প্রতিরক্ষা খাতে আরো দুই হাজার কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ দরকার
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূইয়া বলেছেন, সশস্ত্রবাহিনীকে আরো আধুনিক করতে হলে প্রস্তাবিত বাজেটের চাইতে আরো দুই হাজার কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ দিতে হবে। ২০১৫-১৬ সালের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতে ১৮ হাজার ৩শ` ৬৯ কোটি ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু এ অর্থ যথেষ্ট নয়।
আওয়ামী লীগের এই সংসদ সদস্য বৃহস্পতিবার রাজধানীর নিজ বাসভবনে জাগো নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে একথা বলেন।
প্রতিরক্ষা খাতের জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করে তিনি বলেন, সদ্য প্রতিষ্ঠিত সিলেটে দশ পদাতিক, ঘাটাইলে ১৯ পদাতিক এবং যমুনার পারে ৯৮ পদাতিক নতুন ডিভিশনের জন্য গোলা-বারুদ এবং অন্যান্য মূল্যবান সরঞ্জমাদি কিনতে হবে। এছাড়া সৈনিকদের জীবন মানের আরো উন্নতির জন্য বাজটে বেশি টাকা প্রয়োজন।
এক প্রশ্নের জবাবে সুবিদ আলী ভূইয়া বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯-১০ অর্থবছরে প্রতিরক্ষার জন্য ৯ হাজার ১৮২ কোটি ৫৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা বাজেট বরাদ্দ দিয়েছিল। সৈনিকদের প্রশিক্ষণ ও দেশের সার্বভৌম রক্ষা এবং বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা যুগপোযোগী করতে আস্তে আস্তে বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে।
এরই অংশ হিসেবে চলতি অর্থ বছরে ১৭ হাজার ৭শ’ ৫৫ কোটি ৬৭ লাখ ৭৭ হাজার টাকা বরাদ্দ পায় প্রতিরক্ষা বিভাগ। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা যথেষ্ট নয়। নৌবাহিনীর জন্য চীন থেকে দুটি সাবমেরিন (টাইপ-০৩৫ জি) এবং বিমান বাহিনীর জন্য চীন থেকে ১২টি চঞ ৬ এয়ারক্র্যাফ কিনবে।
জাতীয় বাজেট সম্পর্কে তিনি বলেন, এমন বাজেট প্রণয়ন করতে হবে, যাতে জনগণের কল্যাণ হয়। আর দীর্ঘমেয়েদি অবকাঠামোগত উন্নতি হয় সেদিকে নজর রেখে বাজেট দিতে হবে। অনেক মন্ত্রণালয় তাদের বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করতে পারে না। এর মানে তারা যথেষ্ট উন্নয়ন করতে পারছে না। এ ধারা যাতে না চলতে পারে সেদিকে অর্থমন্ত্রীকে নজর রাখতে হবে। এছাড়া বাজেট প্রণয়নে এমপিদের সরাসরি সম্পৃক্ত করতে হবে। কারণ এমপিরা মাঠ পর্যায়ের মানুষের সঙ্গে যুক্ত।
আওয়ামী লীগ সরকারের এটি ১৬তম বাজেট হলেও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের এটি নবম বাজেট। বাজেটে গত ছয় বছরের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রেখে রূপকল্প ২০২১-এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পদক্ষেপগুলোকে বেগবান করতে হবে।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটের আকার হবে প্রায় ২ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা। আওয়ামী লীগ সরকারের ছয় বছর আগে ক্ষমতা গ্রহণের সময়ের বাজেটের প্রায় ছয় গুণ। উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ১ শতাংশ, মুদ্রাস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে প্রায় ৯২ হাজার কোটি টাকার বাজেট আসছে।
জেনারেল ভূঁইয়া আরো বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। জনগণ এখন সুখে শান্তিতে আছে। কিন্তু একটি সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী সেই উন্নয়নের ধারাকে বাধাগ্রস্থ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার নিজ নির্বাচনী এলাকায় অনেক উন্নয়ন কাজ হয়েছে। দাউদকান্দি পৌর ঈদগাঁ মাঠ ব্যাপকভাবে সংস্কার করা হয়েছে। এখানে একটি দৃষ্টিনন্দন ফটক হয়েছে, মাঠকে অনেক প্রশস্ত করেছি, মসজিদ, মেহরাব ও কবরস্থানের সংস্কার হয়েছে। এখানে প্রায় ৭০/৮০ হাজার লোক নামাজ আদায় করতে পারে।
আওয়ামী লীগের এই সংসদ সদস্য বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে নির্মাণ করা হয়েছে `৭১-এর শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ’। এই প্রকল্প দুটির বেশির ভাগ অর্থ আমার ব্যক্তিগত। এছাড়া গত ছয় বছরে সরকারি অর্থায়নে দাউদকান্দি ও মেঘনায় সাড়ে ৩শ` কোটি টাকার কাজ করেছি।
বর্তমান বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সম্পর্কে সুবিদ আলী ভূইয়া বলেন, সরকার ক্ষমতায় আসার পরই এ খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। কুইক রেন্টাল পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলে দেশের অনেক এলাকা অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকতো। চাহিদা বেশি হওয়ায় লোডশেডিং এড়ানো যাচ্ছে না।
এইচএস/আরএস/একে/আরআই