প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় বনানীর ফুটেজ উদ্ধার সম্ভব


প্রকাশিত: ০৩:৫৮ পিএম, ১০ মে ২০১৭

রাজধানীর বনানীতে ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে দুই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনার রাতের সিসিটিভির (ক্লোজ সার্কিট টেলিভিশন) ফুটেজ উদ্ধারে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা নেবে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা বলছেন, যতই ডিলিট (মুছে ফেলা) করা হোক না কেন, প্রযুক্তি সহায়তায় ওই রাতের ফুটেজ উদ্ধার করা সম্ভব। রাজধানীর এলিফেন্ট রোডের প্রযুক্তিবিদদের কাছে গেলে তারাও ওই রাতের ফুটেজ উদ্ধার করতে পারবেন।

আলোচিত বনানীর ‘ধর্ষণ’ মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, হোটেল কর্তৃপক্ষ ধর্ষণের রাতের সিসিটিভি ফুটেজ দিতে গড়িমসি করেছেন। ফুটেজ এক মাসের বেশি সময়ের হওয়ায় তা ডিলিট হয়ে গেছে বলে দাবি হোটেল কর্তৃপক্ষের। অভিযুক্তরা প্রভাবশালী। তাদের চাপে হোটেল কর্তৃপক্ষ ফুটেজ ডিলিট করেছে কিনা- তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে জন্মদিনের দাওয়াত করে ডেকে এনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলা নিয়ে পুলিশি গড়িমসির ঘটনায় রাজধানীসহ দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। অভিযুক্তদের কেউ যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে সেজন্য ইমিগ্রেশন পুলিশকে পুলিশ সদর দফতর থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

ইতোমধ্যে ওই ধর্ষণ মামলার তদন্তভার স্থানান্তর করে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর আগে মামলাটি তদন্ত করছিল বনানী থানা পুলিশ। ৯ মে পুলিশ সদর দফতর থেকে দেয়া আদেশে মামলার তদন্তভার স্থানান্তর করা হয়।

রাজধানীর বনানী থানার কে ব্লকের ২৭নং রোডের ৪৯নং হোল্ডিংয়ে ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলের অবস্থান।

হোটেলটির জেনারেল ম্যানেজার ফ্রাঙ্ক ফরগেইট ও এক্সিকিউটিভ (ইন্টারনাল অপারেশন) ফারজান আরা রিমি জাগো নিউজকে বলেন, ‘পুলিশের পক্ষ থেকে যা জানতে চাওয়া হয়েছে তা আমরা জানিয়েছি। ওইদিন এ ধরনের কোনো ঘটনা আদৌ ঘটেছিল কিনা- তা আমাদের জানার বিষয় নয়। কারণ ওই সময় কেউ হোটেল কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করেননি। এতদিন পর মামলা হওয়ায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ওই বিষয়ে কিছু আন্দাজ করাও সম্ভব হচ্ছে না। কারণ এক মাসের বেশি সময়ের ফুটেজ আমরা রাখি না।’

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে পুলিশ সদর দফতরের দায়িত্বে থাকা অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ফরেনসিক) রওশন আরা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, সিআইডির ফরেনসিক এক্সপার্টদের সহযোগিতায় অনেক মামলার জট খুলেছে। বেরিয়ে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য। বনানীর ধর্ষণের ঘটনায় ওই হোটেলের ফুটেজ উদ্ধারে অবশ্যই সিআইডির ফরেনসিক টিম সহযোগিতা করতে পারবে।

যোগাযোগ করা হলে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার শেখ মো. রেজাউল হায়দার জাগো নিউজকে বলেন, ৩০ দিনের বেশি সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ রাখা যায় না- এটা ভুল তথ্য। বনানীর ঘটনায় তারা সিসিটিভি ফুটেজ দেয়নি, নাকি ডিলিট করে দিয়েছে তা অবশ্যই তদন্তসাপেক্ষ বিষয়।

তিনি বলেন, ‘হার্ডডিস্ক থেকে সিসিটিভির সেই রাতের ফুটেজ হোটেল কর্তৃপক্ষ যদি ডিলিট করে থাকে তা উদ্ধার করা সম্ভব। অনেক ঘটনায় আমরা ডাটা রিকভার করেছি। আর যদি ফরমেট অপশনে নতুন করে উইন্ডোজ দিয়ে থাকে তবে কঠিন হয়। এক্ষেত্রে বুঝতে হবে হোটেল কর্তৃপক্ষের ইনটেনশন ভালো ছিল না বিধায় ফরমেট অপশনে নতুন করে উইন্ডোজ দিয়ে ডিলিট করেছে। তদন্তকারী সংশ্লিষ্টরা যদি সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করেন তবে সহযোগিতা করা হবে।’

rape

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উইমেন সাপোর্ট সেন্টারের এডিসি আসমা সিদ্দীকা মিলি জাগো নিউজকে বলেন, ফুটেজ উদ্ধারসহ সার্বিক বিষয়ে কাজ চলছে। ধর্ষণের ঘটনায় ওই রাতের ফুটেজ হোটেল কর্তৃপক্ষ দিতে পারেনি। ফুটেজ উদ্ধারে আমরা প্রযুক্তিগত সহযোগিতার কথা ভাবছি। প্রয়োজন পড়লে অবশ্যই সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের সহযোগিতা নেব।

এ বিষয়ে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জব্বার জাগো নিউজকে বলেন, ‘অটো ডিলিট হয়ে যাক অথবা স্বপ্রণোদিত ডিলিট করা হোক না কেন, ওই রাতের সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার সম্ভব, খুবই সম্ভব। আপনি যদি চান, আপনার হারিয়ে যাওয়া বা ডিলিট হয়ে যাওয়া কোনো ডকুমেন্ট উদ্ধার করতে সেক্ষেত্রে আপনি রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে গেলেই তারা সমস্যার সমাধান দিতে পারবে।’

‘বাংলাদেশে এ ধরনের প্রযুক্তি সর্বত্র আছে। আমি জানি না কী কারণে পুলিশ এখন পর্যন্ত ওই হোটেলের কম্পিউটার বা সিসিটিভি জব্দ করেনি? পুলিশের প্রধান কাজ ছিল সেগুলো জব্দ করা এবং সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের সহযোগিতা নেয়া। কারণ সিআইডি এ বিষয়ে তাদের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে’- যোগ করেন মোস্তফা জব্বার।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘তদন্তসংশ্লিষ্টরা যদি প্রযুক্তিগত সহযোগিতা নেন তা হলে সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার সম্ভব।’

এদিকে, বনানী থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে জানান, ২৮ মার্চ রাতে ওই ঘটনা ঘটে। অথচ হোটেল কর্তৃপক্ষ ৩০ মার্চে পুরো মাসের ডাটা ডিলিট করে। তারা (হোটেল কর্তৃপক্ষ) এখন অজুহাত দিচ্ছে এক মাসের বেশি ডাটা তারা সংরক্ষণে রাখে না।

গত ২৮ মার্চ ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে এক বন্ধুর জন্মদিনে যোগ দিতে এসে অপর বন্ধুদের যোগসাজশে ধর্ষণের শিকার হন ওই দুই তরুণী। তাদের ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে রেগনাম গ্রুপের পরিচালক সাদমান সাকিফ, তার বন্ধু আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ ও আওয়ামী লীগের এক নেতার ছেলে নাঈম আশরাফের বিরুদ্ধে। ঘটনার প্রায় ৪০ দিন পরে ভুক্তভোগীরা থানায় মামলা করলে দেশব্যাপী চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।

নির্যাতিত দুই তরুণীর দাবি, পুরো বিষয়টি আগে থেকেই পূর্বপরিকল্পিত। এ পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত ছিল দ্য রেইন ট্রি হোটেল কর্তৃপক্ষও।

জেইউ/জেডএ/এমএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।

আরও পড়ুন