১৮ হাজার কোটি টাকার সম্পূরক বাজেট পাস


প্রকাশিত: ১০:৩১ এএম, ০৬ জুন ২০১৭

বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সদস্যদের তুমুল বিরোধিতার মুখে চলতি (২০১৬-১৭) অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট পাস হয়েছে।

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে ‘নির্দিষ্টকরণ (সম্পূরক) বিল-২০১৭’ পাসের মাধ্যমে এ বাজেট পাস হয়। এ বাজেট পাসের মধ্য দিয়ে সংসদ ২৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে অতিরিক্ত ১৮ হাজার ৩৭০ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করার অনুমতি দিয়েছে।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে সম্পূরক বাজেটের অর্থ অনুমোদনের জন্য ২৬টি মঞ্জুরি দাবি উত্থাপন করা হয়। এসব দাবির মধ্যে ৪টি দাবির ওপর আনীত ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হয়। এগুলো হচ্ছে- প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ। বাকি মঞ্জুরি দাবিগুলো সরাসরি ভোটে দেয়া হয়। অবশ্য সব ছাঁটাই প্রস্তাবগুলোই কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। এরপর অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিষ্টকরণ (সম্পূরক) বিল ২০১৭ উত্থাপন করলে কণ্ঠভোটে পাস হয়।

সম্পূরক বাজেটের আওতায় ২৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিপরীতে ১৮ হাজার ৩৭০ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার বরাদ্দ অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে সর্বাধিক ৪ হাজার ৭৫৬ কোটি ৪৬ লাখ ২৪ হাজার টাকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ খাতে বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়েছে। সবচেয়ে কম ৭০ লাখ ৪৩ হাজার বরাদ্দ অনুমোদন পেয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া বেশি বরাদ্দ পাওয়া অন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে রয়েছে- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ২ হাজার ১৪৩ কোটি ৯৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে ২ হাজার ৫৫ কোটি ২১ লাখ ৭ হাজার টাকা, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক হাজার ৮০ কোটি ৮৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অনুকূলে এক হাজার ১৬৬ কোটি ৭৩ লাখ ২৭ হাজার টাকা।

সম্পূরক বাজেটের ওপর মোট ২৬টি দাবির বিপরীতে ১৪৯টি ছাঁটাই প্রস্তাব আনা হয়। ছাঁটাই প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, সেলিম উদ্দিন, মো. ফখরুল ইমাম, নুরুল ইসলাম ওমর ও নূরুল ইসলাম মিলন এবং স্বতন্ত্র সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী।

আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত বরাদ্দের বিরোধিতা করে সংসদ সদস্যরা বলেন, প্রতি বছর এই মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ দেয়া হয়, কিন্তু এসব অর্থ কোন খাতে ব্যয় হয়, সঠিকভাবে ব্যয় হচ্ছে কিনা- তা জানানো হয় না। জনগণের অধিকার রয়েছে এই খাতে বরাদ্দের টাকা স্বচ্ছভাবে ব্যয় হচ্ছে কিনা, তা জানার।

সংসদ সদস্যরা আরও বলেন, প্রতিরক্ষা খাত হচ্ছে জনগণের খাত। এখানে গোপনীয়তার কিছু নেই। মন্ত্রণালয় ব্যর্থ না হলে অতিরিক্ত টাকার প্রয়োজন হতো না। প্রতি বছরই এ মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ দাবি করে। অথচ তাদের খরচের খাত সুনির্দিষ্ট।

জবাবে সংসদকার্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, প্রতিরক্ষা খাতের জন্য যে অর্থ চাওয়া হয়েছে তা অত্যন্ত যৌক্তিক। প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা কি কাজ করছেন, তাদের জন্য কি কি কেনা হচ্ছে তা এরই মধ্যে সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে একাধিকবার বলা হয়েছে। এখন কেউ যদি জেনেও না জানার ভান করেন তাহলে আমার কিছু বলার নেই।

তিনি বলেন, আমাদের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে দেশের জন্য যে সম্মান বইয়ে আনছেন, তা সত্যিই অতুলনীয়। তাই ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রসঙ্গত, এ খাতের জন্য এক হাজার ৮০ কোটি ৮৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দের বিরোধিতা করে সংসদ সদস্যরা বলেন, সাড়ে তিন বছরে কোন এমপিকে রাজধানীতে প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়নি। এ মন্ত্রণালয়ের সেবা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। মানুষকে অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হয়। সংসদ সদস্যদের আবাসনের সুবিধাই এ মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করতে পারেনি। মন্ত্রীরা সংসদে এসে জানতে পারেন যে তার মন্ত্রণালয়ে এই অতিরিক্ত অর্থ খরচ হয়েছে। তারা আসলে নিজেরাও বলতে পারবেন না কোন খাতে কত টাকা ব্যয় হয়েছে। রাজউকের মাধ্যমে এ মন্ত্রণালয় অনেক কাজ করে। আসলে রাজউক হচ্ছে দুর্নীতির আখড়া। দুর্নীতির দায়ে কেউ কেউ এখন জেলও খাটছেন।

জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, সবার বক্তব্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বলা হয়েছে, ঢাকায় এমপিদের প্লট দেয়া হয়নি। পাশাপাশি তারা বলেছেন, সারাদেশে আবাসন সমস্যার সমাধান করা। আমরা এরই মধ্যে সারা দেশে আবাসন সমস্যার সমাধানে কাজ করছি। আবাসন খাতে সরকার সামান্য ভূমিকা পালন করে। বেসরকারি খাত মূল ভূমিকা পালন করে। তারা এদিকে বিশেষ নজর দিচ্ছে। এ সমস্যা সমাধান শুধু সরকারের একার পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়। বেসরকারি খাতেরও সহযোগিতা লাগবে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের ৯২৭ কোটি ১৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দের বিরোধিতা করে ছাঁটাই প্রস্তাবকারী ৬ এমপি বলেন, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয় এটা। অনেক অঞ্চলে দেখা যায় ৪/৫টা প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু দেখা যায়, এসব প্রকল্পের কাজ হয় না। যোগাযোগ করলে বলা হয় হচ্ছে, হবে।

জবাবে এলজিআরডিমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এটা একটি উন্নয়নমুখী বিভাগ। প্রতিনিয়ত সড়কের পরিমাণ বাড়াতে হচ্ছে। সুপেয় পানির জন্য বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হচ্ছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ খাতে সর্বাধিক বরাদ্দ চাওয়া ৪ হাজার ৭৫৬ কোটি ৪৬ লাখ ২৪ হাজার টাকা বরাদ্দের বিরোধিতা করে ছাঁটাই প্রস্তাব দেন ছয় এমপি। এসময় তারা বলেন, এটি একটি নতুন সৃষ্ট বিভাগ। এখানে অতিরিক্ত অর্থ দাবি করা স্বাভাবিক। কিন্তু কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগকে কীভাবে এক করা হলো? দুটি তো ভিন্ন বিষয়। কারিগরি শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তাই এটাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।

জবাবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তে কারিগরি ও মাদরাসাকে একটি বিভাগে আনা হয়েছে। এখানে আমার ব্যক্তিগত কোনো সিদ্ধান্ত নেই। এই দুটি শিক্ষাব্যবস্থার অনেক অগ্রগতি হয়েছে। সরকার কাজ করছে বলেই বেশি টাকার প্রয়োজন হয়ে পড়ছে।

এইচএস/জেএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।