‘সুন্দরবন রক্ষা আন্দোলন অব্যাহত থাকবে’


প্রকাশিত: ০৭:০৯ এএম, ০২ জুলাই ২০১৭
ফাইল ছবি

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর বার্ষিক সাধারণ অধিবেশনের বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সভায় যদি রাজনৈতিক বিবেচনায় রামপাল প্রকল্পের পক্ষে বা বনবিরোধী ভুল সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, তা হবে দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য।

এ সভা থেকে ফলাফল নেতিবাচক হলে সুন্দরবন রক্ষায় আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে ‘সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি’ ও ‘বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন’ (বাপা)।

রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা রিপোর্টারস ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ ঘোষণা দেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, সুন্দরবন রক্ষা আন্দোলনের কোর গ্রুপ সদস্য ও বাপার সহ সভাপতি রাশেদা কে চৌধুরী।

ইউনেস্কোর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি দুই বছর অন্তর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আজ থেকে পোল্যান্ডে শুরু হওয়া সংস্থার সাধারণ অধিবেশনে বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির পক্ষ থেকে একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে। বাপার ধারণা আলোচনার পর এই বিশ্ব সংস্থা রামপাল ও অন্যান্য বনবিনাশী বিষয় নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানাবে।

লিখিত বক্তব্যে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ইতোমধ্যে দেশীয় ও বিদেশি, সর্বাধুনিক ও সঠিক বিজ্ঞানভিত্তিক, অভিজ্ঞ ও নিরপেক্ষ বিজ্ঞানী এবং অর্থনীতিবিদ কর্তৃক রামপাল প্রকল্প বিষয়ে ১২টি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। যা সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি গত দুই বছরে প্রকাশ করেছে। তার সব তথ্য সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে দেশবাসী জেনেছেন।

বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে, রামপাল প্রকল্পের কারণে সেখানকার পানি-মাটি-ফসল-বন-মৎস্য-বনের গাছপালা যাবতীয় রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া, জাহাজ চলাচল-কয়লা পরিবহন-নদী ড্রেজিংজনিত দূষণ ও জনস্বাস্থ্য-অর্থনৈতিক-মানবাধিকার সংকট প্রভৃতি।

তিনি বলেন, আমাদের বা ভারতীয় সরকার এসবের কোনো বিজ্ঞানসম্মত সুনির্দিষ্ট উত্তর দেননি। আমরা পরিষ্কার দেখছি, সরকারই সঠিক বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য-যুক্তি ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রস্তাবিত আধুনিক যন্ত্রপাতি থেকে ২০-৩০ বছর পেছনে রয়েছে। তাদের সব সিদ্ধান্তই রাজনৈতিক বিবেচনা থেকে। সরকারি এমন আচরণে সারাদেশের ও বিশ্বের সব সুন্দরবন ও পরিবেশপ্রেমী মানুষই উদ্বেগে দিন অতিবাহিত করছেন। দু` চারজন স্বেচ্ছা-বিভ্রান্ত মানুষ বাদে দেশের শতভাগ মানুষ রামপাল প্রকল্পের সম্পূর্ণ বিরোধী।

Meeting

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, আমরা আশা করছি আজকের সভায় ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি বৈঠকে সর্বাধুনিক বিজ্ঞানসম্মত তথ্য-যুক্তি এবং সুন্দরবনের নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ, ভারত ও সারাবিশ্বের কোটি কোটি মানুষের উদ্বেগ, আবেগ ও ভালবাসার গুরুত্বপূর্ণ দিকটিকে বিবেচনায় রেখেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

তিনি বলেন, অপার সৌন্দর্যময় ও সম্পদশালী, আমাদেন প্রাণপ্রিয় অনন্য সুন্দরবন জাতিসংঘের ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ তালিকাভুক্ত হোক তা আমরা আমাদের মন থেকে চাই না। কারণ তা এই বন, আমাদের সরকার ও দেশের জন্য হবে অপমানজনক।

১৯৭২ সালের ১৬ জুলাই সুন্দরবন রক্ষায় বঙ্গবন্ধুর দেওয়া একটি বক্তব্য উল্লেখ করে রাশেদা কে. চৌধুরী বলেন, পাঠ্যপুস্তকে একদা সুন্দরবন নামে একটি বন ছিল এটা দেখতে চাই না।

বাপার সহ সভাপতি সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ভারতের গুজরাটে সুন্দরবনের মতো একটা প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। শ্রীলঙ্কাতেও এরকম একটি প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। প্রতিটি দেশের গণতান্ত্রিক সরকার নাগরিক সমাজের উদ্বেগ বিবেচনা করে প্রকল্প বাতিলও করে থাকে। প্রকল্পটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে নেওয়া হয়েছে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে বাতিলও হতে পারে। আবার বাতিল না করাও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।

সংবাদ সম্মেলনে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ও বাপার সাধারণ সম্পাদক ডা. মো আবদুল মতিন রামপাল প্রকল্প নিয়ে সরকারকে প্রকাশ্যে বিতর্কে বসার আহ্বান জানান।

এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য এম এম আকাশ ও ঢাবির আরেক অধ্যাপক বদরুল ইমাম প্রমুখ।

এমএম/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।