মানে নয়, নামেই গলা কাটছে আড়ং


প্রকাশিত: ০৬:৪৮ পিএম, ২২ জুন ২০১৭

নামেই দাম। মানের সঙ্গে দাম আর মিলছে না খ্যাতিমান দেশীয় পণ্য ‍উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আড়ংয়ে। ক্রেতাদের অভিযোগ- মানে নয়, আড়ং এখন গলা কাটছে নামে। বিশ্বাস এবং আস্থার প্রতীক আড়ং এখন প্রতারণার প্রতিষ্ঠানেই রূপ নিয়েছে বলে তাদের ক্ষোভ।

রাজধানীর বিভিন্ন শাখা ঘুরে দেখা গেছে, আড়ংয়ের পণ্যের দাম এবং মান নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে নানা ক্ষোভ। অনেকে নামে কিনছেন বটে, তবে কেউ কেউ আবার মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

বুধবার আড়ংয়ের গুলশান শাখা থেকে পাঞ্জাবি কিনে বের হচ্ছিলেন শামীম আহমেদ। তিন ভাইয়ের জন্য পাঞ্জাবি এবং মায়ের জন্য শাড়ি কিনেছেন তিনি।

কথা হয়, ঈদের কেনাকাটা প্রসঙ্গে। বলেন, ‘আড়ং আমাদের কাছে বিশ্বাসের প্রতীক। বাঙালিয়ানায় আড়ংয়ের কোনো তুলনা হয় না। রুচি আর ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ নিয়েই আড়ংয়ে পণ্য কিনতে আসি। কিনছি বহুবছর ধরেই। আড়ংকে আমার নিজের প্রতিষ্ঠান বলেই মনে করি। তবে এখন পণ্যের মান এবং দাম নিয়ে রীতিমতো বিরক্ত।’

শাড়ি কিনে মন উঠলেও পাঞ্জাবি কিনে পকেট ফাঁকা হয়েছে বলে জানান তিনি। বলেন, ‘এটি বিশ্বাসের সঙ্গে ডাকাতি ছাড়া আর কিছুই না। তিন পাঞ্জাবিতে ১৩ হাজার টাকা গুণতে হয়েছে। অথচ মান কোনোভাবেই দামের সঙ্গে যায় না। আরও মার্কেটের খবর রাখি। আস্থার সুযোগ নিয়ে এমন বাড়াবাড়ি রকমের মূল্য নিলে আড়ং থেকে মুখ ফেরানো ছাড়া উপায় থাকবে না।’

কথা হয় বসন্ধুরা সিটির আড়ং শো-রুমে ঈদবাজার করতে আসা মিশুর সঙ্গে। বলেন, ‘আড়ংয়ের পণ্য ভালো লাগে। ডিজাইন, রং সবই মনের মতো। তবে এই ভালো লাগার সঙ্গে কেন যেন মনে হচ্ছে আড়ং এখন প্রতারণা করছে। কিছু ভালো পণ্য রেখে তার সঙ্গে মানহীন পণ্যও রেখেছে। আড়ংয়ের শাড়ি এখনও নারীর মন মাতায়। তবে আমি আর আড়ং থেকে পাঞ্জাবি কিনব না। গতবার একটি রঙিন পাঞ্জাবি নিয়েছিলাম স্বামীর জন্য। সপ্তাহ পরেই রং উঠে পরনের অযোগ্য হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, এখানে যারা আসেন তারা আড়ংয়ের পণ্যের প্রতি বিশ্বাস নিয়ে আসেন। এখন এই বিশ্বাস ঘাটতি হলে তো ক্রেতারা মুখ ফেরাবেই।

আড়ংয়ের পাঞ্জাবি কিনে ঠকেছেন আদনান নামের এক সাংবাদিকও। তিনি বলেন, যে টাকায় পাঞ্জাবি কিনেছি, সে টাকায় অন্য কোনো ব্র্যান্ডের পাঞ্জাবি নিলে অনেক লাভ করতে পারতাম। ঈদবাজারের সুযোগ নিয়ে অচল পণ্যও চালিয়ে দিচ্ছে আড়ং।

তবে আড়ংয়ের চিফ অপারেটিং অফিসার আশরাফুল আলম পণ্যের মানের ব্যাপারে ক্রেতাদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তিনি বলেন, ক্রেতার মেজাজ এবং রুচিকে গুরুত্ব দিয়েই আমাদের পণ্য। ক্রেতাদের ভালোবাসা এবং বিশ্বাসকে পুঁজি করেই আড়ংয়ের আজকের এই অবস্থান। আমরা মানের দিকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিই। মান এবং দামের মধ্যে সামঞ্জস্য রেখেই আড়ং ব্যবসা করে আসছে।

তবে কিছু কিছু পোশাকের রং পরিবর্তন নিয়ে অভিযোগ আসছে সে ব্যাপারে ওয়াকিবহাল আশরাফুল আলম। বলেন, ‘ক্রেতাদের অভিযোগ নিয়েই আমরা পণ্যের মান ভালো করে থাকি। তারাই আমাদের পরামর্শদাতা। কোনো ক্রেতা অভিযোগ করলে আমরা তার ব্যবস্থা নিই এবং ক্রেতার চাহিদা পূরণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকি।’

তিনি বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আড়ংয়ের পণ্য উৎপন্ন হয়। সব জায়গার আবহাওয়াও এক নয়। আবার সব কারিগরের দক্ষতাও সমান, তা বলা যাবে না। এ কারণে পোশাকের রং নিয়ে আমাদের সবসময় চ্যালেঞ্জের মধ্যে থাকতে হয়। আমরা যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি এবং সহায়তা দিচ্ছি কারিগরদের। এ কারণেই আড়ংয়ের পণ্যের মান ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে বিশ্বাস করি।’

এএসএস/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।