দালাল ঠেকাতে ইউনিফর্ম বাধ্যতামূলক হচ্ছে হাসপাতালে


প্রকাশিত: ০৬:০৬ এএম, ০৫ জুন ২০১৫
ফাইল ছবি

সরকারি হাসপাতালগুলোতে অসাধু দালালচক্রের অপতৎপরতা বন্ধের লক্ষ্যে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-৪ (মনিটরিং ও সমন্বয়) অধিশাখা থেকে এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে। পরিপত্রে ডাক্তার, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য নির্ধারিত ইউনিফর্ম পরিধান করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

জানা গেছে, হাসপাতালগুলোতে অসাধু দালালচক্রের অপতৎপরতা বন্ধের লক্ষ্যে ইউনিফর্ম পরিধানসহ আরো বেশ কিছু নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে ওই পরিপত্রে। এছাড়া হাসপাতাল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের তত্ত্বাবধায়ক/ব্যবস্থাপক কর্মকর্তারা বহিরাগত দালাল প্রতিরোধে ব্যর্থ হলে এর দায়ভার তাদেরকে বহন করতে হবে বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়।

গত বুধবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম আকস্মিক ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে কর্তব্যরত ডাক্তারদের ইউনিফর্ম পরিধান না করতে দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হাসপাতালে এসে সাধারণ রোগীরা যেন দালালচক্রের সদস্যের খপ্পরে পড়ে হয়রানির শিকার না হয় সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্রটি জারি করান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, সম্প্রতি হাসপাতালগুলোতে অসাধু দালালচক্রের অপতৎপরতা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজধানীসহ সারাদেশে সরকারিভাবে ন্যুনতম খরচে চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে। রক্ত পরীক্ষা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জটিল রোগব্যাধি সঠিকভাবে নির্ণয়ের জন্য এমআরআই, সিটিস্ক্যান, আলট্রাসনোগ্রাম, এক্সরেসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে। কিন্তু সাধারণ রোগীরা এর সুফল পাচ্ছেন না। সরকার সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার আন্তরিক প্রচেষ্টা চালালেও দালালচক্রের অপতৎপরতার কারণে তা ভেস্তে যাচ্ছে বলে জানান তারা।

অপরদিকে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ (টিআইবি) তাদের বিভিন্ন প্রতিবেদনে হাসপাতালে এসে দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে সাধারণ মানুষ চরম হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছে। দালালচক্রের কেউ কেউ সুযোগ বুঝে ডাক্তার, কর্মকর্তা ও কর্মচারী পরিচয় দিয়ে অপকর্ম করছেন। ইউনিফর্ম পরিধান না করায় সাধারণ মানুষ কারও পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারছেন না বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।  

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) এর সর্বশেষ প্রকাশিত হেলথ বুলেটিন-২০১৪ এর তথ্যানুসারে বর্তমানে অধিদফতরের অধীনে মোট হাসপাতালের সংখ্যা ৫৯২টি। এগুলোর মধ্যে সেকেন্ডারি ও টারশেয়ারি পর্যায়ে ১২৫টি, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ৪৬৭টি হাসপাতাল রয়েছে। হাসপাতালে বেডের সংখ্যা ৪৮ হাজার ৮৩৩টি।

স্বাস্থ্য বুলেটিনের তথ্যানুসারে ২০১৩ সালে এসব হাসপাতালের বহির্বিভাগে ১৪ কোটি ৯২ লাখ ৬৮ হাজার ৪২৯ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ভর্তি হয়েছে ৪৫ লাখ ১২ হাজার ৭৩৭ রোগী। এছাড়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ৭৯ হাজার ৯৬৯ জন।

অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মদদে প্রায় প্রতিটি হাসপাতালে সংঘবদ্ধ দালালচক্র শক্ত ঘাঁটি গড়ে তুলেছে। তারা রোগীদের বিভিন্নভাবে প্রলোভিত করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়। কেউ কেউ রোগী ভাগিয়ে প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে নিয়ে যায়।

পরিপত্রে যা বলা রয়েছে :
নির্দেশনায় বলা হয়- স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত তথ্যপ্রাপ্তি জনগণের অধিকার। সকল প্রতিষ্ঠানে সিটিজেন চার্টার দৃশ্যমানভাবে প্রদর্শন, প্রতিষ্ঠানের প্রদত্ত সেবা, সরবরাহকৃত ওষুধ ও রোগ নির্ণায়ক পরীক্ষাসহ সেবার মূল্য সংক্রান্ত তথ্যাদি রোগীর সুবিধার্থে সুবিধাজনক স্থানে প্রদর্শন, বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে ওয়ার্ড বয়/বুয়াসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দায়িত্ব আকস্মিক ও নিয়মিতভাবে পুনর্বণ্টন করতে হবে।

এছাড়া একই দায়িত্বে দীর্ঘদিন ধরে থাকা কোনো কর্মচারী যেন দালালচক্রের এজেন্ট না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরিচয়পত্র প্রদান ও তা ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

তত্ত্বাবধানকারী কর্মকর্তাদেরকে দৃশ্যমানভাবে তার প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত মনিটরিং ও কর্মচারীদের মাধ্যমে দালাল প্রতিরোধে নিজস্ব প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এসএমএসের মাধ্যমে অভিযোগ গ্রহণের সুযোগ দিতে হবে বলেও পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়।

এমইউ/এএইচ/এআরএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।