সিঁড়িতে রাখা ঝুটের আগুনে পুড়ল হল্যান্ড সেন্টার


প্রকাশিত: ০১:৩৪ পিএম, ২৩ মে ২০১৭

মধ্যরাতে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে গেছে দুটো লিফটি-ই। আগুনের তাপে কাচের দরজার পুরো অংশই খসে পড়েছে। তার পেছনে স্টিলের সাটারটিও ক্ষতিগ্রস্ত। তবে রক্ষা হয়েছে ওই সাটারেই। সাটার ভেদ করে আগুন ভেতরে গেলেই আরেকটি ‘ভয়াবহ ইতিহাস’ সৃষ্টির আশঙ্কা ছিল। চিত্রটি রাজধানীর মধ্য বাড্ডার হল্যান্ড সেন্টারের। রাত সোয়া ৩টায় সেন্টারের তৃতীয় তলায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আধাঘণ্টা অভিযানে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

সরেজমিনে মঙ্গলবার দুপুরে আগুনের ১২ ঘণ্টা পরও ভবনটিতে গিয়ে মিলেছে পোড়া গন্ধ। পোড়া ছাই পড়ে আছে গেটে, সিঁড়িতে এখনও। পড়ে আছে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির ঝুটও।

ফায়ার সার্ভিস ও সদর দফতর কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার পলাশ চন্দ্র মোদক জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিড়ি-সিগারেট থেকে গার্মেন্টের জিন্স ও ঝুটের কাপড়ে আগুনে লেগেছে বলে ফায়ার সার্ভিসের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।’

holand

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল, বাড্ডার অন্যতম বাণিজ্যিক ভবন হল্যান্ড সেন্টারের তৃতীয় এবং চতুর্থ তলায় সুমন ফ্যাশন গার্মেন্টস লিমিটেডের পোশাক কারখানা। কারখানার মালিক আব্দুল মান্নান ভবনের চতুর্থ ও পঞ্চম তলার দুটির ফ্লোরও কিনে নিয়েছেন।

তবে দীর্ঘদিন ধরে তিনি তৃতীয় তলার লিফটের পাশের কমন স্পেস ব্যবহার করে দাহ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ ঝুট রাখছেন। ভবনে অবস্থানরত আরেকটি পক্ষ ঝুট রাখার বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে আবদুল মান্নানকে চিঠি দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

একাধিক পার্টনার নিয়ে আব্দুল মান্নান ষষ্ঠ তলায়ও গার্মেন্টস ও ‘অনুমোদনহীন’ ওষুধ ফ্যাক্টরি দিয়েছেন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, গার্মেন্টসের ফ্লোর কিনে নেয়ার পরই আব্দুল মান্নান নিয়ম ভঙ্গ করে পোশাক কারখানা পরিচালিত করতে থাকেন। ফ্যাক্টরির অধিকাংশ ক্রেতা (বায়ার) স্থানীয় হওয়ায় কোনো প্রকার বিধি-বিধানের ধার ধারেন না এ ব্যবসায়ী। ফ্যাক্টরির ঝুট বিশেষ ব্যবস্থাপনায় অপসারণ করার কথা থাকলেও সিঁড়ির কাছেই স্তূপ করে রাখা হয়। ব্যবহৃত, অব্যবহৃত শত শত কার্টনও পালা করে রাখা হয় সিঁড়ি ও গেটের সামনেই।

holand

আগুনে ওই ভবনের দুটি লিফটের তৃতীয় তলার গেট ও ওঠা-নামার সুইচগুলো বাইরে থেকে পুড়ে গেছে। আগুন নেভাতে উপরের ট্যাংকিগুলোতে পানি ঢালার কারণে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় লিফটের অন্যান্য অংশ। কর্তৃপক্ষ লিফট দুটির ৩৮ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করেছে, যার একমাত্র কারণ গার্মেন্টসের এই ঝুট।

ভবনটির ৬, ৮, ৯, ১০, ১১ এই পাঁচটি তলা ভাড়া নিয়ে নিয়ে দাফতরিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে আরএফএল গ্রুপ। নিজেদের কর্মীদের জন্য তারা নিজ খরচে আলাদা একটি লিফট স্থাপন করেছে। ভবনের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে গার্মেন্টস মালিককে বার বার ঝুট সরানোর জন্য লিখিত চিঠি এবং মৌখিকভাবে বলেছে। গত ৩ মাসে এ বিষয়ে গার্মেন্টস মালিককে পাঁচটি ই-মেইল করেছে অন্য ভাড়াটিয়ারা। সর্বশেষ ভবনের মূল মালিক হাফিজ মজুমদারও বৈঠক বসে সাবধান করে দিয়েছিলেন তাকে। কোনো কথাই কানে তোলেননি। বিশেষ মহলের সঙ্গে সখ্য থাকায় আব্দুল মান্নান পাত্তা দেননি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকেও। প্রতিবারই তারা ঝুট সরিয়ে নেয়ার আশ্বাস দিলেও পরবর্তীতে আর কোনো ব্যবস্থা নেন না। এমনকি আগুন লাগার পরও পূর্বের মতো আচরণ করছেন ফ্যাক্টরি মালিক আব্দুল মান্নান।

holand

সরেজমিন দেখা গেছে, আগুনের পরও গার্মেন্টসের কমন স্পেসে ঝুঁকিপূর্ণ ঝুট রাখা হয়েছে। সহস্রাধিক শ্রমিক ঝুঁকির মধ্যেই কাজ করছে গার্মেন্টসটিতে। ভবনটির পাঁচটি ফ্লোর মিলে আরএফএল গ্রুপের কয়েকশ’ সদস্য অফিস করেন। নিচের তিনটি ফ্লোর নিয়ে শপিং কমপ্লেক্স। সব মিলে কয়েক হাজার মানুষের জীবনের কর্মস্থল রাজধানীর হল্যান্ড সেন্টার। আর এসব মানুষের জীবনের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে সুমন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি।

গার্মেন্টসটি পরিদর্শনে গেলে ভেতরে ‘ঊর্ধ্বতন কেউ নেই বলে’ বাইরেই অবস্থান করতে বলেন সুপারভাইজার আবদুল করিম। দেখা মিলল না মালিক আবদুল মান্নানের। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, তিনি কারখানায় রয়েছেন সকাল থেকেই।

এ বিষয়ে জানতে জাগো নিউজের পক্ষ থেকে গার্মেন্টস মালিক আবদুল মান্নানকে ফোন করা হলে তিনি প্রতিবেদকের প্রশ্নগুলো শোনেন। ২ মিনিট ৫০ সেকেন্ড পর তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি এখন ব্যস্ত আছি, এখন কথা বলার সময় নেই।’

এআর/এএসএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।