ফেসবুক খোলা, ইনস্টাগ্রামেও অ্যাক্টিভ নাঈম আশরাফ


প্রকাশিত: ০২:৫৩ পিএম, ১৬ মে ২০১৭

রাজধানীর বনানীর দুই তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় পাঁচ আসামির চারজন গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে মামলার অন্যতম আসামি নাঈম আশরাফ ওরফে আব্দুল হালিম।

গ্রেফতার এড়াতে ফেসবুক ডি-অ্যাক্টিভ করে রেখেছিলেন নাঈম আশরাফ। মঙ্গলবার সেটি অ্যাক্টিভ পাওয়া গেছে। এছাড়া ইনস্টাগ্রামেও সক্রিয় দেখা গেছে তাকে।

মামলার পর ১০ দিন অতিবাহিত হলেও অধরা নাঈম আশরাফ। ভিকটিমদের অভিযোগ, ধর্ষণের ঘটনার রাতে নাঈম আশরাফের আচরণই ছিল সবচেয়ে জঘন্য।

তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, গোয়েন্দা পুলিশ, সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ, বনানী থানা পুলিশ এবং ডিএমপি ও পুলিশ সদর দফতরের একাধিক টিম নাঈমকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

গ্রেফতারের পর মামলার প্রধান আসামি সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফকে আদালতের নির্দেশে যথাক্রমে ৬ ও ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর নবাবপুর রোডের ইব্রাহীম হোটেল থেকে সাফাতের গাড়িচালক বিল্লালকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১০। একই দিন গুলশান থেকে মামলার অপর আসামি সাফাতের দেহরক্ষী রহমতকেও গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।

গত শনিবার সকাল থেকে সাফাত ও সাদমানকে আনুষ্ঠানিকভাবে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন তদন্ত সংস্থা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ওমেন্স সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশনের কর্মকর্তারা। রিমান্ডের চতুর্থ দিনে তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, নাঈম আশরাফ সম্পর্কে আশাহত করছেন সাফাত-সাকিফ। তাদের মুখ থেকে নাঈম আশরাফকে গ্রেফতারের মতো কোনো তথ্য মেলেনি।

তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, আমরা সম্ভাব্য সব কৌশল অবলম্বন করে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। কিন্তু নাঈম আশরাফ সম্পর্কে তথ্য দিচ্ছে না সাফাত-সাকিফ। রিমান্ডে দুজনই দাবি করছে, মামলার পর থেকে নাঈমের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ হয়নি।

ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের এডিসি আসমা সিদ্দীকা মিলি জাগো নিউজকে বলেন, সম্ভাব্য সব স্থানে অভিযান চালিয়ে পাওয়া যায়নি তাকে। যেকোনো মূল্যে নাঈমকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

জাগো নিউজের অনুসন্ধানে মঙ্গলবার বিকেলে দেখা যায়, নাঈম আশরাফের ব্যবহৃত ফেসবুকটি অ্যাক্টিভ (সক্রিয়)। তবে তিনি কোনো পোস্ট দেননি। কারও পোস্টে লাইক বা কমেন্টস করেননি। তাকে অ্যাক্টিভ দেখা গেছে ইনস্টাগ্রামেও।

এ বিষয়ে তদন্তসংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আলোচিত এ মামলার তদন্তে সহায়তার জন্য পৃথক একটি সহায়ক কমিটি গঠন করেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। কমিটির অন্যতম সদস্য মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) শেখ নাজমুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় চার আসামি গ্রেফতার হয়েছেন। বাকি রয়েছেন শুধু নাঈম আশরাফ। তার অবস্থান ট্রেস করার চেষ্টা চলছে।’

তবে একটি সূত্র বলছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুরে কোনো এক পরিচিতের বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন নাঈম আশরাফ। অপর এক সূত্রের দাবি, ভারত পালিয়েছে নাঈম। তাকে ফেসবুকেও অ্যাক্টিভ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ডিবির ডিসি শেখ নাজমুল আলম বলেন, ‘সে দেশে নাকি বিদেশে পালিয়েছে বিষয়টি এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’

প্রসঙ্গত, গত ২৮ মার্চ রাজধানীর বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে সাফাত আহমেদ নামে এক বন্ধুর জন্মদিনে যোগ দিয়ে ধর্ষণের শিকার হন বলে অভিযোগ করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই তরুণী। সাফাত আহমেদ ও তার বন্ধুদের যোগসাজশে অস্ত্রের মুখে তাদের ধর্ষণ করা হয় বলে দাবি তাদের।

ওই ঘটনার ৪০ দিন পর ৬ মে সন্ধ্যায় বনানী থানায় পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন তারা। এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামি হলেন- সাফাত আহমেদ, সাদমান সাকিফ, নাঈম আশরাফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও তার দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদ (রহমত)।

আসামিদের মধ্যে সাফাত ও সাদমান গত বৃহস্পতিবার রাতে সিলেট থেকে এবং সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও তার দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদকে (রহমত) গতকাল সোমবার রাজধানী ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

ফেরিওয়ালার ছেলে নাঈম আশরাফ

সম্প্রতি দুই তরুণীর ধর্ষণ মামলার পর নাঈমকে চিহ্নিত করেন সিরাজগঞ্জবাসী। তিনি সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার গান্ধাইল গ্রামের আমজাদ হোসেন ফেরিওয়ালার ছেলে এইচএম হালিম ওরফে নাঈম আশরাফ।

২০০৪ সালে এসএসসি পাস করে বগুড়া পলিটেকনিকে ভর্তি হন তিনি। সেখানেও নিজের বাবার নামসহ পুরো পরিচয় গোপন করে প্রতারণা করেন এক মেয়ের সঙ্গে। বিষয়টি জানাজানি হলে সেখানে গণপিটুনির শিকার হন নাঈম।

তার বিরুদ্ধে তিনটি বিয়ের অভিযোগ রয়েছে। আগের দুই স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হলেও তৃতীয় স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকার কালশি এলাকায় ভাড়াবাড়িতে বসবাস করতেন।

কাজিপুর উপজেলার গান্ধাইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আশরাফ আলী জানান, এলাকায় সে একজন প্রতারক হিসেবে পরিচিত। বাবার নাম-পরিচয় বদলে বিয়ে করেছে তিনটি। বগুড়া-ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিজের নাম বদলে কুকীর্তি করে বেড়ায় হালিম। সে বছরে দু-একবার এলাকায় আসে। প্রতারণাই তার পেশা। স্কুলজীবন থেকেই সে প্রতারক। তার বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদে নানা অভিযোগ রয়েছে।

নাঈম পরবর্তীতে ঢাকায় এসে চাকরি নেন একটি মিডিয়া হাউজে।

ধর্ষণের রাতে নাঈমের ভূমিকা

ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজের সূত্র ধরে সাদমান সাকিফের সঙ্গে নাঈমের পরিচয় হয়। দুই তরুণী জানান, ঘটনার দিন সে-ই (নাঈম) প্রথম তাদের একজনকে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ করে। তার দেখাদেখি সাফাতও ধর্ষণ করে।

জেইউ/এমএআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।

আরও পড়ুন