‘ফ্ল্যাটটি নিজের না হলে বনশ্রী ছাড়তাম’

জসীম উদ্দীন
জসীম উদ্দীন জসীম উদ্দীন , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:১২ পিএম, ২৫ জুলাই ২০১৭

দুই সন্তান পড়ে গুলশানে। নিজের অফিস বাড্ডায়। রামপুরা ব্রিজ থেকে বনশ্রী-আমুলিয়ার সড়কটির বেহাল দশার কারণে সবকিছুতে হ-য-ব-র-ল অবস্থা তার। দীর্ঘ সময়ক্ষেপণ ও ভোগান্তি পেরিয়ে প্রতিদিন সন্তানদের স্কুলে ও স্ত্রীকে কর্মস্থলে পৌঁছে দিতে হয়। এরপর নিজের প্রতিষ্ঠানে আসতে হয়। ক্ষোভ প্রকাশ করে কামরুল ইসলাম নামে বনশ্রীর এ বাসিন্দা বলছিলেন, ‘ফ্ল্যাটটি নিজের না হলে বনশ্রী এলাকাই ছেড়ে দিতাম।’

বনশ্রী সি ব্লকের ১ নং রোডের একটি কেনা ফ্ল্যাটে পাঁচ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন তিনি। কামরুল ইসলাম বললেন, ‘গতবছর থেকে শুরু হয়েছে ভোগান্তি। যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে রামপুরা-আমুলিয়ার বনশ্রী অংশের সড়ক। দু’পাশ উঁচু থাকায় অল্প বৃষ্টিতেই ডুবে যাচ্ছে সড়কটি। সড়কে অসংখ্য গর্ত ও খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে পানিতে ডুবে গেলে যান চলাচল শুধু নয়, পথচারীদের জন্যও সড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। বনশ্রী ও রামপুরাবাসীর কাছে সড়কটি এখন যেন মরণফাঁদ।’

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সড়কটিতে সবসময় লেগে থাকছে যানজট। যান চলাচল স্থবির হওয়ায় বনশ্রী ও মেরাদিয়ার মানুষের ভোগান্তি এখন চরমে। ১০ মিনিটের রাস্তায় চলাচল করতে সময় লাগছে ঘণ্টারও বেশি। অচল সড়কটির বনশ্রী অংশের দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। রাস্তাটি পুনর্নির্মাণ তো দূরের কথা সংস্কারের উদ্যোগও নিচ্ছে না ডিএনসিসি। দিন দিন সড়কটিতে দুর্ঘটনা বাড়ছে। জনভোগান্তি ও যানজট কমাতে বাধ্য হয়ে মাঝেমধ্যেই রাস্তা বন্ধ রাখছে ট্রাফিক পুলিশ।

bb

বনশ্রী সি ব্লকের ১ নং রোডের ওই বাসিন্দা কামরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বনশ্রীতে বসবাস করা মানে এখন পাপ। ভোগান্তির শেষ নেই। মাত্র ১০ মিনিটের রাস্তা পেরুতেই ঘ্ণ্টারও বেশি সময় লাগছে। প্রাইভেটকার নিয়ে চলাচল করা কঠিন। ঝুঁকি নিয়ে মোটরসাইকেলে করে সন্তানদের স্কুলে দিয়ে আসছি। একেকটা গর্ত পার হই আল্লাহর নাম নিয়ে। আমার মতো এলাকার প্রত্যেকটি মানুষ ভোগান্তিতে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন বলেন, রাজউক কিংবা সওজ বলেন কেউ কোনো ভ্রুক্ষেপই করছে না’।

সোমবার রাতে ও আজ (মঙ্গলবার) দিনব্যাপী সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কটিতে হেলে-দুলে খুবই ধীরগতিতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে অসংখ্য যানবাহন। দীর্ঘপথে লেগে থাকে যানজট। যে কারণে রামপুরা ব্রিজে ওঠার আগে মেরুল বাড্ডাতেও চাপ পড়ে যানবাহনের।

পানি জমে থাকায় সড়কটির কোথায় গর্ত, কোথায় ভাঙা তা বোঝারও উপায় নেই। রাস্তাটির বেশ কটি স্থানে ভেঙে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনাও বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে রিকশা ও সিএনজি চলাচলে বেশি সমস্যা হচ্ছে। যাত্রীদের নেমে ঠেলে রিকশা পার করতে দেখা যায়। সিএনজি গর্তে পড়ে স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়।

bb

রিকশাচালক রশিদুল হক বলছেন, ‘বেডারা আইব, ভোড (ভোট) চাইব। ভোড শ্যাষ কাম শ্যাষ। বেডারা রাস্তা ঠিককরণের আর খবর লয় না। আমাগো কী যে কষ্ট তা দেখবার লোক কি এখন আছে?’

গুলশানে একটি কোম্পানির মার্কেটিং বিভাগের কর্মকর্তা পারভেজ আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বনশ্রী এলাকাতেই আমার কাজ। কিন্তু প্রতিদিন বনশ্রী কে-ব্লক থেকে অফিসে যেতে হয়। এরপর আবার ফিরতে হয় বনশ্রীতে। রাস্তার এতো বাজে অবস্থা যে, হাতে এক ঘণ্টার বেশি সময় নিয়ে বের হতে হয়। রাস্তাটির বেহাল দশা গত বছর থেকে। গত তিন-চার মাস থেকে অবস্থা খুব নাজুক। রাস্তা পুনর্নির্মাণ তো দূরের কথা সংস্কারেরও খবর নেই’।

bb

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাঝারি ওজনের যানবাহনের জন্য মাত্র দেড়বছর আগে নির্মাণ হয় রামপুরা-আমুলিয়া সড়কটি। কিন্তু যান চলাচলে অনুপযোগী হওয়ায় এক রিটের প্রেক্ষিতে সড়কটিতে ভারী যানবাহন চলাচল তিন মাসের জন্য নিষিদ্ধ করে উচ্চ আদালত। গত ৫ জুনের ওই আদেশে বলা হয়, ভারী যান চলাচলের ক্ষেত্রে বাধা প্রদান ও রাস্তাটি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েও রুল জারি করেন আদালত। কিন্তু এরপরও আদালতের দেয়া নির্দেশনা অমান্য করে রাস্তাটিতে চলাচল করছে ভারী যানবাহন। এক্ষেত্রে ভারী যান চলাচল বন্ধে সংশ্লিষ্ট ট্রাফিক পুলিশ, রাজউক, সড়ক ও জনপথ বিভাগ কিংবা ডিএনসিসির উদ্যোগও লক্ষ্য করা যায়নি।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অতিরিক্ত চিফ ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর এ বিষয়ে জাগো নিউজকে বলেন, ডেমরা-আমুলিয়া-রামপুরা সড়কটি হালকা ও মাঝারি ওজনের যানবাহনের জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল। ডেমরা-আমুলিয়া অংশটির কর্তৃত্বে সওজ রয়েছে। কিন্তু সড়কটির রামপুরা-বনশ্রী অংশ ডিএনসিসির অধীনে। যে কারণে পুনর্নির্মাণ কিংবা সংস্কার করতে হলে সিটি কর্পোরেশনকেই করতে হবে।

bb

এ ব্যাপারে ট্রাফিক পূর্ব বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মঈনুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, রাস্তায় যান চলাচলে শৃঙ্খলা রক্ষা করা পুলিশের কাজ, রাস্তা নির্মাণ নয়। রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কারে যথাযথ কর্তৃপক্ষ রয়েছে। কিন্তু রাস্তায় এসে যখন মানুষ যানজট ও চলাচলে ভোগান্তির শিকার হয় তখন আমাদের কিছু করার থাকে না।

তিনি বলেন, রাতের বেলা ভারী যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। বিশেষ করে বনশ্রী ও রামপুরা ডিআইটি সড়কে চলাচলকারী জনসাধারণ রয়েছেন বেশি ভোগান্তিতে। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে সড়কে ডিভাইডার বসিয়ে যান চলাচলে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অক্লান্ত চেষ্টা করে চলেছেন। কোথাও কোথাও লেগুনা ও সিএনজি চালকদের সঙ্গে নিয়ে ট্রাফিক সদস্যরা সড়কের গর্ত ভরাট করে চলাচলে উপযুগী করেছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আনোয়ারুল ইসলামের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

জেইউ/জেডএ/ওআর/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।