বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দ্রুত ঢাকার বাইরে পোস্টিং’র নির্দেশ


প্রকাশিত: ০১:৩৫ পিএম, ০৬ জুন ২০১৫

বিশেষজ্ঞ  চিকিৎসক ও  শিক্ষকের অভাবে ঢাকার বাইরের সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হলেও রাজধানীর প্রায় প্রতিটি সরকারি মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতালে অতিরিক্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ছড়াছড়ি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ঢাকায় অবস্থানরত অতিরিক্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও শিক্ষকদের দ্রুত তালিকা তৈরি করে তাদের ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজগুলোতে ফেরত পাঠানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন।

শনিবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতালের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠকে তিনি এ নির্দেশনা প্রদান করেন।

তিনি বলেছেন, প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষকের অভাবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা শিক্ষা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এমনভাবে চলতে থাকলে শিক্ষার মান নিম্নমুখী হবে এবং বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর মতো সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর বদনামের বোঝা বইতে হবে।

বৈঠকে উপস্থিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন,  রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতালে গড়ে ৩০ থেকে ৪০জন অতিরিক্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও শিক্ষক রয়েছেন। তাদের অধিকাংশের প্রকৃত পোস্টিং ঢাকার বাইরে।

অভিযোগ রয়েছে শূন্য পদ না থাকলেও ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ চিকিৎসক নেতা, মন্ত্রী, রাজনীতিবিদ ও সাংসদদের মাধ্যমে প্রভাব খাটিয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ ও সংযুক্তিসহ বিভিন্ন অজুহাতে ঢাকায় এসে আর ফিরে যাচ্ছেননা।

বর্তমানে দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ২৯টি। এর মধ্যে ঢাকায় মাত্র ৩টি- ঢাকা, স্যার সলিমুল্লাহ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছাড়া অন্যান্য সকল মেডিকেল কলেজ ঢাকার বাইরে অবস্থিত। রাজধানীতে বেশ কিছু সংখ্যক বিশেষায়িত হাসপাতাল রয়েছে।

জানা গেছে, মোহাম্মদ নাসিম সারাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে সান্ধ্যকালীন চিকিৎসা সেবা (রাউন্ড) নিশ্চিত করতে চিকিৎসকদের নির্দেশ দিয়েছেন। যেদিন যে ওয়ার্ড যে অধ্যাপকের অধীনে রোগী ভর্তির দিন নির্ধারিত থাকবে সেই ওয়ার্ডের অধ্যাপককে সান্ধ্যকালীন হাসপাতালে রাউন্ড দিয়ে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের হাসপাতালে অবাধ প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ ও ও হাসপাতালের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধিরও নির্দেশ দেন।

তিনি বলেন, দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করাই বর্তমান সরকারের লক্ষ্য। সরকারি হাসপাতালগুলোতে এখনো সান্ধ্যকালীন রাউন্ড নিশ্চিত হয়নি। এটা নিশ্চিত করার জন্যই এই বৈঠক। আমি সকল হাসপাতালগুলোতে সান্ধ্যকালীন সেবা নিশ্চিত করতে চাই।
 
তিনি আরও বলেন, দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কোনো শৈথিল্য চলতে পারে না। কোনো চিকিৎসক রোগীর সেবাদানের ক্ষেত্রে কোনো অবহেলা প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে মনিটরিং টিমের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দায়িত্বে অবহেলার কারণে অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

স্বাস্থ্যখাতে প্রস্তাবিত বাজেট প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী বলেন, সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতেই এ বাজেট যথেষ্ট নয়। সেই অর্থ যদি বাড়ানো না হয়, সরকারিভাবে যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার সুযোগ আছে তা ব্যহত হবে। স্বাস্থ্যসেবার জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরকে আরো এগিয়ে আসতে হবে। বেসরকারি হাসপাতাল যারা স্থাপন করেছেন তারা কমমূল্যে যেন রোগীদের সেবা দেন।

তিনি বলেন, রোগীর স্বজনদের অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে চিকিৎসা ব্যহত হচ্ছে। এজন্য বিকল্প পথ বের করতে হবে। বিভিন্ন জেলা হাসপাতালে বিশেষায়িত ইউনিট সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।

বৈঠকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সচিব সৈয়দ মন্জুুরুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হকসহ ঢাকার সরকারি হাসপাতালের পরিচালক, বিশেষায়িত হাসপাতালের পরিচালক ও সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ এবং স্বাস্থ্য বিভাগের বিভাগীয় পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

এমইউ/এসএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।