এবার ১২ হত-দরিদ্রকে রিকশা প্রদান করলেন ‘পাগলা’ মনসুর

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:২৮ এএম, ১২ আগস্ট ২০১৭

সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘পাগলা’ নামে পরিচিত তিনি! আসলে নামে নয়, কাজকর্মের মধ্যে পাগলামির ছাপ দেখে অনেকেই তাকে এমন নামে ডাকেন। এই ব্যক্তি আর কেউ নন; ভিনাইল ওয়াল্ডগ্রুপের সিইও আবেদ মনসুর।

সাদা মনের এ মানুষটি নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত অলাভজনক সংগঠন ‘রিকভার’ থেকে কড়াইল ও সাততলা বস্তির হত-দরিদ্র, বয়স্ক পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য তুলে দিলেন ১২টি রিকশা।

বয়সে তরুণ, সাদামাটা আর সদালাপী ব্যবসায়ী আবেদ মনসুর। বস্তিবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছাত্রজীবনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে ছাত্ররাজনীতি করা এ ব্যবসায়ী সুযোগ পেলেই দুপুরের খাবার শ্রমিকদের সঙ্গে খান। বাবা-মাকে ভালোবাসেন যেকোনো কিছুর ঊর্ধ্বে। আর দেশকেও ভালোবাসেন প্রচণ্ড রকম।

সাদা মনের এ মানুষটি সবসময় নিজেকে জড়িয়ে রাখেন নানা উন্নয়ন ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে। তারই অংশ হিসেবে এবার তার নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত অলাভজনক সংগঠন ‘রিকভার’ থেকে কড়াইল ও সাততলা বস্তির হতদরিদ্র, বয়স্কদের পুনর্বাসনের জন্য বিনা পয়সায় তুলে দিলেন ১২টি রিকশা।

pagla

আর সেই রিকশা পেয়েই ১২টি মুখ আনন্দে উদ্বেলিত। সাততলা বস্তির আব্দুর রহিম (৬৮) রিকশা পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেললেন। বলেন, ‘দ্যাশের সব বড়লোক আর ন্যাতারা যদি এই বাপজানের মতো পাগলা অইত!’

তিনি আরও বলেন, ‘একখ্যান মাইয়া বিয়্যা দেওনের পর কামের লাইগ্যা নানান জায়গায় ঘোরনের পর মানুষের লাথি-উষ্টা খাইছি। এহন নিজের রিকশা চালামু, নিজে ট্যাহা কামামু, কওনের কেউ নাই।’

এমন সামাজিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে আবেদ মনসুর বলেন, ‘জীবন একটাই, মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই; মৃত্যুর পরও মানুষ যেন আমার কথা মনে রাখে।’

অনেকটা রসিকতার সুরেই বলেন, ‘আমি যা করি দুঃখী মানুষদের ভালোবেসেই করি। এ ধরনের কাজ করে আমি পাই বুনো স্বাদ আর এ স্বাদে কোনো ফরমালিন নাই। কমপ্লিটলি বুনো।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর আগে বিমানবন্দর রোডের আধুনিকায়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজে নেমেছিলেন তিনি। খরচও করেন প্রায় ১০০ কোটি টাকা। পাশাপাশি ১৫টি ফুটওভার ব্রিজের ছাউনি নির্মিত হয়েছে তার আর্থিক সহযোগিতায়।

pagla

রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া পিয়া নামের পাঁচ বছরের এক শিশুকন্যাকে বুকে টেনেও নিয়েছেন ‘পাগলা’ আবেদ মনসুর। অনেক চেষ্টায় অবশেষে শিশুটিকে ফিরিয়ে দিয়েছেন বাবার কোলে। শুধু তাই নয়, দরিদ্র বাবা তার মেয়ে বিয়ে দিতে পারছে না- এমন খবর শুনে পুরো বিয়ের দায়িত্ব নিয়েছিলেন নিজের কাঁধে। এসব দায়িত্বও পালন করতে গিয়ে তার সরল স্বীকারোক্তি ‘এতেই আমার শান্তি’।

তবে আক্ষেপও তার। কিছুদিন আগে বিমানবন্দর সড়কের ‘বনসাই’ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘কথিত সমালোচক-সুশীলরা কয়টা গাছ লাগিয়েছেন রাস্তায়! তারা সন্তানদের পড়ান ইংলিশ মিডিয়ামে, ব্লক-বাস্টারে দেখেন হলিউড মুভি, বলাকা ছেড়ে ওড়েন এমিরেটসে, মাসে চার-পাঁচবার চাইনিজ না খেলে যেন পেটের ভাতই হজম হয় না, ড্রইংরুমে শোভা পায় বিদেশি নামি-দামি শোপিস। তাদের ভাবখানা এমন, যেন দেশ উদ্ধারে ব্যস্ত?’

সাড়ে পাঁচ লাখ দেশি গাছের ভিড়ে একশটি বিদেশি বনসাইয়ে ক্ষতিটা কোথায়? উল্লেখ করেন তিনি।

জেইউ/বিএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।