রোহিঙ্গা শিশুদের মাঝে আলো ছড়াচ্ছেন বাংলাদেশি রাহী
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা থেকে কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের দূরত্ব ছয় কিলোমিটার। শরণার্থী ক্যাম্পের প্রবেশপথ থেকে ডি-থ্রি ব্লকের দূরত্ব আরও দুই কিলোমিটার। এরপর পাহাড়ের উঁচু সড়ক, হেঁটে চূড়ায় পৌঁছাতে হয়। এসব সড়ক পাড়ি দিয়েই প্রতিদিন রোহিঙ্গা শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াতে যান বাংলাদেশি এক নারী। তার নাম রাহাতিল আশীকিন রাহী। রোহিঙ্গা শিশুদের নিয়েই কেটে যায় তার সারাদিন।
আশীকিন রাহীর বাড়ি উখিয়ায়। তিনি উখিয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে বিএসএস পরীক্ষা দিয়েছেন, এখন ফল প্রত্যাশী।
প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘সানরাইজ চাইল্ড লার্নিং সেন্টার-১’ এ শিক্ষা দেন তিনি। পড়ান অঙ্ক আর ইংরেজি। ইউনিসেফ-মুক্তি যৌথভাবে এই লার্নিং সেন্টারটি পরিচালনা করছে।
রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা দিচ্ছেন বাংলাদেশি শিক্ষিকা রাহী।
এই ‘লার্নিং সেন্টার’-এ গিয়ে দেখা যায়, একটি বেড়ার ঘর, উপরে টিনের চাল। ভেতরে একটি ব্ল্যাকবোর্ড, টেবিল, টেবিলের ওপর একটি পানিভর্তি জগ আর গ্লাস। ঘরের চারপাশে বিভিন্ন পোস্টার লাগানো। পোস্টারগুলোতে বার্মা বর্ণমালা, নামতা, আর পশুপাখির ছবি দিয়ে বার্মিজ নাম লেখা আছে।
জানা গেল, সেন্টারে দুই শিফটে মোট শিক্ষার্থী ৭০ জন। প্রতি শিফটে ৩৫ শিশু রয়েছে। ৩৫ জন প্রি-প্রাইমারিতে আর বাকিদের প্রাইমারি শিক্ষা দেয়া হয়।
সেন্টারের পাশ দিয়ে যেতেই শোনা যাচ্ছিল শিক্ষার্থীদের পড়ার আওয়াজ। ভেতরে ঢুকতেই দেখা মেলল শিক্ষার্থীদের ওয়ান, টু, থ্রি-ফোর শেখাচ্ছেন রাহী নামের ওই শিক্ষিকা।
বোর্ডে নিজে লিখছেন, রোহিঙ্গা শিশুদের দিয়ে লেখাচ্ছেন। শিশুদের কথা শুনে মনে হচ্ছিল শিক্ষিকার সঙ্গে সম্পর্কটা খুব বন্ধুত্বপূর্ণ। তাদের পড়ায় কিছুটা ব্যাঘাত ঘটিয়ে শিক্ষিকা রাহীর সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের ।
কথা বলে জানা গেল তিনি বিএসএস পরীক্ষার ফলপ্রার্থী। এতদূরে এসে শিক্ষা দিচ্ছেন? কারণ জানতে চাইলে রাহী বললেন, ‘শিশুদের পড়াশোনার খুবই আগ্রহ। তাদের দেখে আমারও আগ্রহ অনেক বেড়ে যায়। তা না হলে মাত্র আট হাজার টাকায় এতদূরে এসে পড়াতাম না।’
লার্নিং সেন্টারে এজাজ রহমান নামে এক রোহিঙ্গা শিক্ষকেরও দেখা মিলল। তিনি একজন পুরাতন রোহিঙ্গা। দুইবছর আগে বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনি শিক্ষার্থীদের বার্মিজ ভাষা শিক্ষা দেন।
এজাজ রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ওদের পড়ার আগ্রহ খুব বেশি, তাই পড়াতেও ভালো লাগে আমাদের। এদের নিয়েই থাকতে চাই।
গত ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনের ঘটনায় প্রায় চার লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশই শিশু।
রোহিঙ্গা শিশুদের জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে আরেকটি স্কুল রয়েছে এই ক্যাম্পে। এটির নাম সিগন্যাল প্রাইমারি স্কুল। তবে নতুন রোহিঙ্গারা এই স্কুলটিতে আশ্রয় নেয়ায় ক্লাস বন্ধ রয়েছে।
রোহিঙ্গা শিশুদের মাঝে রোহিঙ্গা শিক্ষক এজাজ রহমান।
এই স্কুলের শিক্ষিকা নুরজাহান জাগো নিউজকে বলেন, ক্লাসরুমগুলোর মধ্যে নতুন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আশ্রয় নিয়েছে। শুক্রবার অনেককে এখান থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বাকিদেরও দ্রুত সরিয়ে নেয়া হবে। এরপর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেই স্কুলে আবারও ক্লাস শুরু হবে।
এআর/জেডএ/এমএস