জ্বলছে রোহিঙ্গা পারাপারের নৌকাও

সায়েম সাবু
সায়েম সাবু সায়েম সাবু , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক কক্সবাজার থেকে
প্রকাশিত: ০৬:৪৭ পিএম, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭
ছবি : মাহবুব আলম

ওপারে বাড়ি জ্বলছে অার এপারে জ্বলছে পারাপারের নৌকা। এমন জ্বলায় মনও যে পুড়ছে, তা রোহিঙ্গাদের চোখে দিকে তাকালেই বোঝা যাচ্ছে। হিংসার অাগুনে জ্বলে সব হারিয়ে নিঃস্ব এসব অসহায় মানুষ মনের ক্ষোভ অার দ্রোহও প্রকাশ করতে পারছেন না।

মঙ্গলবার দিনগত রাতে বঙ্গোপসাগরে রোহিঙ্গা পারাপারের দুটি নৌকা পুড়িয়ে দেয় কে কারা? বিশাল সাগরের বুকে জ্বলে-পুড়ে নৌকা দুটি ছারখার হতে থাকা দেখে মনে হচ্ছিল পুড়ছে মানবতাও।

টেকনাফ শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে শাহপুরী দ্বীপ। টেকনাফ থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশাযোগে ২৫ মিনিট চলার পর পায়ে হাঁটার কাদামাটির রাস্তা। দেড় কিলোমিটার হেঁটে নৌকায় ওঠতে হয়। এরপর অারও অাধা কিলোমিটার হেঁটে শাহপুরীদ্বীপের বাজার। দ্বীপের দক্ষিণপাড়ে সাগর ঘেঁষে জেটি।
Rohigga
ঘড়ির কাঁটা তখন রাত দশটা পার হয়েছে। ঘুটঘুটে অন্ধকার। অন্ধকার সাগরের বুক থেকে গর্জন ভেসে অাসছে। তখন জোয়ারের পালা। সাগরের গর্জনের সঙ্গে দাউদাউ করে জ্বলে ওঠল নৌকা দুটিও।

খানিক অাগে এ দুটি নৌকা করেই রোহিঙ্গারা এপারে অাসে। রোহিঙ্গারা নামার পরমুহূর্তেই অাগুন দেয়া হয় নৌকা দুটোয়। নৌকার চাঁদা নিয়ে দালাল অার বিশেষ মহলের সঙ্গে ঝামেলা সৃষ্টি হওয়ার কারণেই অাগুন দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নৌকার এক মাঝি বলেন, বিপদে পড়ে রোহিঙ্গারা এপারে অাসছে। অার অামরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগরে নৌকা বেয়ে তাদের পার করে অানছি। রোহিঙ্গা পারাপার করতে গিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে বিভিন্ন মহলকে। চাঁদার টাকা নিয়ে সামান্য ঝামেলা হলেই ডিজেল দিয়ে নৌকা জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন সাগর পাড়ে লাখো টাকার নৌকা পুড়ে ছাই করে দিচ্ছে।
Rohigga
তবে পাশে থাকা অারেকজন বলেন, মূলত রোহিঙ্গা পারাপারে নিরুৎসাহিত করার জন্যই রাতের বেলায় নৌকায় অাগুন দেয়া হচ্ছে। একটি নৌকায় অাগুন দিয়ে শত জনকে সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে।

নৌকা থেকে কোনোমতে নেমে জেটিতে দাঁড়িয়ে জ্বলতে থাকা নৌকাটি দেখছিল রোহিঙ্গা জামিতন নেছা। নির্বাক হয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন। বলেন, পোড়া কলাপ। গতকাল রাতে এই নৌকাটিতে ওঠেছি। রাত অার সারাদিন সাগরে ভেসে সবে পাড়ে এলাম। নামতেই নৌকাটিতে অাগুন দেয়া হলো। বড় কষ্ট হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের পুলিশের ওপর রোহিঙ্গাদের চালানো হামলার প্রতিক্রিয়ায় রাখাইনে সেনা অভিযান শুরু হয়। যে কারণে রোহিঙ্গা মুসলমান মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হচ্ছে। বাংলাদেশে শরণার্থীর স্রোত এখনো অব্যাহত রয়েছে। বহু রোহিঙ্গা নিহত হচ্ছেন এবং সীমান্তের দুপাশেই তৈরি হয়েছে এক মানবিক পরিস্থিতি।

এএসএস/আরএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।