আহত রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই গুলিবিদ্ধ, এইডস আক্রান্ত ২

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৩৮ এএম, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৩৬৪ জনকে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়েছে। আহত এসব রোহিঙ্গার বেশির ভাগই বুলেট ও বেয়নেটের মাধ্যমে আঘাতপ্রাপ্ত। এ ছাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাঝে দুজন এইডস আক্রান্ত রোগী রয়েছেন।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা সহায়তা দেয়া সংক্রান্ত বৃহস্পতিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন এসব তথ্য জানান। এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম উপস্থিত ছিলেন।

এনায়েত হোসেন বলেন, ‘৩ হাজার ৫২০ শরণার্থী রোহিঙ্গাকে ডায়রিয়ার চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ধারণা করছি, তারা আসার সময় খালের পানি পান করায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।’

এ ছাড়া বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ৭ হাজার ৯৬৯ রোহিঙ্গাকে শ্বাসনালীর সংক্রমণ এবং ২ হাজার ৩৩৫ জনকে চর্ম রোগের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত মহাপরিচালক।

নিরাপদ পানি নিশ্চিতের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আশা করছি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে কোন ধরনের রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়বে না।’

শিশু খাদ্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শিশুদের যে খাবার দরকার সেটাই দেয়া হচ্ছে। ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশন আমাদের সঙ্গে কাজ করছে।’

চল্লিশটির উপর সরকারি-বেসরকারি সংস্থা প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষভাবে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য কার্যক্রমে জড়িত জানিয়ে এনায়েত হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সদর হাসপাতালসহ উখিয়া টেকনাফ এবং নাইক্ষ্যংছড়ির সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন উপকেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছে। কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম থেকে বিভাগ থেকে চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মীদের সাময়িকভাবে নিয়োজিত করা হয়েছে। ৬০ জন চিকিৎসককে প্রেষণে নিয়োজিত করা হয়েছে।’

নবনির্মিত আশ্রয় কেন্দ্রে ৫০ হাজার লোকের সুবিধা সম্বলিত ১২টি স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আপাতত দেড় লাখ শিশুকে টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩৪ হাজার ১৯৫ শিশুকে এমআর (হাম-রুবেলা), ১৮ হাজার ৪১০ শিশুকে বিওভিপি ও ১২ হাজার ৬৭৫ শিশুকে ভিটামিন-এ টিকা দেয়া হয়েছে। একজন হামের রোগী ছাড়া কোন টিকা জনিত রোগ পাওয়া যায়নি।’

বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত সাধারণ ডেলিভারির মাধ্যমে বাংলাদেশে দুশ’র মতো রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম হয়েছে জানিয়ে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. কাজী মোস্তফা সারোয়ার বলেন, ‘জরুরি প্রসূতি সেবার প্রয়োজন হলে অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে কক্সবাজার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র এবং কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রেফারের ব্যবস্থা আছে। পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে আরও ১২ জন মিডওয়াইফ সংযু্ক্তি দিতে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরে পত্র দেয়া হয়েছে।’

rohingya

তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা ও রোগ ব্যাধি চিকিৎসার জন্য পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মোট ১০টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। মেডিকেল টিমগুলো ৮/১০ প্রকার ওষুধ এবং তিন ধরনের অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী (কনডম, খাবার বড়ি, তিনমাস মেয়াদী ইনজেকশন) বিতরণ করছে।’
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক কোনো জ্ঞান নেই জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, ‘এ বিষয়ে তারা সম্পূর্ণ অসচেতন বিধায় শরণার্থীদের ক্যাম্পগুলোতে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সম্পর্কিত জ্ঞান তথা কাউন্সেলিংয়ের জন্য ৮৬ জন পেইড ভলান্টিয়ার নিয়োগ দেয়া হয়েছে।’

টেকনাফ ও উখিয়ায় ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রকে অস্থায়ীভাবে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। 

তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমার সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। নির্যাতিত, নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে হবে। অবিলম্বে এদের ফেরত নিতে হবে। কোনো কুযুক্তি গ্রহণ করা হবে না। রোহিঙ্গারা কেন বাংলাদেশে এসেছেন তা তিনি জানেন না- সু চির এমন বক্তব্যে সমগ্র বিশ্ব বিস্মিত হয়েছে। এ ধরনের মিথ্যাচার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

জাতিগত নিপীড়নে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের কয়েক লাখ রোহিঙ্গা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে বসবাস করছেন। সম্প্রতি মিয়ানমারের সীমান্তে পুলিশ ও সেনাবহিনীর চেক পোস্টে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ২৫ আগস্ট থেকে নতুন করে রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর অভিযান চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। তখন থেকে রোহিঙ্গারা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় ২৫ আগস্ট থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছেন।

তবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া অন্য এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, গত ২৫ দিনে মিয়ানমার থেকে নতুন করে ৪ লাখ ২৪ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। 

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, স্বাধীনতা চিকিত্সক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান উপস্থিত ছিলেন।

 

আরএমএম/আরএস/জেএইচ/আইআই/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।