কমলাপুরে মানুষ আর মানুষ
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ২৩টি কাউন্টার থেকে এ টিকিট বিক্রি শুরু হয়।
শুক্রবার বিক্রি করা হচ্ছে আগামী ২৭ আগস্টের টিকিট। একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৪টি টিকিট কিনতে পারবেন।
অগ্রিম টিকিট বিক্রির প্রথম দিনেই কমলাপুর স্টেশনে টিকিট প্রত্যাশীদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। কাঙ্খিত টিকিট পেতে ভোর থেকেই লাইনে এসে দাঁড়িয়েছেন অনেকে।
রাজশাহীগামী পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনের ২৭ তারিখের টিকিটের জন্য লাইনে অপেক্ষা করছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী মকিদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ঈদ আসলেই আনন্দযাত্রা ভোগান্তি দিয়ে শুরু হয়, তবুও সবাই বাড়ি ফিরতে চায়। কাঙ্খিত টিকিট পেতে লাইনে দাঁড়িয়েছি, যেমন দীর্ঘ লাইন টিকিট পাব কিনা এটা নিয়ে শঙ্কিত।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘কাউন্টারে যারা বসে টিকিট বিক্রি করছেন তাদের খুন ধীরগতি, একজনকে টিকিট দিতেই অনেক সময় নিচ্ছেন। এতে অপেক্ষমাণ সবাই বিরক্ত হচ্ছেন।’
এদিকে, রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিটের জন্য অপেক্ষা করেও টিকিট পাননি অনেকে। এদের একজন বেসরকারি চাকরিজীবী অনিক আহমেদ। তিনি বলেন, ‘২৭ তারিখের রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। পরে কাউন্টার থেকে জানানো হলো, ২৭ তারিখ রোববার রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধের দিন। তাই ওইদিনের টিকিট বিক্রি হবে না। পরে লালমনি এক্সপ্রেসের টিকিট কাটলাম।’
গতকাল রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, পবিত্র ঈদুল আজাহার পাঁচদিন পূর্বে ২৮ আগস্ট থেকে ঈদের পূর্ব দিন পর্যন্ত সব আন্তঃনগর সাপ্তাহিক বন্ধের দিনও চলাচল করবে।
সকালে কমলাপুর স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, মোট ২৩টি কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ২টি নারীদের জন্য সংরক্ষিত। প্রতিটি কাউন্টারের সামনে থেকে টিকিট প্রত্যাশীদের লাইন স্টেশনের সিঁড়ি পার হয়ে বাইরে চলে এসেছে।
ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি প্রসঙ্গে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আজ বিক্রি হচ্ছে ২৭ আগস্টের টিকিট। টিকিট প্রত্যাশীরা সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কিনতে পারছেন। আজ যারা লাইনে আছেন, আশা করছি সবাই টিকিট পাবেন।’
তিনি জানান, কমলাপুর থেকে প্রতিদিন ৩১টি ট্রেনের ২২ হাজার ৪৯৬টি টিকিট বিক্রি করা হবে। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ অনলাইনে, ৫ শতাংশ ভিআইপি, ৫ শতাংশ রেলওয়ে কর্মকর্মতা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ এবং বাকি ৬৫ শতাংশ টিকিট কাউন্টার থেকে বিক্রি করা হবে।
অগ্রিম টিকিট
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের জন্য ২৭ থেকে ৩১ আগস্টের টিকিট প্রচলিত নিয়মানুসারে ১০ দিন আগে, আজ থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত বিক্রি করা হবে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে একযোগে এ টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে।
আজ বিক্রি হচ্ছে ২৭ আগস্টের টিকিট। এছাড়া ১৯, ২০, ২১ ও ২২ আগস্ট বিক্রি করা হবে যথাক্রমে ২৮, ২৯, ৩০ ও ৩১ আগস্টের টিকিট।
ফিরতি টিকিট
ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা মানুষের জন্য অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে আগামী ২৫ আগস্ট থেকে। ঈদ ফেরত যাত্রীদের জন্য রাজশাহী,খুলনা, রংপুর, দিনাজপুর ও লালমনিরহাট স্টেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ওইদিন সকাল ৮টা থেকে টিকিট বিক্রি হবে।
২৫ আগস্ট পাওয়া যাবে ৩ সেপ্টেম্বরের টিকিট। এরপর ক্রমান্বয়ে ২৬, ২৭, ২৮ ও ২৯ আগস্ট পাওয়া যাবে যথাক্রমে ৪, ৫, ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বরের ফিরতি টিকিট। তবে ১ থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৈত্রী এক্সপ্রেস চলাচল করবে না।
ঈদযাত্রায় ৭ জোড়া বিশেষ ট্রেন
ঈদকে সামনে রেখে এবার যাত্রীদের সুবিধার্থে ও নির্বিঘ্নে চলাচলে ৭ জোড়া বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করা হবে। বিশেষ ট্রেনগুলো ঈদের আগের ৪ দিন ও ঈদের পরে ৭ দিন চলাচল করবে।
এসব ট্রেনের মধ্যে রয়েছে- দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল : ঢাকা - দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা ২৯ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর এবং ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
চাঁদপুর স্পেশাল ১ : চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম ২৯ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর এবং ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
চাঁদপুর স্পেশাল ২ : চট্টগ্রাম -চাঁদপুর-চট্টগ্রাম ২৯ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর এবং ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
রাজশাহী স্পেশাল : রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী ২৯ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর এবং ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
পার্বতীপুর স্পেশাল : পার্বতীপুর-ঢাকা-পার্বতীপুর ২৯ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর এবং ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
শোলাকিয়া স্পেশাল ১ : ভৈরববাজার-কিশোরগঞ্জ-ভৌরববাজার ঈদের দিন চলাচল করবে এবং শোলাকিয়া স্পেশাল ২ : ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিং ঈদের দিন চলাচল করবে।
ঈদে রেলওয়ের বিশেষ পরিকল্পনা
এবার ঈদে যাত্রীদের সুবিধার্থে বিশেষ কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এর মধ্যে রয়েছে-
টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধ : ঢাকা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, বিমানবন্দর, জয়দেবপুর, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী, খুলনাসহ সব বড় স্টেশনে জিআরপি, আরএনবি, বিজিবি, স্থানীয় পুলিশ এবং র্যা বের সহযোগিতায় টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হবে। তাছাড়া জেলা প্রশাসকদের সহায়তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
নাশকতা প্রতিরোধ : চলন্ত ট্রেনে, স্টেশনে বা রেললাইনে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধকল্পে আরএনবি, জিআরপি ও রেলওয়ে কর্মচারীদের কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে। এছাড়া র্যা ব, বিজিবি, স্থানীয় পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সক্রিয় সহযোগিতায় নাশকতাকারীদের কঠোরভাবে দমন করা হবে।
কোচ সংযোজন : পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ থেকে ৭২টি এমজি ও সৈয়দপুর ওয়ার্কশপ থেকে ৬৬টি (২৫টি এমজি ও ৪১টি বিজি) সহ মোট ১৩৮টি কোচ শপ আউট-টার্ন হবে। ১৩৮টি শপ আউট-টার্নসহ মোট ১২৯৬টি কোচ চলাচল করবে। গত বছর ১৭০টি শপ আউট-টার্নসহ মোট ১২২২টি কোচ চলাচল করছে। এ বছর ৭৪টি কোচ বেশি চলাচল করবে।
লোকোমেটিভ সরবরাহ : বিদ্যমান লোকোমেটিভ সরবরাহ পূর্বাঞ্চলে ১১৬টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ১১১টি (বিজি ৮৬টি ও এমজি ২৫টি) সহ মোট ২২৭টি। অর্থাৎ, ঈদে পূর্বাঞ্চলে ১১৬টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ১১টি সহ মোট ২২৯টি লোকোমেটিভ ব্যবহার করা হবে। গত বছর ২২৭টি চলাচল করেছে।
এদিকে, যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের সুবিধার্থে ঈদের ৩ দিন আগে থেকে কন্টেইনার ও জ্বালানি তেলবাহী ট্রেন ছাড়া কোনো পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করবে না। তবে ঈদের দিন বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কিছু মেইল এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে।
টিকিটধারী যাত্রীদের ভ্রমণের সুবিধার্থে জয়দেবপুর ও বিমানবন্দর স্টেশন থেকে ঢাকাগামী আন্তঃজোনাল আন্তঃনগর ট্রেনে কোনো আসনবিহীন যাত্রী চলাচল করতে পারবেন না।
অন্যদিকে, সুষ্ঠুভাবে ও নিরাপদে ট্রেন চলাচলের সুবিধার্থে ট্রেন পরিচালনায় সম্পৃক্ত রেলওয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ২৮ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া আগামী ১ থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৈত্রী এক্সপ্রেস চলাচল করবে না।
এএস/এসআর/আইআই