বনানীর ঘটনা ধর্ষণ নয়, আপসেও হতে পারে : অভিযুক্তের বাবা


প্রকাশিত: ০২:১১ পিএম, ০৭ মে ২০১৭
বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলার আসামিরা যথাক্রমে- নাঈম, সাফাত ও সাকিফ। যেহেতু অভিযোগ প্রমাণিত নয় সে কারণে তিনজনের মুখ অস্পষ্ট করে দেয়া হলো।

বন্ধুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে অস্ত্রের মুখে দুই তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনায় অভিযোগ আনা দুই তরুণীর ওপর উল্টো দায় চাপালেন অভিযুক্ত সাফাত আহমেদের বাবা ও আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ।

তিনি দাবি করেছেন, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তার ছেলের সঙ্গে এমন কাজ করেছেন ছেলের সাবেক স্ত্রী।

গত ২৮ মার্চ বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে সাফাত আহমেদ নামে এক বন্ধুর জন্মদিনে যোগ দিতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হন বলে অভিযোগ করেন ওই দুই তরুণী। তাদের অভিযোগ, সাফাত আহমেদ ও তার বন্ধুদের যোগসাজশে অস্ত্রের মুখে তাদের ধর্ষণ করা হয়।

ওই ঘটনার ৪০ দিন পর শনিবার সন্ধ্যায় বনানী থানায় পাঁচজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন দুই তরুণী। মামলা নং- ৮।

মামলায় সাদনান সাকিফ, তার বন্ধু সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও তার দেহরক্ষীকে (নাম পাওয়া যায়নি) আসামি করা হয়েছে।

ছেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রসঙ্গে দিলদার আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার ছেলের (সাফাত) সঙ্গে বেসরকারি একটি টেলিভিশনের সংবাদ উপস্থাপিকার বিয়ে হয়। তবে আমি সেই বিয়ে মেনে নেইনি। বিয়ের পর সেই মেয়ের নানা ধরনের অসৎ উদ্দেশ্য দেখে আমার ছেলে তাকে তালাক দেয়।’

‘সাফাতের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী তাদের (ধর্ষণের অভিযোগকারী দুই তরুণী) দিয়ে এমনটি করিয়েছে। কারণ মামলা করার জন্য ওই মেয়েই দুই তরুণীকে থানায় নিয়ে যায়’- অভিযোগ সাফাতের বাবার।

ধর্ষণের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সেই রাতে যদি কিছু হয়ে থাকে সেটা আপসেও হতে পারে। ধর্ষণ হলে নিশ্চয়ই ৪০ দিন মামলা করার জন্য অপেক্ষা করতো না তারা।’

পুলিশের রিপোর্ট পেলে দুই তরুণীর বিরুদ্ধে মানহানি মামলার হুমকিও দেন দিলদার আহমেদ।

এদিকে, মামলা দায়েরের পরদিন রোববার ধর্ষণের আলমত পরীক্ষার জন্য ওই দুই তরুণীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে ধর্ষণের আলামত নিয়ে চিকিৎসকরা সংশয় প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, সাধারণত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষণের আলামত মুছে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

এ বিষয়ে ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, তাদের স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। যেহেতু তারা বলছেন ধর্ষণের ঘটনাটি প্রায় দেড় মাস আগের। আদৌও ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যাবে কিনা- তা নিয়ে আমাদের যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

সোহেল মাহমুদ ছাড়া কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন- কবির সোহেল, মমতাজ আরা, নিলুফার ইয়াসমিন ও কবিতা সাহা। বোর্ডের অধীনে দুই তরুণীর মাইক্রোবায়োলজি, রেডিওলজি ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে। পরীক্ষার রিপোর্ট আসতে প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লাগতে পারে বলেও জানান বোর্ডপ্রধান।

এ বিষয়ে দুই তরুণীর পরিবারের কেউ কথা বলতে রাজি হননি। তবে পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তারা (মামলার অভিযুক্তরা) কয়েক দিন ধরে ওই দুই তরুণীকে ব্ল্যাকমেইলের চেষ্টা করেছিল। তাই তারা মামলা করেছে।

মামলার দুই দিন পরও অভিযুক্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ বিষয়ে বনানী থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আব্দুল মতিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আসামিদের ধরতে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে আটক কিংবা গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।’

আসামিদের ধরিয়ে দিতে ফেসবুকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর স্ট্যাটাস

অভিযুক্তদের ধরিয়ে দিতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। তিনি লিখেছেন, ‘আপনারা যারা সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, বিল্লাল হোসেন, সাদনান ও সাকিফকে চেনেন, তারা দয়া করে বনানী থানায় বিস্তারিত জানান এবং ছবি প্রকাশ করুন। যেন অন্য কেউ তাদের খোঁজ দিতে পারে। তাদের মধ্যে সাফাত ও নাঈম দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং তারা ওই দুই ছাত্রীর বন্ধু বলে পরিদর্শক মতিন জানান। এরাই অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের ধর্ষণ করেন বলে মামলায় অভিযোগ করেছেন দুই ছাত্রী।’

এআর/এমএআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।