ওপারে ঘরহারা, এপারে স্বামীহারা
কৈশোরের ছাপ এখনও শরীরে। শ্যাম বর্ণের হলেও চোখ-মুখ শুভ্রতায় ভরা। মা হওয়ার বয়স হয়নি, তা বলা যেতেই পারে। তবুও কোলজুড়ে ফুটফুটে চাঁদের আলো। ২০ দিন আগে মা হয়েছেন মিনুয়ারা।
সন্তান জন্ম নিয়ে যে ঘর আলো ছড়িয়েছিল, সে ঘর পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে মিয়ানমারের সেনা ও বৌদ্ধরা। বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ি জীবন বাঁচাতে কোন দিকে গেছে তার সন্ধান জানেন না।
মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশে টংবাজার গ্রামে স্বামী ছায়েদুলের সংসারে এসে সুখের শেষ ছিল না রোহিঙ্গা এই নারীর। গৃহস্থ সংসারে এসে মিনুয়ারা জীবন সংসার সাজিয়েছিলেন। আর এ কারণেই হয়তো সংসার বাগানে সন্তানের জন্ম দেয়া। কিন্তু সাজানো বাগান তছনছ করে দিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আর বৌদ্ধরা। সব হারিয়ে বাংলাদেশে পাড়ি জমাতে এসেছিলেন স্বামীর হাত ধরে।
কিন্তু এখানেও বিধি বাম। কোলের সন্তান নিয়ে সারারাত নাফ নদীতে নৌকায় ভেসে সকালে যখন বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেছেন, তখনই স্বামীকে হারিয়েছেন। হাজারো মানুষের ভিড়ে স্বামী কোথায় গেলেন, চারদিনেও তার সন্ধান পাননি। অন্য রোহিঙ্গাদের সঙ্গে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে এসে আশ্রয় নেন তিনি। অন্যের তাঁবুতে আশ্রয় নিয়ে রক্ষা পেয়েছেন।
জীবনের আনন্দ ভুলে গেছেন মিনুয়ারা। দুঃখ কথা শুনিয়ে বলেন, ওপারে ঘর হারালাম আর এপারে এসে স্বামী হারালাম। স্বামীর হাত ছেড়ে আমিই দৌড় দিয়েছিলাম। চারদিনেও খুঁজে পাচ্ছি না স্বামীকে। লাখ লাখ মানুষের মাঝে স্বামীকে খুঁজতে গিয়ে ক্লান্ত। আশ্রয় নিয়েছি আরেক ঘরহারা রোহিঙ্গার তাঁবুতে। কি করব, কি খাব কিছুই বুঝতে পারছি না।
এএসএস/এআরএস/জেআইএম