বনানীর ‘ধর্ষণ’ ঘটনায় আটক হতে পারেন নাজিয়া ও আলিশা


প্রকাশিত: ০৯:১৫ এএম, ০৮ মে ২০১৭

রাজধানীর বনানীতে বন্ধুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনায় অভিযুক্তদের বান্ধবী নাজিয়া ও তানজি আলিশা ওই রাতে হোটেলে উপস্থিত ছিলেন। মামলার তদন্তে তারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে পারেন। এমনকি ওই ঘটনার সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দিও দিতে পারেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ নাজিয়া ও তানজি আলিশাকে আটক করতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

গত ২৮ মার্চ বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে সাফাত আহমেদ নামে এক বন্ধুর জন্মদিনে যোগ দিতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হন বলে অভিযোগ করেন দুই তরুণী। তাদের অভিযোগ, সাফাত আহমেদ ও তার বন্ধুদের যোগসাজশে অস্ত্রের মুখে তাদের ধর্ষণ করা হয়।

ওই ঘটনার ৪০ দিন পর শনিবার সন্ধ্যায় বনানী থানায় পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন তারা। মামলা নং- ৮। মামলায় সাদনান সাকিফ, তার বন্ধু সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও তার দেহরক্ষীকে (নাম পাওয়া যায়নি) আসামি করা হয়েছে।

‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অভিযুক্তরা ছাড়া আরও তিন তরুণী ও এক তরুণ উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন ধর্ষণের অভিযোগ আনা দুই তরুণী এবং তাদের বান্ধবী স্নেহা ও বন্ধু শাহরিয়ার।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, জন্মদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত নাজিয়া ও তানজি আলিশার চালচলন সন্দেহজনক ছিল। তারা সাফাত, নাঈম ও সাকিফের বান্ধবী।

ধর্ষণের অভিযোগ আনা এক তরুণী পুলিশকে জানিয়েছেন, সেদিন দ্য রেইন ট্রি হোটেলের ছাদে গিয়ে নাজিয়া ও তানজি আলিশা নামে সাফাতের দুই বান্ধবীর সঙ্গে তাদের দেখা হয়। তারা সেখানে আড্ডা দেন। আড্ডা দেয়ার মধ্যে ওই দুই তরুণীর সঙ্গে সাফাত ও নাঈম বেশ কয়েকবার নিচে যান, আবার তারা ছাদে ফিরে আসেন।

মামলার এজাহারে একই কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কী উদ্দেশ্যে তারা সাফাত ও নাঈমের সঙ্গে নিচে যান এবং তারা ধর্ষণের অভিযোগের বিষয়ে জানতেন কিনা এসব বিষয়ে তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে বলেও মনে করেন পুলিশের তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সাফাতের বান্ধবীদের জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে পুলিশের বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) আব্দুল মতিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘তাদের ফাইন্ড আউট (শনাক্ত/ চিহ্নিত) করার চেষ্টা চলছে। তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’

ঘটনার রাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে ভিকটিম দুই তরুণী পুলিশকে জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের প্রথম তিনজন (সাফাত, নাঈম, সাকিফ) আগে থেকেই ওই হোটেলের দুটি কক্ষ ভাড়া করেন। পরে তাদের মদপান করিয়ে ধর্ষণ করা হয়। রাত থেকে সকালের মধ্যে তাদের একাধিকবার ধর্ষণ করেন সাফাত ও নাঈম। তাদের মোবাইল কেড়ে নিয়ে সাফাতের গাড়িচালক ধর্ষণের ভিডিও করে।

এতদিন পর মামলা কেন- জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘মানসম্মানের ভয়ে তারা প্রথমে মামলা করতে চাননি। তবে সেদিন রাতের ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়ায় তারা মামলা করতে বাধ্য হন।’

ওই ঘটনায় দ্য রেইন ট্রি হোটেল থেকে অভিযুক্তদের কোনো ভিডিও ফুটেজ পায়নি পুলিশ। হোটেল কর্তৃপক্ষ জাগো নিউজকে জানিয়েছে, তাদের হোটেলে এক মাসের বেশি কোনো ফুটেজ সংরক্ষিত থাকে না। তাই তারা পুলিশকে ফুটেজ দিতে পারেননি।

তবে ওই রাতের অনুষ্ঠান এবং রুম বুকিংয়ের বিষয়ে পুলিশকে পর্যাপ্ত তথ্য দেয়া হয়েছে বলেও জানায় হোটেল কর্তৃপক্ষ।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সেদিন রাতের অনুষ্ঠানের জন্য যে ভিজিটিং কার্ডের মাধ্যমে রুম বুকিং করা হয়েছিল সেটি এবং বুকিং প্রদানকারীদের ফোন নম্বর ও ই-মেইল আইডি পুলিশের কাছে রয়েছে। মামলার এজাহারে যাদের নাম উঠে এসেছে তাদের অনেককে হোটেল কর্তৃপক্ষ সেই রাতে দেখেছেন বলে স্বীকার করেছে।

এদিকে ওই ঘটনার ৪২তম দিন এবং মামলার তৃতীয় দিনেও অভিযুক্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কাউকে আটকও করা হয়নি।

এ বিষয়ে বনানী থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল মতিন বলেন, ‘আপাতত কোনো আটক কিংবা গ্রেফতার নেই। তবে তাদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে।’

পুলিশ আসামিদের ধরতে ব্যর্থ হলেও তারা পরিবারের সান্নিধ্যে রয়েছেন বলে জাগো নিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত সাফাত আহমেদের বাবা ও আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘ছেলের সঙ্গে আমার নিয়মিত কথা হচ্ছে। সে ধর্ষণ করেনি বলে আমাকে জানিয়েছে। তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে তার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী।’

তদন্তের বিষয়ে দিলদার আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘পুলিশ এত বোকা না যে আমার ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ জিজ্ঞাসাবাদ করেনি।’

এদিকে গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম জানান, দুই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করা গেছে।

সোমবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘আসামিরা যত প্রভাবশালীই হোক না কেন তাদের গ্রেফতার করা হবে, ছাড় দেয়া হবে না।’

আসামিদের কেউ পালিয়ে গেছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এ কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে এমন কোনো তথ্য নেই। কেউ পালিয়ে যেতে পারবে না। ঘটনার ছায়া তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ।’

শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ধর্ষণের আলামত সংগ্রহ করে সেগুলো পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছে ফরেনসিক বিভাগ। এরপর পুলিশ প্রহরায় ভিকটিমদের প্রথমে তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো হয়। রাতে তাদের এক খালার বাসায় রেখে আসে পুলিশ।

এআর/এমএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।