ডিসেম্বরে স্মার্ট কার্ড
আগামী ডিসেম্বরের শেষদিকে দেশের সব নাগরিকদের পর্যায়ক্রমে স্মার্ট কার্ড দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৃহস্পতিবার জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন বিধিমালা-২০১৪-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনের পর এমনটাই জানিয়েছে ইসি।
নতুন বিধিমালা অনুসারে, হারানো ও নবায়নকৃত ছবিযুক্ত জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পেতে দিতে হবে জরিমানা। এ ছাড়া সাধারণ ও জরুরি আইডি পেতে ভোটারকে গুণতে হবে অতিরিক্ত ফিস। আর ভোটারযোগ্য ব্যক্তি চাইলে কমিশনে, স্থানীয় কার্যালয়ে অথবা নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব ওয়েবসাইটে অনলাইনে ভোটার হওয়ার আবেদন করতে পারবেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে তার নিজ কক্ষে অনুষ্ঠিত কমিশনের বৈঠকে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন বিধিমালা-২০১৪-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে অংশ নেন নির্বাচন কমিশনারগণ, কমিশন সচিবালয়ের সচিব, ইসির আইন শাখার যুগ্ম সচিব এবং এনআইডি ডিজি।
আইডিয়া (আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাক্সেস টু সার্ভিসেস) নামের এই প্রকল্পের আওতায় আগামী ডিসেম্বরের শেষদিকে সব নাগরিকদের পর্যায়ক্রমে স্মার্ট কার্ড দিতে চায় কমিশন। এ জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১১ সালের ২১ জুলাই বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ১ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকার একটি ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করে।
আগামী সপ্তাহে অনুমোদিত এই খসড়া প্রস্তাবনাটি এসআরও জারির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এর পর প্রজ্ঞাপন জারি করে স্মার্ট কার্ডের কার্যক্রম শুরু হবে।
বিনামূল্যে প্রথমবার স্মার্ট কার্ড পাওয়ার বিধান এ খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে একটি কার্ডের পেছনে ইসির সম্ভাব্য ব্যয় হবে প্রায় ২০০ টাকা। এই কার্ডের মেয়াদ হবে অন্তত ১০ বছর।
এর আগে গত ৭ মে কিছু অভিমত দিয়ে আইন মন্ত্রণালয় বিধিমালাটি ইসিতে ফেরত পাঠায়। এ বিধিমালাতে ছিল, স্মার্ট কার্ড পাওয়ার পর প্রথমবার হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলে জরিমানা ৫শ’ টাকা, দ্বিতীয়বার ১ হাজার টাকা এবং পরবর্তী যে কোনো বারের জন্য ২ হাজার টাকা জমা দিয়ে নতুন আইডি উঠাতে হবে।
তবে জরুরিভিত্তিতে পরিচয়পত্র পেতে হলে ৪ হাজার টাকা জমা দেয়ার বিধান ছিল। আর নবায়ন করতে হলে ২৫০ লাগত। তবে নবায়ন ও হারিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নির্ধারিত অতিরিক্ত ফিসের ক্ষেত্রে আপত্তি ছিল আইন মন্ত্রণালয়ের। তারা এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতির প্রস্তাব করেছিল।
পরবর্তীতে অর্থ মন্ত্রণালয় ফিস কমিয়ে, জাতীয় পরিচয়পত্র নবায়ণের ক্ষেত্রে সাধারণ ১০০ টাকা, জরুরি ১৫০ টাকা, হারানো বা কোনো কারণে নষ্ট হলে প্রথমবারের জন্য ২০০ টাকা, জরুরি ৩০০ টাকা, দ্বিতীয়বার ৩০০ টাকা, জরুরি ৫০০ টাকা এবং পরবর্তীতে যে কোনো বারের জন্য সাধারণ ৫০০ টাকা এবং জরুরি ১০০০ টাকা নির্ধারণ করে।
এ ক্ষেত্রে জরুরি আবেদনের ক্ষেত্রে ৭ কার্যদিবস এবং সাধারণ আবেদনের ক্ষেত্রে আবেদন করার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অণুবিভাগের প্রকল্প পরিচালক (অপারেশন) মো. মহাসীন আলী বলেন, স্মাট কার্ড নবায়ন বা হারিয়ে গেলে পুনরায় এটি পেতে আগে যে ফিস নির্ধারণ করা হয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয় কিছুটা কমানোর পরামর্শ দিয়েছিল। মন্ত্রণালয়ের অভিপ্রায় অনুযায়ী কাজের ধরন বিবেচনায় কিছুটা অর্থ কমিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার কমিশন সভায় তা অনুমোদন করেছে।
বর্তমানে এক পৃষ্ঠায় নাম, পিতা ও মাতার নাম, জন্ম তারিখ ও আইডি নম্বর এবং অপর পৃষ্ঠায় ঠিকানা-সংবলিত লেমিনেটিং করা কার্ড পাচ্ছেন ভোটাররা।
তবে, স্মার্ট কার্ডে নাগরিকের সব তথ্য থাকবে। এমনকি বাংলায় নামের পাশাপাশি ইংরেজি নাম অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। বিদেশিদের সুবিধার্থে এ বিধান সংযোজন করেছে ইসি। এ ছাড়াও ৪ উপ-বিধি (১), (২) ও (৩) এ যাহাই থাকুক না কেন, ভোটার হওয়ার যোগ্য নন এ সকল নাগরিকের পরিচয় নিবন্ধন এবং জাতীয় পরিচয়পত্রও প্রদানের জন্য দেশব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে এনআইডি নিবন্ধন বিধিমালায়।
বর্তমানে ৯ কোটি ২০ লাখের বেশি নাগরিক ভোটার তালিকাভুক্ত রয়েছেন। ২০০৭ সালে এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন সেনাবাহিনীর সহায়তায় ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণের কাজ শুরু করে। দেশের সব নাগরিককে জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার বিধান রেখে গত বছর ৬ অক্টোবর ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (সংশোধন) বিল, ২০১৩’ সংসদে পাস হয়।
আইনে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় নাগরিকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা তথ্য-উপাত্ত তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সংরক্ষণ ও গোপনীয়তা রক্ষার বিধান রাখা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা নির্বাচন কমিশনের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী বিনা অনুমতিতে ভোটার তালিকা বা জাতীয় পরিচয়পত্র-সংক্রান্ত তথ্য বা উপাত্তের বিষয়ে গোপনীয়তা লঙ্ঘন করলে শাস্তি সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান করা হয়েছে।