বিদেশি চাপ আমলে নিচ্ছে না সরকার : শাজাহান খান


প্রকাশিত: ১২:২৬ পিএম, ১২ মে ২০১৫

শাজাহান খান। মন্ত্রী, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। আহ্বায়ক, শ্রমিক-কর্মচারী-মুক্তিযোদ্ধা ও পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ। সীমান্ত চুক্তি, সিটি নির্বাচন, বিরোধীজোটের আন্দোলন, কূটনৈতিক চাপসহ রাজনীতির নানা বিষয় নিয়ে কথা হয় জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।

জাগো নিউজ : শুরু করতে চাই ভারতের পার্লামেন্টে সীমান্ত চুক্তি বিল পাসের বিষয়টি দিয়ে?
শাজাহান খান : সহজ কথায় বলতে গেলে ছিটমহলবাসীরা মুক্তি পাচ্ছেন। ভারত সীমান্তের মানুষদের আবেগ বুঝতে পেরেছে বলে আমরা তাদের সাধুবাদ জানাই। বঙ্গবন্ধু সীমান্ত চুক্তি করে ভুল করেননি, তা আজ প্রমাণ হলো।

জাগো নিউজ : বিলটি দীর্ঘদিন ঝুলে ছিল, তা ভারতের কারণেই? সমালোচনাও ছিল?
শাজাহান খান : মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি হয়েছিল ১৯৭৪ সালে। সব কিছু চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল। পাকিস্তানের দোসররা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ’৭৫-এ। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে ভারতের সঙ্গে বৈরী সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এ কারণেই বিলটি আটকে যায়। শুরু থেকেই এ চুক্তি নিয়ে আওয়ামী লীগকে নানা সমাচলোনা শুনতে হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, চুক্তি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ ভারত হয়ে যাবে। আজ তাদের মুখে কুলুপ পড়েছে।
 
জাগো নিউজ : ’৯৬-তেও হয়নি। এখন কেন বাংলাদেশ সরকারকে ভারত এতো গুরুত্ব দিচ্ছে?
শাজাহান খান : সব এক দিনে হয় না। তখন আমরা গঙ্গাচুক্তি করেছি। বিজেপির বিরোধিতার কারণে সীমান্ত বিলটি পাসে বিলম্বিত হয়। এখন বিজেপিই উদ্যোগ নিল। আস্থা অর্জনের ব্যাপার।
 
জাগো নিউজ : অনেকেই তো অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ ভারতকে অধিক দিয়েই এই আস্থা অর্জন করছে। বিশেষত সেভেন সিস্টার্স প্রশ্নে।
শাজাহান খান : ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে আমাদের কি লাভ? এ অপরাধটি বিএনপি করেছিল। আমরা বন্ধুরাষ্ট্রের সঙ্গে শত্রুর সম্পর্ক তৈরি করতে চাই না। যারা গোলামীর রাজনীতি করেন তারাই এমন সমালোচনা করেন। খালেদা জিয়া নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানাতে পারেন, অথচ শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাতে পারেন না। বিদেশনির্ভর রাজনীতি করলে এমন গোলামীই মানায়।
 
জাগো নিউজ : তিন সিটি নির্বাচনের পর বিদেশিরা ফের রাজনৈতিক সমঝোতার কথা বলছেন। সরকার এ চাপ কীভাবে নিচ্ছে?
শাজাহান খান : বিএনপির রাজনীতি এখন জননির্ভর না হয়ে সন্ত্রাসনির্ভর, জঙ্গিনির্ভর ও বিদেশনির্ভর হয়ে পড়েছে। এমন নির্ভরশীলতায় রাজনীতি হয় না। তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মানুষ প্রমাণ করেছে এখনো বাঙালি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে। সুতরাং বিদেশের ওপর ভর করে বিএনপি এ চেতনায় ফাটল ধরাতে পারবে না। বিদেশ নির্ভরতাই বিএনপির সর্বনাশ করেছে। আমরা এটিকে আমলে নিচ্ছি না।
 
জাগো নিউজ : বিদেশনির্ভর রাজনীতি আওয়ামী লীগও করে। এমন রাজনীতি আমাদের পুরনো।
শাজাহান খান : জনভিত্তির ওপর নির্ভর করেই আওয়ামী লীগ রাজনীতি করে। এমন আর কোন সংগঠন আছে বলুন তো? আওয়ামী লীগ বন্ধুরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। এর মানে নির্ভরতা নয়। মুক্তিযুদ্ধে বড় বড় পরাশক্তি আমাদের বিরোধিতা করেছে। আমেরিকা আমাদের বিরুদ্ধে সপ্তম নৌ-বহর পাঠিয়েছিল। আমাদের মনোবল ভাঙতে পারেনি।

জাগো নিউজ : তাহলে শক্তি কি সেখান থেকেই পাচ্ছেন?
শাজাহান খান : আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করেই অপশক্তিকে মোকাবিলা করছি। এ কারণেই খালেদা জিয়া মাঠে নামতে পারছেন না। সন্ত্রাস করে মাঠ দখলে নিতে পারছেন না। একই চেতনা বিদেশিদের বেলাতেও প্রযোজ্য। বাংলাদেশে সরকারবিরোধী আন্দোলন হয়। কিন্তু এবার দলবিরোধী আন্দোলন হয়েছে। কেন হয়েছে? এর কারণ হচ্ছে, মানুষ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার। সন্ত্রাসের মদদদাতা বেগম খালেদার বাড়ি নিপীড়িত, খেটে খাওয়া মানুষ ঘেরাও করেছে। শ্রমিক, মুক্তিযোদ্ধা-পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ আবারো খালেদা জিয়ার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে যাচ্ছে। দ্বিতীয় পর্বের এ আন্দোলন হচ্ছে খালেদাসহ যারা মানুষ খুনের সঙ্গে জড়িত তাদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে।

জাগো নিউজ : অভিযোগ রয়েছে, আপনাদের আন্দোলন-কর্মসূচি রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ওপর ভর করে?
শাজাহান খান : আমরা আমাদের বিশ্বাসের ওপর ভর করে রাজনীতি করি। আর রাষ্ট্রীয় বাহিনী তো সরকারের হয়েই কাজ করবে। আগেও তা-ই করেছে। বিএনপির সময় অপারেশন ক্লিনহার্টের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে মানুষ হত্যা করেছে। বিএনপির জন্মই হয়েছে খুনের মধ্য দিয়ে। এখনো তারা মানুষ খুন করছে। এ কারণেই খালেদা জিয়া পেশাদার খুনি বলে পরিচিতি পাচ্ছে।

জাগো নিউজ : গ্রেফতারে ভয় কিসের?
শাজাহান খান : এটি আইন-আদালতের ব্যাপার। আমরা শুধু অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারি। খালেদা জিয়া যে সন্ত্রাস করছে, তার বিরুদ্ধেই আমাদেরও অবস্থান। বিএনপি তো মিথ্যার রাজনীতি করে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। আমরা সত্যের ওপর ভর করে রাজনীতি করি।
 
জাগো নিউজ : সরকার সতর্ক থাকতে পারত, অন্তত ভোট বর্জনের পর থেকে?
শাজাহান খান : নিরপেক্ষ ছিল বলেই তো ভোটে কারচুপি হয়নি। সরকার চাইলে ভোটের সংখ্যা বাড়াতে পারত। এক হাজার কেন্দ্রের মধ্যে একশো কেন্দ্রে কারচুপির ঘটনা ঘটতেই পারে। সুতরাং নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কোনো সুযোগ নেই।

জাগো নিউজ : নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন নিয়ে প্রশ্ন দিনকে দিন জোরালো হচ্ছে। মানুষ তো সমঝোতা চায়।
শাজাহান খান : সমঝোতার ভিত্তিটা কী? কিসের ওপর ভর করে আপনি ঐকমত্য গড়ে তুলবেন। খালেদা জিয়া জামায়াতে ইসলাম ছেড়ে কখনো আসবেন? খালেদা জিয়ার রাজনীতির ভিত্তি হচ্ছে, জামায়াতে ইসলামের পরামর্শে চলা, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করা, পাকিস্তানে সঙ্গে সখ্য বজায় রাখা, দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া। এই ভিত্তি তো জাতি গঠন করতে পারে না।

এএসএস/এসএইচএস/বিএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।