হজ ফ্লাইট নিয়ে বিপাকে বিমান
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্ধারিত হজযাত্রী পরিবহনে বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের ব্যর্থতার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। শুরু থেকে হজযাত্রী পরিবহনে নানা সমস্যায় শেষ পর্যন্ত অন্তত কয়েক হাজার হজযাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে এবার হজ ফ্লাইট নিয়ে অনেকটাই বিপাকে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিমান।
সূত্র জানায়, নির্দিষ্ট ৩৪ দিনের মধ্যে মোট ৬৩ হাজার ৫৯৯ জন (ব্যালটি ও নন-ব্যালটি) হজযাত্রী পরিবহন করার কথা রয়েছে বিমানের। কিন্তু গত ২০ দিনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পরিবহন করেছে মাত্র ২৭ হাজার ৪ জন হজযাত্রী। হাতে আর সময় রয়েছে মাত্র ১৪ দিন।
এই ১৪ দিনে বাকি ৩৬ হাজার ৫৯৫ জন হজযাত্রী পরিবহন করতে হবে বিমানকে। যা কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে মনে করেন হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সদস্য নুরুল আমিন হাওলাদার।
তিনি বলেন, এ অবস্থায় বিমানের হাতে কোনো পরিকল্পনা নেই। আর বিশেষ কোনো ব্যবস্থা না করা গেলে এবার টার্গেটের অর্ধেক হজযাত্রী পরিবহন করতে পারবে না রাষ্ট্রায়ত্ত এই প্রতিষ্ঠান। ফলে এরইমধ্যে ১০ হাজারের মতো হজযাত্রীর এবারের হজযাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কিন্তু এর দায় নিতে চাচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কোনো সংস্থা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অতিরিক্ত মুনাফালোভী এজেন্সি মালিকদের কারসাজি এবার হজ ব্যবস্থাপনাকে চরম বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ইতোমধ্যে বাতিল হওয়া ফ্লাইটগুলোর আটকা পড়া হাজার হাজার হজযাত্রীর ফ্লাইট দেওয়ার বিষয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েছে স্বয়ং বিমান কর্তৃপক্ষ। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির কারণ হিসেবে এতদিন ভিসা জটিলতার কথা বলা হলেও এখন স্পষ্ট ও ভিন্ন ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে, মোয়াল্লেম ফি ও বাড়ি ভাড়া অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় অধিকাংশ এজেন্সি এখন পর্যন্ত বাড়ি ভাড়া করেননি। শেষদিকে এসে চেষ্টা করলে কম টাকায় বাড়ি ভাড়া করা যাবে, এমন আশায় বসেছিলেন অধিকাংশ এজেন্সি মালিক। যে কারণে প্রথমদিকে কনফার্ম করা টিকিট বাতিল করা হয়েছে। কারণ বাড়ি ভাড়া না করে হজযাত্রী পাঠানোর কোনো সুযোগ নেই।
জানা গেছে, যেসব হজযাত্রীদের কারণে বিমানের ২১টি ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে তাদের সবার ভিসা রয়েছে। কিন্তু অসাধু এজেন্সি মালিকরা বাড়ি ভাড়া না করায় এসব হজযাত্রীদের পাঠাতে পারছে না। বাস্তবতা এমন হলেও সমাধানে তেমন কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে।
এ বিষয়ে হজ ক্যাম্পের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি খারাপ আমরা সবাই জানি। তবে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই জটিল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব।
এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এএম মোসাদ্দিক আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, বিমান এ বছর খুবই পরিকল্পিতভাবে হজ ফ্লাইটের সিডিউল তৈরি করেছে। হজযাত্রী পরিবহনে এরইমধ্যে বিমানের বহরে নিজস্ব ৪১৯ আসনের সুপরিসর বোয়িং৭৭৭ উড়োজাহাজ রয়েছে। এছাড়া লিজে আনা ৪০৬ আসনের বোয়িং ৭৭৭-২০০ উড়োজাহাজে হজযাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতি বিষয়ে তিনি বলেন, পরিস্থিতি জটিল, তবে চেষ্টা করলে ওভারকাম সম্ভব। হজযাত্রী পেলে বিমান তাদের পরিবহন করতে পারবে। অতিরিক্ত ফ্লাইটের জন্যে আমরা স্লট পেয়েছি, আরও পাব বলে আশা করছি।
বর্তমান সংকট নিয়ে হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হাবের মহাসচিব শাহাদাত হোসেন তসলিম বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। সবাই মিলে চেষ্টা চলছে। এই পরিস্থিতি থেকে যেকোনোভাবে উত্তরণ প্রয়োজন।
এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মোট হজযাত্রীর সংখ্যা ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। হজযাত্রীদের সৌদি আরবে যাত্রার প্রথম ফ্লাইট পৌঁছে ২৪ জুলাই। শেষ ফ্লাইট যাবে ২৮ আগস্ট। ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ৬ সেপ্টেম্বর ও শেষ ফিরতি ফ্লাইট ৫ অক্টোবর। এ বছর চাঁদ দেখা সাপেক্ষে হজ অনুষ্ঠিত হবে ১ সেপ্টেম্বর।
আরএম/এসআর/জেআইএম