‘পেটের ক্ষুধা বৃষ্টি বাদল মানে না রে বাবা’
পড়ন্ত বিকেলে টিপ টিপ বৃষ্টি ঝরছে। লাঠি ভর করে গুটি গুটি পায়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন এক বৃদ্ধা। বয়স আনুমানিক ষাট বা পয়ষট্টি বছর হবে। মাথার উপর প্লাস্টিকের ছোট্ট একটি বস্তা। বৃষ্টির হাত থেকে রেহাই পেতে মাথা ও বুকে পলিথিন মুড়িয়েছেন। তবুও পরনের নীল রঙের শাড়ির বেশির ভাগই ভিজে গেছে। এমন অবস্থায় ডান হাতে লাঠি আর বাম হাতে একটি পোটলা আকড়ে ধরে আছেন তিনি।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশান গুদারাঘাটের অদূরে লেকের পাড়ের রাস্তায় এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। একজন বয়োবৃদ্ধকে বৃষ্টিতে এভাবে ভিজতে দেখে পথচারীদের অনেকেই বার বার তাকাচ্ছিলেন।
অন্য সবার মতো কৌতুহলি হয়ে বৃদ্ধার সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, নাম সখিনা। বাড়ি শরিয়তপুর। পেশায় ভিক্ষুক। মঙ্গলবার সকাল থেকে বিভিন্ন মহল্লায় ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করেছেন। ভিক্ষা হিসেবে কেউ চাউল, কেউ রুটি আবার কেউবা নগদ টাকা দিয়েছেন। বাম হাতের পোটলায় ভিক্ষার সেই চাল-রুটি রেখেছেন। এগুলো যেন ভিজে না যায় তাই এক মেমসাহেবের কাছ থেকে পলিথিনের টুকরো চেয়ে নিয়েছেন। এখন সেটিই মাথায় ছাতা হিসেবে ব্যবহার করছেন।
এই বয়সে বৃষ্টিতে ভিজছেন, স্বামী সন্তান কেউ নেই? -এমন প্রশ্নের জবাবে বৃদ্ধা জানান, ‘বৃষ্টিতে ভিজলে অসুখ-বিসুখ অইবো (হবে) জাইনাও রাস্তায় নামতে অয়। কায়ন (কারণ), পেটের ক্ষুধা বৃষ্টি বাদল মানে নারে বাবা।’
তবে স্বামী-সন্তানদের বিষয়ে তিনি কিছু বলতে নারাজ তিনি। চলে যাওয়ার সময় শুধু বললেন, ‘সবার নসিবে (ভাগ্যে) স্বামী-সন্তানের রোজগার থাকে না।’
এমইউ/আরএস/পিআর