এই মরার যজ্ঞ ফুরাবে কবে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:৩৭ পিএম, ২৬ জুলাই ২০১৭
ছবি : মাহবুব আলম

‘এমন কষ্ট কি আর সহ্য হয়! এই মরার যজ্ঞ ফুরাবে কবে? এইটা কোনো শহরের চিত্র হতে পারে? শহরের রাস্তায় কোমর পানি। দিনের পর দিন এই ভোগান্তি নিয়ে আর পারছি না। ছেলেমেয়ের স্কুল না থাকলে শহর ছেড়ে দিয়ে বহু আগেই গ্রামে চলে যেতাম।’

এ দুঃখ মধ্যবয়সী আনোয়ারা বেগমের। বুধবার দুপুরে স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে রাজধানীর মৌচাক মোড়ে দাঁড়িয়ে আধাঘণ্টা। রাস্তা পার হতে না পেরে ক্ষোভ ঝাড়ছেন রাষ্ট্র ও নগর কর্তাদের ওপর।

malibag

শ্রাবণের ঢল রাত থেকে। সকালে বৃষ্টির মধ্যেই ভিকারুননিসা নূন স্কুলে মেয়েকে নিয়ে যান আনোয়ারা বেগম। স্কুল ছুটির পর রিকশায় এসে আটকা পড়েন মৌচাক মোড়ে। রাস্তায় কোমর সমান পানি থাকায় রিকশায় আর মালিবাগ রেলগেটে যেতে পারেননি। আধাঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে মা-মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজে একাকার। ভারী বর্ষণে ছাতায়ও রক্ষা পাননি তারা।

বৃষ্টিতে ভিজেই কথা হয় আনোয়ারার সঙ্গে। বলেন, উন্নয়নের নামে বছরের পর বছর নাগরিকদের এভাবে জিম্মি করতে পারে না। চার-পাঁচ বছর থেকে এই সড়কে চলার উপায় নেই। ফ্লাইওভার কবে চালু হবে, তারও কোনো খবর নেই। আর হলেই বা কি? সবাই তো ফ্লাইওভারে উঠতে পারবে না। যারা নিচ দিয়ে চলাচল করবে তাদের কি হবে? সামান্য বৃষ্টিতেই আটকে যেতে হয়। এভাবে কি জীবন চলে?

malibag

এদিন বৃষ্টির কারণে আটকা পড়ে শান্তিনগর মোড়ে বাস নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছেন আয়াত পরিবহনের চালক দেলবার আলী। বৃষ্টি আর পানি ঠেলে চিড়িয়াখানা থেকে শান্তিনগর মোড়ে আসতে সময় লেগেছে তার পৌনে তিন ঘণ্টা। কখন গুলিস্তান যেতে পারবেন, তার খবর মিলছে না দেলবারের কাছে।

তিনি বলেন, পাঁচ বছর থেকে এই রাস্তার এমন হাল দেখছি। রুট পারমিট এই সড়কে। চাইলেও অন্য সড়কে যাওয়ার উপায় নেই। আর অন্য সড়কেও তো একই দশা। ফ্লাইওভার, মেট্রোরেলের নামে সড়কে সড়কে যা চলছে, তার অভিশাপ থেকে কবে মুক্তি পাব তারই দিনক্ষণ গুণছি।

malibag

বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, সত্যিই যেন শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক এক অভিশপ্ত সড়ক। সড়কের মধ্যখানে বিশাল বিশাল পিলার পোঁতা। বৃষ্টির কারণে ফ্লাইওভারের কাজ বন্ধ। তবে ফ্লাইওভারের জন্য আনা ভারী যানবাহনগুলো সড়কের বেশিরভাগ জায়গা দখলে রেখেছে। রড, পাথর, বালুসহ অন্যান্য উপাদানও রাস্তাজুড়ে।

ফ্লাইওভারের কাজ চলছে, তাতেই যেন দায় শেষ। নিচের রাস্তায় আর নজর নেই। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যে চলাচল করেন তা যেন সহসাই ভুলে গেছে কর্তৃপক্ষ। রাস্তাজুড়ে খানাখন্দে ভরা। পানিতে ডুবে গেছে পুরো রাস্তা। আটকে পড়ছে শত শত পরিবহন। পায়ে হেঁটে চলার উপায়ও নেই। রিকশাই ভরসা। তবে খানাখন্দে পড়ে রিকশাও উল্টে পড়ছে। যেন এক দুর্বিষহ জনজীবন চিত্র মালিবাগ, মৌচাক ও শান্তিনগরে।

malibag

মৌচাক মার্কেটে একটি জুয়েলারি দোকানের কর্মচারী মিজান মাহমুদ। তিনি বলেন, মালিক প্রায় পথে বসে যাচ্ছে। ছয়জন কর্মচারীর মধ্যে দু’জনকে ছাঁটাই করেছে গেল বছর। আমাদেরও যায় যায় অবস্থা। ব্যবসার যে দশা তাতে তো আর কোনো উপায় নেই। একান্ত বিপদে না পড়লে মানুষ এই রাস্তায় আসতে চায় না। আর এমন বিপদের রাস্তায় আসবেই বা কেন?

এএসএস/ওআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।