মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ১০৭তম জন্মদিন আজ


প্রকাশিত: ০৩:৪৪ এএম, ১৯ মে ২০১৫

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সবেমাত্র শেষ হয়েছে। চারপাশে তারই রেখে যাওয়া দগদগে ক্ষতচিহ্ন। ঠিক এমন এক সময়ে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা সাহিত্যে ধূমকেতুর মতো আবির্ভাব ঘটেছিল। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯০৮ সালে আজকের এই দিনে সাঁওতাল পরগণার দুমকা শহরে। সে হিসেবে আজ তার ১০৭তম জন্মদিন। তার ভালো নাম প্রবোধকুমার। ডাকনাম মানিক। পরবর্তীতে এ নামেই তিনি পরিচিতি পান। প্রথম গল্প ছাপতে দেন এ নামেই।  সেই থেকে আসল নাম চাপা পড়ে যায়। পেশাজীবনের প্রথম দিকে তিনি পত্রিকায় সহ-সম্পাদকের চাকরি করেন। পরে অবশ্য প্রকাশনা ব্যবসাও কিছুদিন করেছেন। বাংলা সাহিত্যে তিনি ছিলেন প্রথম স্বার্থক জীবনবাদী শিল্পী।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন সেই আশাবাদী জীবনের সচেতন শিল্পী। তাই তাঁর উপন্যাসে ধ্বনিত হয়েছে সমকালীন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত বাঙালির আশাদীপ্ত জীবনচেতনার চঞ্চল প্রেরণা ও তীব্র বেদনাবোধ। বাংলা সাহিত্যের ধারায় তার উপন্যাস, বক্তব্য ও প্রকরণ ব্যক্তিত্বমণ্ডিত। তিনি তার লেখায় মানুষের মনোবিশ্ব ও বহির্বাস্তবতার সঙ্গে নিজস্ব জীবনাবেগ ও তত্ত্বাবেগের সুষম সমন্বয় সাধনের অসাধারণ দক্ষতারও পরিচয় দিয়েছেন।

আর এ কারণেই তাঁর উপন্যাসের বিন্যাস যেমন স্বতন্ত্র তেমনি বিশেষত্বপূর্ণ। এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই রাবীন্দ্রিক উত্তরাধিকারী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘দিবারাত্রির কাব্য’ শিল্প-চেতনার স্বাতন্ত্র্যময় সম্ভাবনাকেই ধারণ করে। ‘মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি চরিত্র’ শিরোনামে আহমদ ছফা লিখেছেন : ‘‘বাংলা সাহিত্যে ‘পদ্মা নদীর মাঝি’উপন্যাসটির কোনো জুড়ি নেই। এই উপন্যাসের একটি চরিত্রে মানিকবাবু যে সুগভীর ইতিহাসবোধ, জীবন-অভিপ্সা এবং মনীষার পরিচয় দিয়েছেন, বোধকরি চরিত্র-সৃজন-কুশলতায় তারও কোনো জুড়ি নেই।

‘পদ্মা নদীর মাঝি’ উপন্যাসটির কথা উঠলেই কুবের, মালা, কপিলা, রাসু, গণেশ ইত্যাকার মানুষদের মুখগুলো আপনা-আপনিই চোখের সামনে ভেসে ওঠে। মানিকবাবু তেমন শিল্পী (বিশেষ করে ‘পদ্মা নদীর মাঝিতে’) যা স্পর্শ করেছেন, জীবন্ত করে তুলেছেন।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যের মূল উপজীব্য মানবতাবাদের জয়গান। তাঁর উপন্যাসে যে গভীর সত্য প্রকাশিত হয়েছে তার স্বরূপ মানুষের প্রতি ভালোবাসা। এই ভালোবাসার চিত্র অঙ্কন করেছেন পদ্মাপাড়ের জেলে-মাঝিদের জীবন এবং তাদের সুখ-দুঃখ নিয়ে। আর কোনো লেখক এমন তীক্ষ্মভাবে, এমন মমতার রসে সিক্ত হয়ে ওদের জীবন-চিত্র আঁকেননি।

বিষয় ও প্রকরণে তিনি যেমন নিরীক্ষাধর্মী ও ব্যতিক্রম তেমনি জীবনের গভীরতার স্বরূপ উন্মোচনেও উৎসুক ছিলেন। তাঁর উপন্যাস মানেই জীবনের গভীর দর্শন। এ কারণে সমালোচক নারায়ণ চৌধুরী বলেছেন : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভ্যন্তরিক রিয়ালিজম ঘেঁষা মনোভাব তাঁকে শিল্পজীবনের সৌন্দর্যের আদর্শ থেকে দৃষ্টিগ্রাহ্যভাবেই বিচ্যুত করেছে। এমনকি মধ্য ও শেষের দিকের লেখায় তিনি সচেতনভাবেই অসুন্দরের পূজারী হয়ে উঠেছিলেন বললেও অন্যায় হবে না।

শরৎচন্দ্রের পরে আরও অনেকেই উপন্যাস রচনায় কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু বলা যায়,  শরৎচন্দ্রের পরে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ই অধিক জনপ্রিয় ছিলেন।

লেখালেখি নিয়ে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, লেখা ছাড়া আর অন্য কোন উপায়েই যে সব কথা জানানো যায় না সেই কথাগুলি জানাবার জন্যেই আমি লিখি। অন্য লেখকেরা যাই বলুন, আমার এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, তাঁরা কেন লেখেন সে-প্রশ্নের জবাবও নেই। চিন্তার আশ্রয় মানসিক অভিজ্ঞতা। ছেলেবেলা থেকেই আমার অভিজ্ঞতা অনেকের চেয়ে বেশী। প্রতিভা নিয়ে জন্মগ্রহণের কথাটা বাজে। আত্মজ্ঞানের অভাব আর রহস্যাবরণের লোভ ও নিরাপত্তার জন্য প্রতিভাবানেরা কথাটা মেনে নেন। দান করি বলা ঠিক নয়-পাইয়ে দিই। আমার লেখাকে আশ্রয় করে সে কতকগুলি মানসিক অভিজ্ঞতা লাভ করে-আমি লিখে পাইয়ে না দিলে বেচারী যা কোনদিন পেতো না।

তার লেখা উপন্যাসের সংখ্যা ৩৮টি আর গল্প ১৯০টির মতো। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে লেখক মৃগী রোগে আক্রান্ত ছিলেন যা পরবর্তী কালে তা জটিল অবস্থায় গমন করে। অবশেষে দীর্ঘদিন রোগভোগের পর করলে ৩রা ডিসেম্বর ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যু ঘটে।

জেআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।