একজন ক্রেতার দেখাও মেলেনি


প্রকাশিত: ০৬:৪৮ এএম, ০৪ জুন ২০১৭

উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের এনঅার টাওয়ারের দোতলায় অাপন জুয়েলার্সের শোরুমে চলছে শুল্ক ও গোয়েন্দা বিভাগের অভিযান। এ অভিযান চলাকালে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত একজন ক্রেতার দেখাও মেলেনি এই শোরুমটিতে।

মার্কেটটিতে দোকানের সংখ্যা কম হওয়ায় অন্য ক্রেতাদেরও সমাগম নেই। নির্মাণাধীন এই টাওয়ারের নিচতলায় জনি রকেটস অার দোতলায় অাপন জুয়েলার্সের শোরুম অবস্থিত। এর উপরের কোনো ফ্লোর এখনও ভাড়া হয়নি।

এদিকে সকাল ৯টায় অভিযান শুরুর উদ্দেশে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত হলেও কার্যত অভিযান শুরু হয় ১০টা থেকে। অভিযানকালে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। প্রবেশমুখে পুলিশের পাহারা দেখা যায়।

অাপন জুয়েলার্সের নিরাপত্তা প্রহরীরা জানান, রোজার মাস বলে সাধারণত একটু দেরিতে শোরুমটি খোলা হয়। তবে অাজ বিশেষ অভিযানের কারণে অাগে থেকেই সবাই প্রস্তুত ছিল।

তারা জানান, বেলা ১১টার পর থেকে সাধারণত কিছু ক্রেতা অাসে। তবে অাজ এখন পর্যন্ত কোনো ক্রেতার দেখা মেলেনি। যদিও অাপন জুয়েলার্স নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্কে ক্রেতা সমাগম ব্যাপক হারে কমেছে বলেও জানান তারা।

এর আগে, বেলা ১০টা থেকে আপন জুয়েলার্সের ৫টি শোরুমে একযোগে কার্যক্রম চালায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। ইতোমধ্যে গুলশান-২ এর সুবাস্তু ভবন-সংলগ্ন আপন জুয়েলার্সের শোরুমে অভিযান চালিয়ে প্রায় ২১২ কেজি (৫.৩ মণ) স্বর্ণ ও ৩শ’ ৫০ গ্রাম ডায়মন্ড জব্দ করা হয়েছে।

শুল্ক গোয়ন্দা সদর দফতর সূত্র জানায়, শুল্ক গোয়েন্দার ৫টি দল এই স্বর্ণ জব্দ ও স্থানান্তর প্রক্রিয়া তদারকি করছেন। যুগ্ম পরিচালক মো. সফিউর রহমান প্রক্রিয়ার সার্বিক সমন্বয় করছেন। এ ছাড়া স্বর্ণ জব্দ ও বাংলাদেশ ব্যাংকে জমাদানের সার্বিক প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধানে রয়েছেন এ কে নুরুল হুদা আজাদ।

গুলশান-২ এর সুবাস্তু ভবন-সংলগ্ন আপন জুয়েলার্সের শোরুমে তদারকি করছেন শুল্ক গোয়েন্দার ডেপুটি ডিরেক্টর (ডিডি) শরীফুল হাসান। সীমান্ত স্কয়ারে করছেন ডেপুটি ডিরেক্টর (ডিডি) জাকির হোসেন, উত্তরার শাখায় ডেপুটি ডিরেক্টর (ডিডি) শামীমুর রহমান, মৌচাক মার্কেট শাখায় রয়েছেন ডেপুটি ডিরেক্টর (ডিডি) সাইফুর রহমান এবং সহকারী পরিচালক (এডি) আরজিনা খাতুন রয়েছেন গুলশান-১ ডিসিসি মার্কেট শাখায়।

গত ২৮ মার্চ রাজধানীর বনানীর দ্য রেইন ট্রি হোটেলে জন্মদিনের পার্টিতে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া দুই ছাত্রী। যাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয় তাদের একজন আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার হোসেনের ছেলে সাফাত আহমেদ।

এরই মধ্যে ফরেনসিক পরীক্ষার যে প্রতিবেদন পাওয়া গেছে তাতে বলা হয়েছে, দুই তরুণীকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি।

ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সাফাতসহ ৫ আসামি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। ধর্ষণের ঘটনার পর দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনায়-সমালোচনয় উঠে আসে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার হোসেনের ব্যাংক হিসাবে গরমিলের বিষয়টি। এতে শুল্ক গোয়েন্দার পক্ষ থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন মহল থেকে আপন জুয়েলার্স বর্জনের দাবি ওঠে।

পরে গত ১৪ ও ১৫ মে শুল্ক গোয়েন্দা আপন জুয়েলার্সের গুলশান ডিসিসি মার্কেট, গুলশান অ্যাভিনিউ, উত্তরা, সীমান্ত স্কোয়ার ও মৌচাকের ৫টি শো রুমে অভিযান চালিয়ে প্রায় সাড়ে ১৩ মণ স্বর্ণ ও ৪২৭ গ্রাম হীরা সাময়িকভাবে জব্দ করে। এগুলো পরে আইনানুগভাবে প্রতিষ্ঠানের জিম্মায় দেয়া হয়।

আত্মপক্ষ সমর্থনে আপন জুয়েলার্স কর্তৃপক্ষকে পরে তিনবার শুনানির সুযোগ দিলেও তারা কোনো প্রকার বৈধ কাগজ দেখাতে পারেনি। তবে আপন জুয়েলার্সের মালিকপক্ষের দেয়া ১৮২ জনের তালিকার মধ্যে ৮৫ জন প্রকৃত গ্রাহককে মেরামতের জন্য জমা রাখা প্রায় ২.৩ কেজি স্বর্ণালঙ্কার অক্ষত অবস্থায় ফেরত দেয় শুল্ক গোয়েন্দা।

জেপি/বিএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।