থেমে থেমে বৃষ্টিতে বাড়ছে চিকুনগুনিয়া-ডেঙ্গু আতঙ্ক
এডিস মশাবাহিত চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় মহা আতঙ্কে নগরবাসী। সরকারি হিসাবে চিকুনগুনিয়ায় ৭৩৭ এবং ডেঙ্গুতে ৭১৬ জন আক্রান্তের দাবি করা হলেও সাধারণ মানুষের ধারণা ভিন্ন। তাদের দাবি, বাস্তবে উভয় রোগেই আক্রান্তের সংখ্যা বহুগুণ বেশি। এ বছর ডেঙ্গুতে দুজনের মৃত্যুর নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে।
‘চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হলে মৃত্যুর ভয় নেই’ বলা হলেও মানুষের মধ্যে এখন মৃত্যু আতঙ্কও ছড়িয়ে পড়েছে। সর্বশেষ রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অভিনেতা আবদুর রাতিন চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন- এমন দাবি তুলেছেন স্বজনরা।
বর্তমানে রাজধানীসহ সারাদেশে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, থেমে থেমে বৃষ্টি চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা প্রজননের ভরা মৌসুম। এ সময় ফুলের টব, প্লাস্টিকের পাত্র, টায়ার ও এয়ারকন্ডিশনসহ বিভিন্ন স্থানে পরিষ্কার পানি জমে। এ পানিতেই বংশ বিস্তার করে এডিস মশা।
এ কারণে থেমে থেমে বৃষ্টি হলেই নগরবাসীর মনে চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর আতঙ্ক বেড়ে যায়।
মহাখালীর রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের আইইডিসিআর পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারের উপদেষ্টা ডা. মোশতাক হোসেন বলেন, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হবে। ওই সময় পর্যন্ত চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যাবে। তার দাবি, বর্তমানে চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা গত কয়েকদিনের তুলনায় কম।
ডা. মোশতাক হোসেন দাবি করে আরও বলেন, আগামী দু-চার বছরে দেশে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা কমে যাবে। এ বছরের মতো প্রকোপ আর দেখা যাবে না। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, যদি কোনো দেশে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করে সে দেশে পরবর্তী দু-চার বছর এর প্রকোপ আর লক্ষ্য করা যায় না।
তিনি বলেন, আইইডিসিআরে চিকুনগুনিয়া কন্ট্রোল সেন্টার খোলা হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চিকুনগুনিয়া সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও চিকিৎসা পরামর্শ দেয়ার জন্য ডাক্তার ও সহযোগী লোকজন থাকেন। তারা টেলিফোনে রোগের নমুনা (র্যাশ ওঠা, চুলকানো ও জ্বর) শুনে প্রয়োজন অনুসারে রক্তের নমুনা দিতে এখানে আসার পরামর্শ দেন। সম্পূর্ণ বিনা খরচে পিসিআর (পলিমার চেইঞ্জ রিঅ্যাকশন) মেশিনে এ পরীক্ষা করা হয়।
আইইডিসিআর ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত মোট রোগীর দুই-তৃতীয়াংশ পুরুষ এবং এক-তৃতীয়াংশ হলেন নারী। মোট ৬৯০ রোগীর মধ্যে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে দেখা গেছে,৬৪৩ জনের গিঁটে ব্যথা ছিল। শরীরে র্যাশ উঠেছে এমন রোগীর সংখ্যা ৪৬৩। তবে মোট রোগীর মধ্যে কাশি ছিল এমন রোগীর সংখ্যা মাত্র ৬৫।
গত ১৭ এপ্রিল থেকে আইইডিসিআর ল্যাবরেটরিতে রক্তের নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে চিকুনগুনিয়া শনাক্তের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এপ্রিলে ১০ জন, মে মাসে ২৮৫, জুনে ২২৬ এবং ১৭ জুলাই পর্যন্ত ১৬৯ জন চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ন্যাশনাল হেলথ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ও রোগ নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ইনচার্জ ডা. আয়েশা আখতার বলেন, ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হয় মে-জুনে। রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে মে মাসে ১২১ জন, জুনে ২০২ এবং ১৬ জুলাই পর্যন্ত ৮৪ জন রোগী ভর্তি হন। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত একজন মে মাসে মিটফোর্ড হাসপাতালে এবং চলতি মাসে একজন চট্টগ্রামে মারা যান বলে তিনি নিশ্চিত করেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি বছর ৭১৬ ডেঙ্গু রোগী সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৬৯ জন চট্টগ্রামের। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়েও বেশি। কারণ অনেক বেসরকারি ক্লিনিক বা হাসপাতালের তথ্য সরকারের কাছে নেই।
এমইউ/এমএআর/আরআইপি