রমজানে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশের বিশেষ পরিকল্পনা
আসন্ন পবিত্র রমজান মাস ও ঈদ-উল-ফিতর নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন পালন করতে পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের উদ্বেগ দূর করতে নিরাপত্তা ও অপরাধ দমনে এই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া রমজানে ও ঈদ-উল-ফিতরে মাদক ও ফরমালিনকেও জিরো টলারেন্সে নিয়ে আসতে চায় পুলিশ।
জানা গেছে, এবার রমজানের আইন-শৃঙ্খলার স্বার্থে ৮ জুলাই থেকে ঈদ-উল-ফিতরের পর তিন দিন পর্যন্ত পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এবং প্রতিটি জেলা ইউনিটে কন্ট্রোল রুম চালু থাকবে। পুলিশ সদরদফতর সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশ সদর দফতরের সম্মেলন কক্ষে রমজান ও ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত এক সভায় এ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এ শহীদুল হক। ওই সভায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। বিশেষ করে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পবিত্র রমজান ও ঈদ উদযাপন নির্বিঘ্ন করার জন্যও তিনি পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।
পুলিশ সদরদফতর সূত্রে জানা গেছে, মাদকের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। এ জন্য রমজানেই শুরু হতে যাচ্ছে মাদক বিরোধী প্রচার প্রচারণা। মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ প্রদর্শন করে উদ্ধার অভিযান জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন আইজি।
ফরমালিন ও রাসায়নিক উপাদান মিশ্রিত ফল ও খাদ্যদ্রব্য বিরোধী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে যাচ্ছে পুলিশ। দায়িত্বশীলতার সঙ্গে এ অভিযান চলবে। ফরমালিন বিরোধী অভিযানে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে যেন কোনো পক্ষ প্রশ্ন তুলতে না পারে সে বিষয়টিকেও গুরুত্বের সাথে দেখছে পুলিশ।
সম্প্রতি পুলিশ সদরদফতর কমিউনিটি পুলিশিং এর মাধ্যমে জনগণের সাথে পুলিশের সুসম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। জনগণকে সাথে নিয়ে অপরাধ দমনে কাজ করার জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশের আইজি এ কে এম শহীদুল হক।
সভার শুরুতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ডিআইজি (অপারেশন) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে গৃহীত সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তুলে ধরেন। রমজানে সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা, ট্রেন, বাস ও লঞ্চের নিরাপদ চলাচল ও যাত্রীদের নিরাপত্তা, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা, ঈদ জামায়াতের নিরাপত্তা এবং জাল টাকার অপব্যবহার রোধ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।
সভায় ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশে চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ রোধে বিশেষ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। রেলওয়ে স্টেশন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে পকেটমার ও অজ্ঞানপার্টির তৎপরতা প্রতিরোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা আরো বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা এ কে এম কামরুল আহছান জানান, ঢাকা মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের বড় বড় শহরে বিপণী বিতান ও শপিংমল যথাসম্ভব সিসিটিভির আওতায় এনে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
জনসাধারণের কেনা-কাটার সুবিধার্থে এবং তারাবির নামাজের সময় অপরাধমূলক তৎপরতা প্রতিরোধে গভীর রাত পর্যন্ত পর্যাপ্ত নৈশ টহলের ব্যবস্থা করা হবে। ব্যাংক ও অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠানে আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে পুলিশ জনসাধারণকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে।
মহাসড়কে সুষ্ঠুভাবে যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া পুলিশ কোন যানবাহন তল্লাশি করবে না। মহাসড়কে ডাকাতি প্রতিরোধ এবং যানজট নিরসনে হাইওয়ে এবং জেলা পুলিশ বিশেষ তৎপর থেকে দায়িত্ব পালন করবে বলেও জানান তিনি।
এছাড়া ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপদ যাতায়াতের জন্য রেলওয়ে স্টেশন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে টিকেট কালোবাজারী প্রতিরোধে পুলিশ, মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এবং কমিউনিটি পুলিশের সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সভায় পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপ্যাল নাঈম আহমেদ, অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মো. মোখলেসুর রহমান, সিআইডির অতিরিক্ত আইজিপি জনাব শেখ হিমায়েত হোসেন, অতিরিক্ত আইজিপি মো. মইনুর রহমান চৌধুরী, পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর ফাতেমা বেগম, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া, সকল পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ, হাইওয়ে, রেলওয়ে ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশসহ অন্যান্য ইউনিটের ডিআইজিবৃন্দ, পুলিশ সুপারগণ, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
জেইউ/আরএস/পিআর