ব্লগার অভিজিৎ-রাজিব-অনন্ত হত্যাকাণ্ড একই স্টাইলে


প্রকাশিত: ১২:৩৭ পিএম, ১২ মে ২০১৫

মুক্তমনা ব্লগের অন্যতম সংগঠক অভিজিৎ ও রাজিব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে লেখক-ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশের হত্যাকাণ্ডের মিল খোঁজে পেয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনী। তাদের মতে এই তিন ব্লগারের ওপর হামলার ধরন একই।

ব্লগার অনন্তকে পেছন থেকে প্রথমে মাথায় আঘাত করে ঘাতকরা। দুই হাত দিয়ে তিনি ফেরানোর চেষ্টা করেছিলেন। ঘাতকদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার মাথা কেটে মগজ বের হয়ে গেছে। অনন্তের শরীরে কমপক্ষে ১৪ থেকে ১৫ স্থানে জখম রয়েছে। একইভাবে রাজিব ও অভিজিৎকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বলে র‍্যাব জানায়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও র‍্যাব সূত্র জানায়, চার ঘাতক এসেছিলো দুটি মোটরসাইকেলে করে। সবাই ছিল মুখোশপরা। তাকে তার বাসা থেকে ঘটনাস্থল ২শ গজ দূরে নিয়ে পেছন থেকে আক্রমণ করে ঘাতকরা। এসময় অনন্ত আত্মরক্ষার জন্য দৌঁড়ে সিলেট নগরের সুবিদবাজারস্থ দস্তীদারদিঘীর পাড়ে (নূরানী দিঘী) এলে সেখানেও তাকে কোপায় তারা। এতে মুহূর্তেই তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘাতকরা পশ্চিমপীর মহল্লা (বনকলা পাড়া) রাস্তা দিয়ে পালিয়ে যায়। আর ঘাতকরা ঢুকেছিলো সুবিদবাজার মূল সড়ক দিয়ে। র‍্যাব-৯ এর প্রেসব্রিফিংয়ে এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে। এদিকে সিআইডি’র ক্রাইম সিন এবং র‍্যাবের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।



র‍্যাব-৯ এর মিডিয়া অফিসার এএসপি পঙ্কজ কুমার দে বলেন, একইভাবে ব্লগার অভিজিৎ ও রাজিব হায়দারকেও হত্যা করা হয়। হত্যার প্রাথমিক তদন্তে ব্লগার অভিজিৎ ও রাজিব হত্যার সাথে মিল পাওয়া যাচ্ছে।

জাগো নিউজ’র এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খুনিরা একদিকে ঢুকেছে আবার খুন করে অন্যদিকে পালিয়ে গেছে। এ থেকে মনে হয় তারা পরিকল্পিতভাবেই তাকে হত্যা করেছে। হত্যাকারীরা প্রশিক্ষিত। ঘটনার পূর্বাপর বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ২/৩ দিন ধরে তারা এলাকাটি ঘুরে দেখেছে। কোথায় কি আছে সব বিষয়ে তাদের সম্মুখ ধারণা আছে। র্যাব ঘাতকদের চিহিৃত করে গ্রেফতারে কাজ শুরু করেছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার কামরুল আহসান বেলা ২টায় হাসপাতাল মর্গে লাশ দেখে আসার পরপরই বলেন, পুলিশ সব ধরনের তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘাতকদের সনাক্ত করার চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে পুলিশের একটি বিশেষ দল কাজ শুরু করেছে। এছাড়া সিআইডির ক্রাইম সিন দল ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্য ব্লগার হত্যাকাণ্ডের সাথে এই হত্যাকাণ্ডের মিল আছে মনে হচ্ছে। তারপরও আমরা তদন্ত করে বিষয়টি দেখছি। আমরা অপারগ হলে অন্য কোনো সংস্থাকে দিয়ে এ ঘটনার তদন্ত করানো হবে।

এ ঘটনায় ওসমানী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসক ডা. শামসুল ইসলাম বলেন, মূলত মাথার আঘাতের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত রক্তক্ষরণও মৃত্যুর একটা কারণ।



গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক ও জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি, ব্লগার সহিদুজ্জামান পাপলু (পাপলু বাঙালি) জাগা নিউজকে বলেন, ২০১৪ সালে একবার সম্প্রতি ডিএমপির পুলিশের হাতে আটক সফিউর রহমান পারাবি ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল। মুক্তমনার প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়কে হত্যার পর আবার পারাবি অনন্তকে হত্যার হুমকি দেয়। এ থেকে বুঝা যায় ব্লগার হত্যাকাণ্ডগুলো একই সূত্রে গাঁথা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনন্ত বিজয় সুবিদবাজার নূরানী ১৩/১২ নম্বর বাসার রবীন্দ্র কুমার দাশের ছেলে। ২ ভাই ২ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ মুক্তমনা ব্লগে লেখালেখি করতেন। তিনি পূবালী ব্যাংক সুনামগঞ্জ জেলার ছাতকের জাউয়াবাজার শাখায় অ্যাসিস্ট্যান্ট ডেভেলপম্যান্ট অফিসার হিসেবে কাজ করতেন।

বিমানবন্দর থানা পুলিশের ওসি গৌছুল হোসেন জানান, সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে মুখোশপরা দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করেছে। পুলিশ ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চালাচ্ছে।

ওসমানী হাসপাতালে উপ-পরিচালক আব্দুস সালাম জানান, এটি ছিল ব্রড মৃত্যু (ঘটনাস্থলে মৃত্যু)। কাজেই এ বিষয়ে তাদের বলার কিছু নেই। ময়নাতদন্তের পর বলা যাবে।

এদিকে, অনন্ত হত্যার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে ওসমানী মেডিকেল কলেজ এলাকায় মিছিল করেছে গণজাগরণ মঞ্চ। তারা এ ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে। সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

প্রসঙ্গত, সিলেট গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৯টায় সুবিদবাজারস্থ দস্তীদারদিঘীরপাড় চাররাস্তার মোড়ে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

## আবারো ব্লগার খুন!
## যা লিখতেন নিহত ব্লগার অনন্ত

আবারো ব্লগার খুন!



এমএএস/আরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।