কাতার পরিস্থিতি : ‘ওয়াকিবহাল’ বাংলাদেশ


প্রকাশিত: ০৭:৩২ পিএম, ১১ জুন ২০১৭

কাতারের সঙ্গে সৌদি আরবসহ কয়েকটি আরব দেশের সম্পর্ক ছিন্ন করার সপ্তাহখানেক পরও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি বাংলাদেশ। এই বিষয়টিতে একেবারেই চুপ থাকতে চাইছে সরকার। আর তাই মধ্যপ্রাচ্য প্রসঙ্গটি সযতনে এড়িয়ে যাচ্ছেন এখন সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

তবে রোববার প্রধানমন্ত্রীর সুইডেন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কাতার ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মাত্র একটি বাক্য খরচ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী।

সাংবাদিকদের তিনি জানান, কাতার ও মধ্যপাচ্য ইস্যুটি সম্পর্কে বাংলাদেশ ‘ওয়াকিবহাল’ রয়েছে, তবে যে কোনো ধরনের ব্যাখ্যা থেকে দূরে থাকবে।  

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, বিশ্বের অন্যতম জনশক্তি রফতানিকারক দেশ হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূ্র্ণ। এসব দেশগুলোতে লাখ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। তাদের পাঠানো রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাই মধপ্রাচ্যে যে কোনো ধরনের অস্থিরতা বাংলাদেশের অর্থনীতির কপালে বড় ভাঁজ ফেলে দেয়।

এমন পরিস্থিতিতে যে কোনো একটি দেশের পক্ষ নেয়া বা বিবৃতি দেয়া কঠিন বলে মনে করছেন পেশাদার কূটনীতিকরা। তারা বলছেন, শ্রম বাজার হিসেবে সৌদি আরব যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ছোট দেশ হলেও কাতারের গুরুত্বুও বাংলাদেশের কাছে কোনোভাবেই কম নয়। দেশটিতে তিন লাখেরও বেশি শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। তাই এখনই বিশেষ একটি পক্ষে অবস্থান নিতে চাইছে না বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বাংলাদেশের মূল পররাষ্ট্র নীতি হলো- সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির ক্ষেত্রে এই নীতি অনুসরণ করছে বাংলাদেশ।

এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন,‌ বর্তমান মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ ‘কিংকর্তব্যবিমূঢ়’ অবস্থায় রয়েছে। একটু বেখেয়ালি সিদ্ধান্ত দেশের শ্রম বাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক ফেলতে পারে। তাই বিষয়টি নিয়ে চুপ থাকাটাকেই শ্রেয় অবস্থান মনে করছে বাংলাদেশ।

প্রসঙ্গত, ‘সন্ত্রাসীদের মদদদাতা’ অভিযোগ তুলে গত ৫ জুন কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেয় প্রতিবেশী দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, ইয়েমেন ও মিশর। তাদের অভিযোগ, ইসলামিক স্টেট (আইএস), আল কায়েদা, মুসলিম ব্রাদারহুডসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠনকে  মদদ দিচ্ছে কাতার।

সম্পর্ক ছিন্নের পর কাতারভিত্তিক বিমান কোম্পানিগুলোকে নিজেদের আকাশসীমা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সৌদি আরব, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এসব দেশগুলো ১৪ দিনের মধ্যে কাতারের নাগরিকদের দেশ ত্যাগেরও নির্দেশ দেয়। তবে এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো নির্দেশ দেয়নি কাতার সরকার। ওই তিন দেশের প্রায় ১১ হাজার নাগরিক কাতারে বসবাস করেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।

এদিকে কাতার তার মোট খাবারের ৪০ শতাংশই সৌদি আরব থেকে আমদানি করে। তবে সৌদিসহ অন্যান্য দেশগুলো সম্পর্ক ছিন্ন করায় দেশটিতে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কাতারের পাশে দাঁড়িয়েছে ইরান, তুরস্কসহ কয়েকটি দেশ। ইতিমধ্যে কাতারের বিমান কোম্পানিগুলোর জন্য নিজেদের আকাশসীমা খুলে দিয়েছে ইরান। পাঁচটি উড়োজাহাজ বোঝাই করে কাতারে খাবারও পাঠিয়েছে দেশটি।

জেপি/এমএমএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।