ভালো আছে সেই শিশুটি
মা কতো আপন তা বোঝার মতো বোধশক্তি নেই ফাতেমার। তবে মাত্র ১০ মাস বয়সেই শিশু ফামেতা কিনা মায়ের অমানবিক আচরণের শিকার। তবে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। কান্নাকাটি নেই, দিব্যি খাচ্ছে, হাসছে ফাতেমা। খেলতে খেলতে ঘুমিয়েও পড়ছে। ফাতেমা’র চাহিদা পূরণের চেষ্টার কোনো কমতি রাখেনি ঢাকা মহানগর পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন্স সেন্টার।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত জন্মদাত্রী মায়ের সন্ধান মেলেনি। ফলে আদালতের নির্দেশনায় অভিভাবকত্ব নতুন কোনো দম্পতি পেতে পারেন। আর দু’দিন অপেক্ষা। বাবা-মায়ের অভাবও থাকবে না গত ৮ জুলাই বিমানবন্দরে ফেলে যাওয়া সেই শিশু ফাতেমার।
ফাতেমার দায়িত্ব বর্তায় রাজধানী তেজগাঁও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে। সেখানে ডিসি, এডিসি, এসি, ইন্সপেক্টরসহ সবার সার্বিক সহযোগিতা ও যত্নে ভালো আছে ফাতেমা।
সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনের দ্বিতীয় তলার চারদিকে লোহার গ্রিলে ঘেরা প্লে গ্রাউন্ড। সেখানে বেবী সাইকেল, কাঠের ঘোড়া ও দোলনা সাজানো। সেখানে বেবি সাইকেলে খেলছিল ফাতেমা।
উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন্স সেন্টারের উপ-কমিশনার (ডিসি) ফরিদা ইয়াসমিন জাগো নিউজকে বলেন, বাবা-মায়ের সন্ধান না মেলায় এখনও শিশুর নাম কাগজে-কলমে ফাতেমা। বিমানবন্দর থেকে উদ্ধারের সময় ওই শিশুর নাম এন্ট্রি করা হয়েছিল ফাতেমা নামে।
ফাতেমা এখানে অনেক ভালো আছে। ওর জন্য ডাক্তার, নার্স রয়েছেন। পরিচর্যা ও যত্নের জন্য আলাদা লোকও রয়েছে। গতকালও ওকে ভিটামিন ‘এ’ টিকা দেয়া হয়েছে।
ডিসি ফরিদা বলেন, প্রথমদিকে চুলকানিজাতীয় কিছু একটা সমস্যা হচ্ছিল। ডাক্তার দেখানোর পর সে সমস্যা আর নেই। পুলিশ সদস্যরা ওর এখন পরিচিত মুখ। ফাতেমা হাসে, খেলে, ঘুমায়। কান্নাকাটি করে না বললেই চলে। এমন একটা হাস্যোজ্জ্বল শিশুকে যে কেউ দেখলেই মায়া হবে। কিন্তু মায়ের চম্পট দেয়ার পেছনে এখনও রহস্য রয়ে গেছে।
জানা গেছে, গত ৮ জুলাই জর্ডান থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দেশে ফিরছিলেন জয়দেবপুর নিবাসী স্বপ্না বেগম। স্বপ্না জর্ডানে গৃহকর্মী হিসেবে গিয়েছিলেন। একই বিমানে শিশুটি ও তার মাও ফিরছিলেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে কাস্টমস থেকে মালপত্র নিয়ে বের হতে বিমানবন্দরের ক্যানওপি পার্কিং এলাকায় স্বজনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন স্বপ্না। এ সময় বিমানে পরিচয় হওয়া শিশুটির মা তাকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, 'আপা আমার শিশুটাকে একটু ধরেন। ভেতরে মালপত্র রয়েছে, নিয়ে আসছি।' আগে কথা হওয়ায় সরল বিশ্বাসে শিশুটিকে কোলে তুলে নিলেও আর ফেরেননি অজ্ঞাত সেই মা।
পরে স্বপ্না আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) এর সদস্যদের সহযোগিতায় শিশুটিকে বিমানবন্দর থানা হেফাজতে নেয়া হয়। ওইদিনই বিমানবন্দর থানায় একটি জিডি হয়। এরপর শিশুটিকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো হয়।
গত ২৫ জুলাই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফেলে যাওয়া ওই শিশুর প্রকৃত বাবা-মাকে খুঁজে বের করতে ঢাকার শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান পুলিশকে নির্দেশ দেন। আগামী ৯ আগস্টের মধ্যে শিশুটির প্রকৃত বাবা-মাকে খুঁজে না পাওয়া গেলে বাছাইপূর্বক কোনো দম্পতিকে শিশুটির দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে আদালত সূত্র।
উপ-কমিশনার (ডিসি) ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘কোনো মা তার সন্তানকে ফেলে চলে যেতে পারেন বলে বিশ্বাস করা যায় না। তবে হয়তো এমন কোনো সমস্যা তৈরি হয়েছিল যে কারণে ওই শিশুকে নিয়ে পরিবার, আত্মীয়-স্বজনের মুখোমুখি হতে সমস্যা হচ্ছিল। এমনও হতে পারে যে, শিশু কিংবা ওই মায়ের জীবনে কোনো ধরনের হুমকি তৈরি করতে পারে ভেবে মা শিশুকে রেখে চলে গেছেন। আমরা আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী যত্নেই দেখভাল করছি ফাতেমার। আগামী ৯ আগস্ট আদালতের নির্দেশে অভিভাবকত্ব বদলাবে ফাতেমার।
জেইউ/জেএইচ/এমএস