নির্ধারিত সময় পার, আত্মসমর্পণ করেননি ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:২৯ পিএম, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

নির্ধারিত সময় পার হলেও এখনও আত্মসমর্পণ করেননি ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহ ও তার সহযোগীরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে তাদের আত্মসমর্পণ করার কথা ছিল। সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছিলেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের প্রধান মুফতি মাহমুদ খান।

এ প্রসঙ্গে মুফতি মাহমুদ জানান, তারা এখনও আত্মসমর্পণ করেননি। আমরা অপেক্ষায় আছি। আত্মসমর্পণ করলে গণমাধ্যমকে জানানো হবে। টেলিভিশনের ক্যামেরাম্যানদের ফুটেজ নেয়ার সুযোগ দেয়া হবে।

এর আগে ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহর আত্মসমর্পণের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন- র‌্যাব। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ওই বাড়িটি থেকে সাংবাদিকদের ১০০ গজ দূরে সরিয়ে দেয়া হয়। উৎসুক জনতাকে আরও দূরে অর্থাৎ দেড় থেকে ২০০ গজ দূরে অবস্থান করতে বাধ্য করা হয়।

rab

ঘটনাস্থলে উপস্থিত জাগো নিউজ’র প্রতিবেদক জানান, র‌্যাব সদস্যরা বাড়িটির চারপাশে অবস্থান নিয়েছেন। আশপাশের বাড়ির ছাদেও তাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ‘জঙ্গি আস্তানা’ সন্দেহে ঘিরে রাখা বাড়িটির সামনে লাইট লাগানো হয়েছে। যদিও এর আগে পুরো এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়।

রাত ৯টা ১৩ মিনিটে র‌্যাবের বোমা নিষ্ক্রিয়করণের একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।

এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের প্রধান মুফতি মাহমুদ খান ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহ আত্মসমর্পণ করতে রাজি হয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহ তার সহযোগীদের নিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে রাজি হয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, তারা ধ্বংসাত্মক কিছু করতে পারে কি না- সেই বিষয়ে র‌্যাবের কড়া নজরদারি রয়েছে। র‌্যাবও সতর্কাবস্থায় আছে।

rab

প্রসঙ্গত, জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে সোমবার রাত সাড়ে ১২টা থেকে ঘিরে ফেলা হয় রাজধানীর মিরপুরের মাজার রোডে বাঁধন সড়কের বর্ধনবাড়ি এলাকার ভাঙ্গাওয়াল গলির ছয়তলা বিশিষ্ট একটি বাড়ি।

র‌্যাব জানায়, বাড়িটিতে দুই স্ত্রী, সন্তান ও সহযোগীসহ দুর্ধর্ষ জঙ্গি আব্দুল্লাহ অবস্থান করছেন। সেখানে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকও মজুদ করে রাখা হয়েছে।

পরবর্তীতে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানায় র‌্যাব। এর পরিপ্রেক্ষিতে ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহর বোন সোমবার গভীর রাতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তার মাধ্যমে আব্দুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়। বাড়ি ঘেরাও করার দীর্ঘ ১৮ ঘণ্টা পর র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের প্রধান মুফতি মাহমুদ খান ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহ তার সহযোগীদের নিয়ে আত্মসমর্পণ করতে রাজি হয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, সার্বিক নিরাপত্তায় ইতোমধ্যে আমরা বাড়িটির আশপাশে বসবাসকারী সবাইকে সরিয়ে নিয়েছি। ষষ্ঠ তলার ওই বাড়িটির পঞ্চম তলায় অবস্থান নেয়া ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আমাদের ১০ মিনিট আগে কথা হয়েছে। তারা আমাদের ইশারায় জানিয়েছেন, তারা আত্মসমর্পণ করবেন।

rab

র‌্যাবের দাবি, ওই ‘আস্তানায়’ দুর্ধর্ষ জঙ্গি আব্দুল্লাহ, তার দুই সহযোগী, দুই স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ মোট সাতজন অবস্থান করছেন।

এর আগে বাড়িটির গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। এছাড়া টেলিফোন, ডিস ও ইন্টারনেট সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা হয়। মানসিকভাবে চাপে ফেলতে এবং তারা (জঙ্গিরা) যাতে বাধ্য হয় আত্মসমর্পণ করতে- এ কারণে এসব করা হয়েছে বলেও র্যা বের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

এরও আগে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ বলেন, আব্দুল্লাহ দুর্ধর্ষ জঙ্গি। তার সঙ্গে আমাদের রাত ৪টা থেকে যোগাযোগ হচ্ছে। তাকে আমরা বিভিন্নভাবে আত্মসমর্পণের জন্য আহ্বান জানাই। তিনি আহ্বানে সাড়া দিয়ে কিছুটা সময় চেয়েছেন।

বেনজীর বলেন, আমরা সর্বোচ্চ সহিষ্ণুতার পরিচয় দিচ্ছি। এরপরও তিনি যদি আত্মসমর্পণ না করেন এবং র‌্যাবের ওপর হামলার চেষ্টা করেন তাহলে আমরা আইনি পদ্ধতিতে অভিযানে যাব।

বাড়িটিতে মোট ২৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে। তবে এরই মধ্যে নারী ও শিশুসহ সব বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

ভেতরে কী পরিমাণ বিস্ফোরক রয়েছে জানতে চাইলে র‌্যাব প্রধান বলেন, আমাদের তথ্যমতে ভেতরে ৫০টিরও বেশি দেশীয় তৈরি ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি বোমা) রয়েছে। এছাড়া অ্যাসিডসহ বিস্ফোরক তৈরির বিভিন্ন দ্রব্যাদি তার কাছে মজুদ আছে। ছোট একটা পিস্তল আছে বলেও আমরা ধারণা করছি।

জঙ্গি আব্দুল্লাহর পরিচয় জানতে চাইলে র‌্যাবের ডিজি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি আব্দুল্লাহ ১৫ বছর ধরে এই ভবনের পঞ্চম তলায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। তিনি কবুতর পালন এবং আইপিএসের ব্যবসার আড়ালে দুর্ধর্ষ জঙ্গি হয়ে উঠেছেন।

১০-১৫ মিনিটের মধ্যে অপারেশন শেষ করার সক্ষমতা র‌্যাবের রয়েছে। কিন্তু অভিযানে দুই নিষ্পাপ শিশুর জীবন বিপন্ন হতে পারে, তাই আমরা সর্বোচ্চ সহিষ্ণুতার পরিচয় দিচ্ছি বলে জানান বেনজীর আহমেদ।

এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইলের একটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। ওই আস্তানা থেকে জেএমবির দুই জঙ্গিকে আটক করা হয়। পরে তাদের তথ্য অনুযায়ী রাত ১টায় অভিযান চালিয়ে মাজার রোডের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের দক্ষিণে বর্ধনবাড়ি এলাকার ভাঙ্গাওয়াল গলির ২/৩/বি নম্বর বাড়ির পঞ্চম তলায় জঙ্গি আস্তানাটি খুঁজে পায় র‌্যাব। আস্তানাটি রাতভর ঘিরে রাখা হয়। রাতে ভেতর থেকে পরপর কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়।

এআর/জেইউ/এমএআর/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।