অনলাইনে ট্রেনের টিকিট চান যাত্রীরা
স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিজ গ্রামের বাড়ি ফিরবেন ঢাকাবাসী। সেই লক্ষ্যেই ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন কমলাপুর রেলস্টেশনে। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে আজ (রোববার) বিক্রি হচ্ছে ২৯ আগস্টের টিকিট। টিকিট প্রত্যাশায় কমলাপুরে লাইনে দাঁড়িয়েছেন অসংখ্য মানুষ। কাঙ্ক্ষিত টিকিট পেতে প্রত্যাশীদের ভিড় ক্রমেই বাড়ছে।
রোববার (২০ আগস্ট) কমলাপুর স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, মোট ২৩টি কাউন্টার থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২টি কাউন্টার নারীদের জন্য সংরক্ষিত। কাউন্টারের প্রতিটি লাইনই দীর্ঘ। টিকিট কাউন্টারের সামনে থেকে সিঁড়ি পেরিয়ে বাহিরের দিকেও চলে গেছে টিকিট প্রত্যাশীদের লাইন।
তাদের মধ্যে অনেকই রাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। আবার অনেকে ভোরে এসে যোগ দিয়েছেন। তবে টিকিটের আশায় দীর্ঘ লাইন, দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকিট না পাওয়াসহ নানা ভোগান্তি এড়াতে অনলাইনে টিকিট কাটার ব্যবস্থা করার দাবি জানান তারা।
২৯ আগস্টের খুলনাগামী চিত্রা এক্সপ্রেসের টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন বেসরকারি চাকরিজীবী আব্দুর রশিদ। তিনি বলেন, গত রাতে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি কিন্তু মানুষের অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে এখনও কাউন্টার পর্যন্ত যেতে পারিনি। এমন ভোগান্তি নিয়ে টিকিট ক্রয় করে বাড়ি যাওয়া বেশ বিড়াম্বনার। এর মধ্যে লাইনে দাঁড়ানোর জন্য আজ অফিস মিস।
তিনি আরও বলেন, যাত্রীদের এমন বিড়াম্বনা এড়াতে সিংগভাগ টিকিটই অনলাইনে দেয়া উচিত। বর্তমানে অনলাইনে ২৫ শতাংশ টিকিট দেয়া হয়, যা খুবই কম। যদি টিকিট অনলাইনে দেয়া হত তাহলে অফিসে বসেই টিকিট কাটতে পারতাম। মানুষকে এতটা ভোগান্তি পোহাতে হত না।
লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনের আরেক টিকিট প্রত্যাশী জুবায়ের হাসান বলেন, দেশ ডিজিটাল হচ্ছে, সবাই এখন অনলাইনমুখী। কিন্তু রেলওয়ে সেই আগের পন্থাই অবলম্বন করছে। প্রতিবছর অগ্রিম টিকিট পেতে ভোগান্তির শেষ নেই। সাধারণ যাত্রীদের এমন বিড়াম্বনার কথা মাথায় রেখে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অবশ্যই উচিত টিকিটের সিংহভাগ অনলাইনে দেয়া।
টিকিট সংগ্রহে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্টারের লাইনে দাঁড়িয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বৃষ্টি আক্তার। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, সব কাজ রেখে টিকিট কাটতে এসেছি। কিন্তু যে দীর্ঘ লাইন, এতে মনে হচ্ছে টিকিটই পাব না। ঈদের সময় অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ পদ্ধতি খুবই বেদনাদায়ক এবং ভোগান্তির।
তিনি আরও বলেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অনলাইনে বা বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে টিকিট বিক্রি করতে পারে। এ ছাড়া ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি কিছুটা হলেও কমবে।
কমলাপুর রেলওয়ের কাউন্টারের কর্মরতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টিকিট প্রত্যাশীদের ভিড় গত দুইদিনের তুলনায় আজ (রোবাবর) একটু বেশি। তারপরও তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন যাত্রীদের সেবা দিতে। সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে ২৩টি কাউন্টারর থেকে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে।
অললাইনে টিকিটি বিক্রি বিষয়ে তারা বলেন, বর্তমানে ২৫ শতাংশ টিকিট অনলাইনে বিক্রি করা হয়। এ সংখ্যা যদি বাড়ানো হয় সেটা যাত্রীদের জন্য ভালো হবে। তবে বেশি সংখ্যক টিকিট অনলাইনে দিলে সঠিক ডিস্টিবিউশনে ঘাটতি হতে পারে।
কমলাপুর রেল স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চট্রবর্তী বলেন, কমলাপুর থেকে প্রতিদিন ৩১টি ট্রেনের ২২ হাজার ৪৯৬টি টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ অনলাইন, ৫ শতাংশ ভিআইপি, ৫ শতাংশ রেলওয়ে কর্মকর্মতা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ। বাকি ৬৫ শতাংশ টিকিট কাউন্টার থেকে বিক্রি হয়।
তিনি আরও বলেন, যাত্রীরা সুশৃংঙ্খলভাবে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট ক্রয় করতে পারছেন। ট্রেন যাত্রায় যাত্রীদের যেন কোনো প্রকার সমস্যা না হয় এবং পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক রাখতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
অগ্রিম টিকিট:
আজ (রোববার) বিক্রি হচ্ছে ২৯ আগস্টের টিকিট। ক্রমান্বয়ে ২১ ও ২২ আগস্টের টিকিট যথাক্রমে ৩০ ও ৩১ আগস্ট পাওয়া যাবে।
ফিরতি টিকিট:
ঈদ ফেরত যাত্রীদের জন্য অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে আগামী ২৫ আগস্ট থেকে। রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, দিনাজপুর ও লালমনিরহাট স্টেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় সকাল ৮টা থেকে এসব টিকিট বিক্রি হবে। ২৫ আগস্ট ৩ সেপ্টেম্বরে টিকিট পাওয়া যাবে। এ ছাড়া ২৬, ২৭, ২৮ ও ২৯ আগস্টের টিকিট পাওয়া যাবে যথাক্রমে ৪, ৫, ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বরের ফিরতি টিকিট।
এএস/আরএস/আইআই