ক্যামেরা দেখলেই ৫ লাখের গরু ১০ লাখ

আদনান রহমান
আদনান রহমান আদনান রহমান , নিজস্ব প্রতিবেদক গাবতলী পশুর হাট থেকে
প্রকাশিত: ০৪:৩০ এএম, ৩০ আগস্ট ২০১৭

বাহাদুরের দাম ১৫ লাখ টাকা, বাদশাহ ১২ লাখ আর কালা পাহাড় ১০ লাখ টাকা। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রাজধানীর গাবতলীসহ বিভিন্ন পশুর হাটে ‘রাজকীয়’ ও ‘বাহারি’ এসব নাম দিয়ে কোরবানির পশুর দাম হাঁকছেন খামারিরা। অথচ দামের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা নেই এসব গরুসহ অন্য পশুর আকৃতি বা ওজনের।

এদিকে, আকর্ষণীয় নামের এসব গরুর দাম নিয়েও চলছে ‘খেল’। ক্যামেরা আর সাংবাদিক দেখলেই নিজেদের মর্জিমতো গরুর দুই-তিনগুণ বেশি দাম হাঁকাচ্ছেন খামারি ও পশুর মালিকরা।

প্রচারণার আশায় খামারিদের অতিরিক্ত দাম হাঁকানোর এই চিত্র দেখা গেলো সরেজমিন রাজধানীর গাবতলী পশুর হাট ঘুরে।

cow

বুধবার সকাল থেকে হাটের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ক্রেতারা গরু দেখছেন, কেউ কেউ দরদাম করছেন। বড় কোনো গরু দেখলেই ক্রেতারা ভিড় করছেন সেদিকে।

এদিকে, ভিড় দেখে সেদিকে ছুটছেন হাটে আগত সাংবাদিক ও ক্যামেরাপারসনরা। আর টিভি ক্যামেরা ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে মুহূর্তেই গরুর দাম দ্বিগুণ করে ফেলছেন খামারিরা।

সাংবাদিকরা টেলিভিশনে বা পত্রিকার মাধ্যমে যখন দামি গরুগুলো দেখাবেন বা তুলে ধরবেন। তখন ক্রেতারা বাজারের হালচাল বুঝবেন। অনেকে ধরে নেবেন এবার গরুর দাম বেশি যাবে। এ ধারণা সৃষ্টি করতেই মিডিয়ার সামনে গরুর অতিরিক্ত দাম বলা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন নাজির মোহাম্মদ নামে এক ক্রেতা।

cow

কুষ্টিয়া সদরের দুর্বাচারা গ্রাম থেকে ৪টি গরু নিয়ে সোমবার ঢাকায় এসেছেন ব্যবসায়ী মো. রোজদার বিশ্বাস। তার ছোট গরুটির দাম ৮০ হাজার আর সবচেয়ে বড় গরুর দাম হাঁকিয়েছেন ১২ লাখ টাকা। কৌতুহল নিয়ে সাংবাদিকরা হাজির হলেন তার কাছে। রমজান বললেন, লাল গরুটার নাম বাদশাহ। এটা পাকিস্তানের শাহীআল বীজের বাছুর। বয়স ৪ বছর ৭ মাস। মাংস হবে ৩০-৩২ মণ। দাম চাচ্ছি ১২ লাখ টাকা, উঠেছে সাড়ে ৬ লাখ টাকা; বিক্রি করিনি।

তবে বাদশাহর প্রকৃত দাম সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা হতে পারে বলে মন্তব্য ক্রেতাদের।

জাবের আলী সাফিন নামে এক ক্রেতা জাগো নিউজকে বলেন, এটার দাম কখনোই এতো হবে না। আমাকে কিছুক্ষণ আগে ৯ লাখ টাকা বলেছেন। এখন সাংবাদিক দেখে ১২ লাখ টাকা বলছেন। গরুর নাকি সাড়ে ৬ লাখ দাম উঠেছে, আমার তা মনে হয় না। এটা আপনাদের (মিডিয়া) মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য বলেছে। এ বছরের বাজারে এটা সর্বোচ্চ ৪ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন তিনি- বলেন ওই ক্রেতা।

hat

অনেকটা একই রকমের চিত্র চোখে পড়লো গাবতলীর উট এবং দুম্বার হাটেও। গাবতলী হাটের একমাত্র উটটি এসেছে মোহাম্মদপুরের ইমরান শাহ ফার্ম থেকে। মাঝারি আকৃতির উটের দাম এক ক্রেতার কাছে ৮ লাখ টাকা হাঁকালেন খামারি। অথচ জাগো নিউজের প্রতিবেদকের কাছে বললেন, ‘পাকিস্তানি উট। দাম সাড়ে ১৬ লাখ।’

সাংবাদিক পরিচয়ে মিরপুরের পর্বত পিকচার্স ফার্মের একটি দুম্বার দাম জানতে চাইলে খামারি বলেন, সাড়ে ৪ লাখ টাকা। অথচ একজন ক্রেতার কাছে একই দুম্বার দাম চাইলেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

cow

এ বিষয়ে ওই খামারির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেটা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা চেয়েছি, সেটা ক্রস (সংকর) দুম্বা। সৌদির আসল জাতের দাম একটু বেশি।

মিডিয়ার সামনে পশুর অতিরিক্ত দাম কেন চাইছেন খামারিরা? জানতে চাইলে সাদাত মোহাম্মদ নামে এক ক্রেতা বলেন, যারা ঘরে বসে এসব গরুর ছবি দেখবেন, তারা মনে করবেন বাজারে গরুর দাম বেশি। তাই ক্রেতাদের বিভ্রান্ত করতেই এমন দাম হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা। মিডিয়ার উচিত শুধু গরুর রাজকীয় নাম আর দাম শুনে নিউজ না করে, গরুর দাম যাচাই করা।

এআর/এসআর/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।