জীবনের মানে সেথায় অপ্রতিরোধ্য
বাঙালি একটু বেশিই অাবেগপ্রবণ। যে অাবেগ স্বজনের প্রতি স্বজনের ভালোবাসার বাসনা তীব্র করে তোলে। যে অাবেগ জীবনের মানে অপ্রতিরোধ্য করে তোলে। নইলে কি আর বাড়ি ফিরতে ওভাবে নাড়িতে টান পড়ে!
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শান্তির ঘরে ফিরতে শুরু করেছে রাজধানীবাসী। ইট-পাথরের প্রকোষ্ঠে জীবন যখন অসহনীয়, তখন ঈদের ছুটি পেয়ে অানন্দ যেন ধরছে না। সে অানন্দে ঘরমুখো মানুষেরা যেন হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। তাদের যে কোনো উপায়ে বাড়ি ফিরতে চাই-ই!
গেল সপ্তাহ থেকে যানবহনগুলোয় ভিড় বাড়তে থাকলেও বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে চিত্র পাল্টে যায়। যাত্রীদের ঢল নামে রেলস্টেশন, বাস স্ট্যান্ড এবং লঞ্চ ঘাটগুলোয়।
তবে শুক্রবার সকাল থেকে রাজধানীর রেলস্টেশনগুলো বেসামাল হয়ে পড়েছে। তিল ধরার ঠাঁই নেই কমলামপুর এবং বিমানবন্দর রেল স্টেশনে। টিকিট হাতে নিয়েও অনেকে ট্রেনে উঠতে পারছে না। গায়ের জোরই এখন মূখ্য হয়ে উঠছে ট্রেনে উঠতে পারার বেলায়।
ট্রেনের ভেতর যা, ছাদেও তা। ভেতরে দাঁড়ানোর জায়গা নেই। জায়গা নেই ছাদেও। পায়ের উপর পা রাখা মানুষেরা সামান্য নড়তেও পারছেন না। একই দশা ছাদেও। সামান্য নড়লেই যেন বিপত্তি।
বিশেষ করে উত্তরবঙ্গগামী প্রতিটি ট্রেন অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ঢাকা ছাড়ছে। ভেতরে জায়গা না পেয়ে অনেকে ঢাকামুখি ট্রেনগুলোয় বিমানবন্দর থেকেই ছাদে উঠছে। কমলাপুরে অাসতেই ছাদ কানায় কানায় ভরে যাচ্ছে। এরপর কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়ার পর ফের বিমানবন্দর এবং জয়দেবপুর স্টেশন থেকে হাজার হাজার যাত্রী ছাদের ওপরে ঠাঁই নিচ্ছেন। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বেহাল দশার কারণে এবারে ট্রেনের ওপর বেশি চাপ পড়ছে। যে চাপ গিয়ে পড়ছে ট্রেনের ছাদেও।
ছাদে ওঠার বেলায় তীব্র ঝুঁকি থাকলেও একে অপরের সহায়তা নিয়ে উঠতে পারছে। ট্রেনের ছাদে উঠছে নারী, শিশুরাও। তবে নামার বেলায় বিভিন্ন স্টশনে ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে স্থানীয় মানুষেরা। অসংখ্য মই নিয়ে মানুষ স্টশনের পাশে অবস্থান করছেন। ট্রেন এসে দাঁড়ানো মাত্রই ওই সব মই পেতে দেয়া হয়। মই বেয়ে যে কোনো বয়সী মানুষেরা সহসা নামতে পারছেন। তবে মইয়ে পা রাখলে বকশিশও গুণতে হয় জন প্রতি পাঁচ টাকা, দশ টাকা হারে।
ট্রেনের ছাদে ওঠায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও রেল বিভাগের কর্মকর্তারা যেন অনেকটাই অসহায়। বাধা দেয়ার কোনো উপায় নেই। যাত্রীদের অসহায়ত্বে তারাও অসহায়।
নীলফামারী জেলার ডোমারে যাবেন নওশাদ অালী। রাজমিস্ত্রির কাজ করেন রাজধানীর মোহাম্মদপুর। দুই বন্ধু মিলে ভোরে এসেছেন বিমানবন্দর স্টেশনে। টিকিট কাটতে পারেননি নওশাদ।
বলেন, ছাদে যাবো। কোনো উপায় নেই। বাসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার চাইতে ট্রেনের ছাদেই ভালো।
‘এভাবে ঝুঁকি নিয়ে ছাদে যাওয়া ঠিক কিনা’ জানতে চাইলে বলেন, রাষ্ট্র ব্যর্থ হলে তো অামরা বসে থাকতে পারি না। সরকারের জোড়াতালির সমাধান যে সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দেয় না, ঈদের অাগের ট্রেনযাত্রার পরিস্থিতি তারই প্রমাণ। গেল বছর অামাদের চোখের সামনে ছাদ থেকে পড়ে একজন মারা গেছেন। এরপরেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছি। এরই নাম জীবন।
এএসএস/এআরএস/আরআইপি