোহিঙ্গা) রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। সেই জায়গাটা প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে চিহ্নিত করেছেন। জায়গাটা হলো নোয়াখালীর ভাসান চর, আগে নাম ছিল ঠেংগার চর। সেখানে জমি ১০ থেকে ১২ হাজার একর। ইতোমধ্যে সেই জায়গায় নৌবাহিনী কাজ শুরু করেছে।
এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. শাহ কামাল বলেন, জায়গাটা বসবাসের উপযুক্ত করতেও ৪/৫ বছর লেগে যাবে।
মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া আরও বলেন, আমরা তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছে, যদি সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে তাদের ওই (ভাসান চর) জায়গায় নিয়ে যাব। কারণ কক্সবাজার হলো বিশ্বের পর্যটনের চারণভূমি, ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ বিশ্বের সর্ববৃহ সমুদ্র সৈকত। এটা রক্ষা করতে হবে। ওখানকার পরিবেশ রক্ষা করতে হলে আমাদের রাঙ্গামাটি, বান্দরবানের পরিবেশ কিন্তু আমাদের রক্ষা করতে হবে।
কুতুপালংয়ে অস্থায়ী ক্যাম্পের নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আশা করি দু’চার দিনের মধ্যে বৃষ্টি থেমে গেলে পুরোদমে কাজ হবে। অস্থায়ীভাবে রাখার ব্যবস্থা করতে পারব।’
আরএমএম/এমএমজেড/ওআর/আইআই/জেআইএম