তিস্তা চুক্তি সমাধানে উদ্যোগী মোদি


প্রকাশিত: ১১:৫৪ এএম, ৩০ মে ২০১৫

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসন্ন বাংলাদেশ সফরে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো কথা না বললেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করে ওই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হবেন বলে জানিয়েছে ভারতের একটি প্রভাবশালী দৈনিক। দৈনিকটি আরো জানায়, মোদির এই আলোচনায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কোনো আপত্তি নেই।

শনিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দৈনিকটি জানায়, বাংলাদেশ সফর নিয়ে সম্প্রতি মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলি। বৈঠকে মোদি জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি সংসদে অনুমোদন পাওয়ার পরে সেই চুক্তি স্বাক্ষর করতেই ৬ জুন ঢাকা আসছেন তিনি।

তিনি মনে করেন, স্থলসীমান্ত চুক্তি করাটা মোটেই ছোটখাটো ব্যাপার নয়। এর ফলে দু’দেশের কয়েক লাখ মানুষের দীর্ঘ কয়েক দশকের সমস্যার সমাধান হবে। এ চুক্তি নিয়ে নানা রাজ্যে বহু মতপার্থক্য ছিল। সে সবের নিরসন ঘটিয়ে দু’দেশের মধ্যে সীমান্তরেখা চূড়ান্ত করাকে ঐতিহাসিক ঘটনা বলেই মনে করছে ভারত সরকার।

বৈঠকে মোদি আরো বলেন, স্থলসীমান্ত চুক্তির পরে যে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের প্রত্যাশা সব চেয়ে বেশি, সেটা অবশ্যই তিস্তা। এ নিয়ে জটিলতা কীভাবে কাটবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

বৈঠক শেষে মোয়াজ্জেম আলি জানান, ২০১১ সালে তিস্তা চুক্তির একটি খসড়া তৈরি হয়েছিল। তার ভিত্তিতেই দু’দেশের মধ্যে আলোচনা হয়। কিন্তু ওই খসড়া নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তার যুক্তি ছিল, যে সূত্র মেনে পানি বণ্টন চুক্তির কথা বলা হচ্ছে, তাতে পশ্চিমবঙ্গ, বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে এসে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর করতে চেয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। কিন্তু মমতার আপত্তির জেরে তাকে পিছিয়ে আসতে হয়। কেন্দ্র তাকে না-জানিয়ে চুক্তি নিয়ে অগ্রসর হয়েছে, এ অভিযোগে মনমোহনের সঙ্গে ঢাকা আসতেও অস্বীকার করেন মমতা। কিন্তু তিনি যে তিস্তা চুক্তির বিরোধী নন, সে কথা একাধিক বার বলেছেন মমতা। গত ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করে গেছেন তিনি।

মমতা জানান, তিস্তার জট ছাড়াতে আলোচনার মাধ্যমে কূটনৈতিক পথ নির্দেশিকা খুঁজে বের করার ব্যাপারে তার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু চুক্তিটা এমনভাবে করা হোক, যাতে পশ্চিমবঙ্গের কোনো সমস্যা না হয়। কিন্তু ঘটনা হলো, ২০১১ সালের খসড়া চুক্তির পরে নতুন করে আর কোনো খসড়া তৈরি হয়নি। ফলে সমাধানসূত্র এখনো অধরা।

দৈনিকটি জানায়, তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ শুক্রবার ফোন করে মমতাকে আশ্বাস দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থকে আঘাত করে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো চুক্তি দিল্লি করবে না।

অন্য দিকে বাংলাদেশ চাইছে, দু’দেশের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া অন্য নদীগুলোর পানি বণ্টন নিয়েও পারস্পরিক সমঝোতা হোক। দু’দেশের উপর দিয়েই গেছে এমন নদীর সংখ্যা ৫৪।

মোয়াজ্জেম আলি বলেন, গঙ্গা ও তিস্তা ছাড়া বাকি ৫২টি নদী নিয়েও দু’দেশের মধ্যে দ্রুত আলোচনা শুরু হওয়া উচিত। সে জন্য জয়েন্ট বেসিন ম্যানেজমেন্টকে কার্যকর করে তুলতে হবে।

তিনি আরো জানান, মোদির সঙ্গে মমতাও ৬ জুন সন্ধ্যায় ঢাকা আসবেন। পরদিন সন্ধ্যায় কলকাতায় ফিরে যাবেন। এদিন দু’দেশের মধ্যে স্থলসীমান্ত চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে। সেই অনুষ্ঠানে মোদির পাশে থাকবেন মমতা।

মোয়াজ্জেম আলি জানান, ৩৬ ঘণ্টার সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক করবেন নরেন্দ্র মোদি। রাতে তিনি সরকারি নৈশভোজে যোগ দেবেন।

তিনি আরো জানান, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর অবদানকে স্বীকৃতি দেবে শেখ হাসিনা সরকার। বাজপেয়ীর হয়ে ওই সম্মান গ্রহণ করবেন মোদি।’

বাংলাদেশ সরকার আয়োজিত এসব অনুষ্ঠানের পাশাপাশি মোদি ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমে যাবেন। সেখানে তাকে স্বাগত জানাবেন বেলুড় মঠের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুহিতানন্দ। এ ছাড়া ঢাকেশ্বরী কালীবাড়ি, শহীদ মিনার ও বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল মিউজিয়ামে যাওয়ার কথা রয়েছে।

এসকেডি/বিএ/আরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।