মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়ে গরুর ব্যবসায়

সাঈদ শিপন
সাঈদ শিপন সাঈদ শিপন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:১৬ পিএম, ২৮ আগস্ট ২০১৭
পাঁচটি গরু নিয়ে হাটে এসেছেন মাস্টার্স পাস আবুল হোসেন, কোনো সরকারি-বেসরকারি চাকরির পেছনে ছুটেননি তিনি। ব্যবসাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।

অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স ডিগ্রি) ঝিনাইদহের মো. আবুল হোসেন। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত এ যুবকের পেশা গরুর ব্যবসা। মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের পরপরই তিনি নেমে পড়েন গরুর ব্যবসায়। পেয়েছেন সফলতাও।

এবারের ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকায় নিয়ে এসেছেন পাঁচটি গরু। গোপীবাগের অস্থায়ী পশুর হাটে গরুগুলো নিয়ে বসেছেন রোববার থেকে। সেখানেই সোমবার আবুল হোসেনের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের।

তিনি জানান, ঝিনাইদহের সরকারি কে সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। মাস্টার্স সম্পন্ন করার পর সরকারি অথবা বেসরকারি কোনো চাকরিরই চেষ্টা করেননি। পেশা হিসেবে বেছে নেন বাবার গরুর ব্যবসা। সেই সঙ্গে নিজস্ব জমিতে চাষাবাদে মনোযোগ দেন।

jagonews24

অর্থনীতিতে মাস্টার্স করার পরও কেন কোনো ধরনের চাকরির চেষ্টা করলেন না- এমন প্রশ্নের উত্তরে আবুল হোসেন বলেন, ‘পড়ালেখা করেছি মনের খোরাক মেটানোর জন্য। পাস করে চাকরি করব এ ইচ্ছা ছাত্র অবস্থায়ও ছিল না। তাছাড়া আমাদের দেশে ভালো চাকরি পাওয়া মোটেই সহজ নয়। তাই স্বাধীন পেশা হিসেবে ব্যবসা বেছে নিয়েছি।’

গরুর ব্যবসা করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা গরুর ব্যবসা করতেন। সেজন্য ঝিনাইদহের ডাকবাংলোর গ্রামের বাড়িতে আমাদের ছোট একটি খামারও আছে। পাস করার পর বাবাও কোনোদিন চাকরির জন্য চাপাচাপি করেনি। তাই পৈতৃক ব্যবসা হিসেবেই গরুর ব্যবসা শুরু করি। আর মাঠে আমাদের বেশকিছু জমি আছে, সেই জমি চাষাবাদ ও দেখাশোনা করি।’

‘আমাদের খামারে নিজস্ব কয়েকটি গাভী রয়েছে। সেই গাভীর বাচ্চা লালন-পালনের পাশাপাশি বাজার থেকে গরু কিনেই মোটাতাজাকরণ করা হয়। সাধারণত একটি গরুর বয়স তিন বছর হলে বিক্রি করি। তিন বছর পোষার পর একটি গরু বিক্রি করতে গেলে দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকা পাওয়া যায়’-বলেন আবুল হোসেন।

তিনি জানান, এবারের কোরবানি ঈদ উপলক্ষে ঢাকায় পাঁচটি গরু নিয়ে এসেছেন। এর মধ্যে একটি গরু নিজস্ব গাভীর। এই গরুটির বয়স তিন বছর। বাকি চারটি গরু বাজার থেকে কিনে আট মাস নিজস্ব খামারে মোটাতাজাকরণ করেছেন।

নিজস্ব গাভী থেকে পাওয়া গরুটির দাম এক লাখ ৮০ হাজার টাকার ওপর পাবেন বলে আশা করছেন আবুল হোসেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, গরুটি থেকে প্রায় আট মণ মাংস হবে।

আর বাজার থেকে কিনে মোটাতাজাকরণ করা চারটি গরুর মধ্যে একটির দাম এক লাখ ৬০ হাজার টাকার ওপরে এবং বাকি তিনটির দাম এক লাখ টাকার ওপরে পাবেন এমনটিই আশা করছেন তিনি।

jagonews24গরুর পাশে আবুল হোসেন

আট মণ মাংস হবে এমন গরুর দাম তো অনেকেই দুই লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা চাচ্ছেন, আপনি কম চাওয়ার কারণ কী- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি ঢাকায় গরু এনেছি বিক্রি করার জন্য। দাম চাওয়ার জন্য নয়। যে দামে আমি বিক্রি করতে চাই সে দামই চাচ্ছি। অতিরিক্ত দাম চেয়ে লাভ নেই।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি যে গরু নিয়ে এসেছি, এর সবগুলোই দেশি গাভীর বাচ্চা। তবে ইনজেকশন দেয়া। লালন-পালন করতে প্রতিদিন একেকটি গরুর পেছনে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা ব্যয় হয়েছে। ঢাকায় গরু আনার সময় সঙ্গে করে ভূষি, বিচালিসহ অন্যান্য খাবার নিয়ে এসেছি। ঢাকা থেকে খাবার কিনে গরুকে খাওয়ানো সম্ভব নয়। খরচ অনেক বেশি পড়ে যাবে।’

মাস্টার্স পাস করে গরুর ব্যবসা করতে কেমন লাগছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে আবুল হোসেন বলেন, আমার কাছে এখন এ ব্যবসা বেশ ভালো লাগে। সঠিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ করে বিক্রি করলে ভালো মুনাফা পাওয়া যায়।

এমএএস/জেডএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।