লজ্জা আর ভয়ে মেয়ে আমাদের কিছুই বলেনি


প্রকাশিত: ১২:২১ পিএম, ১০ জুন ২০১৭

ইফতারের দাওয়াত দিয়ে ওরা আমার নিষ্পাপ শিশুটিকে পরপর দু’দিন নির্যাতন করল। নির্যাতনের কারণে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। গলা কেটে মেরে ফেলার হুমকি দেয়ায় বিষয়টি কাউকে বলতে সাহস করেনি। ১০ দিনের মাথায় জোর করে মা মেয়েকে গোসল করাতে গিয়ে বিষয়টি টের পান।

বিচার চেয়ে আর কী হবে? ক্ষতি যা হবার তা-তো হয়েই গেছে। আমার মেয়ের জীবনে এমনটি হবে- কখনওই ভাবিনি।  নির্যাতনের শিকার আট বছরের শিশুটির বাবা ডমিনিক রায় জাগো নিউজকে এভাবে কথাগুলো বলছিলেন।

তিনি বলেন, আট বছরের শিশুটি ইফতারের আগে বাসার সামনে খেলা করছিল। আগের দিন ইফতারের দাওয়াত দিয়েছিল পাশের বাসার প্রহরী শাহিনুর। ইফতারের সময় হলে মা তার শিশুকন্যাকে প্রহরীর কক্ষে পাঠিয়ে দেন। বলেন, তোমার দাদু ইফতার খেতে ডেকেছে। যাও খেয়ে এসো।

কিন্তু দাদুর বয়সী পাষণ্ড প্রহরী অপর প্রহরীকে নিয়ে শিশুটিকে ধর্ষণ করতে পারে তা ঘূণাক্ষরে ভাবিনি।

ডমিনিক রায় বলেন, বাড্ডার ময়নারবাগের একটি ভাড়া বাসার পঞ্চম তলায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করেন। গত ২৯ মে ইফতারের দাওয়াত দিয়ে তার শিশুকন্যাকে ধর্ষণ করে সামনের বাসার প্রহরী আমজাদ হোসেনের সহযোগিতায় অপর প্রহরী শাহিনুর।

ওই ঘটনায় ডমিনিক রায় বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় গতকাল শুক্রবার রাত পৌনে ১২টায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০২ এর সংশোধনী ২০০৩ এর ৯ (৩) ধারায় মামলা করেন। মামলার দুই আসামি হলেন- নিরাপত্তা প্রহরী শাহিনুর রহমান (৫২) ও আমজাদ হোসেন (৫০)। দু’জনই ময়নারবাগ এলাকার নিরাপত্তা প্রহরী।

ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে বাবা ডমিনিক রায় জাগো নিউজকে বলেন, ইফতার কেনাকাটা আর নামাজের প্রস্তুতি চলছিল চারদিকে। সবার মধ্যে যখন ধর্মীয় আচার পালনের ব্যস্ততা তখনই সুযোগ নেয় নিরাপত্তা প্রহরী শাহিনুর। এজন্য পরিকল্পিতভাবে আগের দিন আমার বাসায় গিয়ে ইফতারের দাওয়াতও করে আসে।

পরদিন ঠিক ইফতারের আগে দাওয়াতের কথা মনে করিয়ে দেয় প্রহরী শাহিনুর। আমার মেয়েটি তখন নিচে খেলছিল। মেয়ের মা সহজ-সরলভাবে ইফতার খেতে প্রহরীর কক্ষে মেয়েকে পাঠিয়ে দেন। দাদুর বয়সী মানুষ। এতটা পাশবিক হবে, জানা ছিল না। দুই প্রহরী মিলে আমার মেয়েকে ধর্ষণ করে। পরের দিনও নির্যাতন করে। কিন্তু লজ্জা আর ভয়ে মেয়ে আমাদের কিছুই বলেনি।

ডমিনিক রায় বলেন, ঘটনার ওই রাতে মেয়ের গায়ে ১০২ ডিগ্রি জ্বর আসে। জ্বর কোনো মতে কমছিল না। জ্বরের কারণ, শরীরে ব্যথা, হাঁটতে না পারা- কোনো কিছুই জানতে পারছিলাম না। মেয়ের মায়ের মনে সন্দেহ হয়। তিনি আদর করে, শান্ত গলায় মেয়ের কাছে জানতে চান, কিচ্ছু হবে না তোমার, কে তোমার গায়ে হাত দিয়ছে, দ্বিধাহীনভাবে বলো।

কিন্তু মুখ খোলেনে মেয়েটি আমার। এভাবে ১০টি দিন পেরিয়ে যায়। শিশুটির শরীরে বেড়ে যায় ইনফেকশনের যন্ত্রণা। মেয়েটি প্রচণ্ড ব্যথার কথা বলছিল। মা তিনদিন ৩/৪টা করে নাপা দিচ্ছিলেন। কিন্তু ব্যথা কমে না। একদিন মা জোর করে গোসল করাতে নিয়ে গিয়ে মেয়ের শরীরে ক্ষত দেখতে পান।

মা মেয়েকে অভয় দিয়ে বলেন, কিছু হবে না তোমার। কেউ কি তোমার ক্ষতি করেছে?

মায়ের অভয় পেয়ে মেয়ে সব কথা খুলে বলে। বলে দাদুর বয়সী দুই নিরাপত্তা প্রহরী কর্তৃক নির্মম নির্যাতনের কথা। নির্যাতনের পর তারা আমার মেয়েকে ভয় দেখায়, কাউকে বললে গলা কেটে দেবে। মেরে ফেলবে...!

ডমিনিক রায় বলেন, বিষয়টি বাসার মালিককে অবহিত করি। এরপর প্রহরীর সামনে মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তারা আমজাদ হোসেনকে বাড্ডা থানা পুলিশের হাতে তুলে দেন। সে সময় মূলহোতা শাহিনুর বাসায় ছিল না।

শিশুটির বাবা বলেন, নিজের জীবনে এমন ঘটনা ঘটবে- তা কখনও ভাবতে পারিনি। মেয়ের চিকিৎসার জন্য বেসরকারি হাসপাতালে গেছি। পুলিশি কেইস বলে ভর্তি করাতে পারিনি। সামাজিক মানসম্মানের ভয়ে প্রথমে মামলা করতে চাইনি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরও ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করাতে পারিনি। চিকিৎসক জানান, এ ঘটনায় আগে থানায় মামলা করুন, তারপর চিকিৎসা। কষ্টে, আক্ষেপে ফিরে এসেছি। থানায় মামলা করেছি।

আসামিরা ধরা পড়েছে। হয়তো বিচার হবে কিন্তু আমার জীবনে, আমার মেয়ের জীবনে যা ঘটে গেল তা কখনও ঘুচবার নয়- কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন ডমিনিক রায়।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাড্ডা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, দুই আসামিকে আমরা গ্রেফতার করেছি। ভিকটিম শিশুটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি’তে ভর্তি রয়েছে। চিকিৎসা চলছে। মেডিকেল পরীক্ষাও সম্পন্ন করা হবে।

দুই আসামিকে আগামীকাল রোববার আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে বলেও জানান তিনি।

জেইউ/এমএআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।