যানবাহনে ‘রোহিঙ্গা খোঁজ’ : বাসের টিকিটে পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক

আদনান রহমান
আদনান রহমান আদনান রহমান , নিজস্ব প্রতিবেদক উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে
প্রকাশিত: ০৫:৩৫ এএম, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭
ছবি : বিপ্লব দিক্ষিৎ

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়া রোধে বিভিন্ন ব্যবস্থাগ্রহণ করেছে সরকার। তারই অংশ হিসেবে পরিচয়পত্র ছাড়া বাসের টিকিট বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে কক্সবাজার জেলা পুলিশ। কক্সবাজারের সকল বাস কাউন্টারে এ সংক্রান্ত লিখিত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বাস কাউন্টারের বাইরেও ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে এ সংক্রান্ত ব্যানার।

সরেজমিন দেখা গেছে, কক্সবাজার জেলা পুলিশের নির্দেশ মোতাবেক কাজ করছে কক্সবাজার ও টেকনাফের (যে সব পয়েন্টে রোহিঙ্গারা অবস্থান করছে) বাস কাউন্টারগুলোতে দায়িত্বরত মাস্টাররা। তারা পরিচয়পত্র শনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত বাসের টিকিট বিক্রি করছেন না।

কক্সবাজারের উখিয়ার এস আলম বাস কাউন্টারের ম্যানেজার বলেন, শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) থেকে আমারা এই নির্দেশনা পেয়েছি। কাউকে জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া টিকিট দেয়া হচ্ছে না। তবে কারও কাছে যদি পরিচয়পত্র না থাকে তাহলে সে ছবিসহ সনদপত্র দিয়ে টিকিট কিনতে পারবে।

একই চিত্র কক্সবাজারের রয়েল এবং সেন্টমার্টিন পরিবহনের কাউন্টারেও। পরিচয় শনাক্ত না করে দেয়া হচ্ছে না কোন টিকিট।

bus

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনে গত ২৬ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে রোহিঙ্গারা। বান্দরবান ও টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে নির্দিষ্ট ক্যাম্পে। তবে এর ফাঁকে অনেকে ক্যাম্পে না গিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে পড়ছে।

গত ১০ দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে পালানোর সময় কক্সবাজার শহর থেকে ২১০ জন, কক্সবাজার লিংক রোড থেকে ৭০ জন, মানিকঞ্জের সিঙ্গাইর থেকে ২০, সাতক্ষীরা থেকে ১৩, টাঙ্গাইলে ৩, সিলেট থেকে ১ জন এবং টেকনাফ থেকে ইয়াবাসহ ৫ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। পরে তাদেরকে আবরও ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলো ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি গ্রামের গলিতে গলিতে জেলা পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। মূল সড়কে বিজিবির সদস্যরা দায়িত্বপালন করছেন। কক্সবাজার শহরগামী প্রতিটি যানবাহন তল্লাশি এবং সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদসহ পরিচয়পত্র যাচাই-বাছাই করে যেতে দিচ্ছেন।

টেকনাফের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতেও এমন চিত্র। সরজমিনে দেখা যায়, প্রতিটি বাস থামিয়ে বিজিবি সদস্যরা যাত্রী এবং তাদের ব্যাগ তল্লাশি চালাচ্ছেন। একই সঙ্গে পরিচয়পত্র যাচাই করছেন।

bus

বান্দরবনের নাইক্ষ্যছড়িতেও সীমান্ত থেকে মেইল রোডে যাতায়াতের সবগুলো পথে ছোট ছোট স্পিডব্রেকার বসিয়ে তল্লাশি করছেন বিজিবি সদস্যরা। সন্দেহ হলেই পরিচয়পত্র যাচাই-বাছাই করছেন।

কক্সবাজারের জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জাগো নিউজকে বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ ও এক জায়গায় (নির্দিষ্ট ক্যাম্পে) রাখতে সরকার শেড তৈরি করেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও সেই মোতাবেক নজরদারি করছে।

উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পুলিশ ও রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশ সদস্যসহ বহু রোহিঙ্গা হতাহত হন। ওই ঘটনার পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ‘শুদ্ধি অভিযান’র নামে রাখাইন রাজ্যে নিরীহ মানুষের ওপর বর্বর নির্যাতন শুরু করে। এরপর থেকেই জীবন বাঁচিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে রোহিঙ্গারা।

এআর/আরএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।