আস্থার সংকটে নির্বাচন কমিশন
প্রথমে দশম জাতীয় সংসদ, এরপর উপজেলা এবং সর্বশেষ তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন শেষে আস্থার সংকটে পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশনের পক্ষপাতিত্ব ছাড়াও, অদক্ষতা, অদূরদর্শীতা এবং বিভক্তির কারণে বর্তমান ইসির অপসারণ বিষয়ে বিএনপির দাবির পালে জোর হাওয়া লেগেছে। তাই এই ইসির অধীনে আগামীতে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
দশম জাতীয় সংসদ (৫ জানুয়ারি, ২০১৪) নির্বাচনও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল এ কমিশনের অধীনে। এ নির্বাচনটি নবম জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ দলই বর্জন করে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্রসহ ১৭টি দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এছাড়াও নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা বিজয়ী হওয়ায় নির্বাচনটি নিয়ে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি হয়। আর সারাদেশে ব্যাপক সহিংসতা, ভোট কারচুপি এবং ভোটারদের অনুপস্থিতির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয় এ নির্বাচন। ১৮ জন নিহত এবং ১৫২টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।
এরপর পাঁচ দফার উপজেলা নির্বাচন আস্থার সংকটে ফেলে নির্বাচন কমিশনকে। সর্বশেষ যুক্ত হয় ঢাকার দুটি ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরশেন নির্বাচন। এবিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ। জনসাধারণের ধারণা তাদের নিয়ে আর সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না।
প্রথম (১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪) দফার ৯৭টি উপজেলা এবং ও দ্বিতীয় দফার (২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪) ১১৫টি উপজেলা নির্বাচন মোটামুটি শান্তিপূর্ণ হলেও পরের পরিস্থিতি কমিশনের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। সহিংসতা ও কেন্দ্র দখল করে ভোট জালিয়াতির ঘটনা মাত্রা ছাড়িয়ে যায়।
গত বছরের ১৫ মার্চ তৃতীয় দফায় ৮১টি উপজেলা নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। সহিংসতার ঘটনাও ঘটে। এ পরিস্থিতিতে ২৩ মার্চের চতুর্থ দফা উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করতে কমিশনের কিছু তৎপরতা দেখা যায়। নির্বাচনের মাঝপথে হঠাৎ বিদেশে চলে যাওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটি ই-মেইল বার্তায় নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কমিশনকে নির্দেশ দেন।
কিন্তু চতুর্থ দফা নির্বাচনে কারচুপি আর অনিয়ম তো কমেইনি, বরং কয়েক গুণ বেড়ে যায়। আর সর্বশেষ গত বছরে ৩১ মার্চ পঞ্চম দফা নির্বাচনে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। অভিযোগ আছে, প্রশাসনের সহায়তায় সরকারদলীয় কর্মী-সমর্থকেরা কেন্দ্র দখল করে ব্যালটে সিল মারার উৎসব করেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
সর্বশেষ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের অনিয়ম সম্পর্কে জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ইসি। ভোট জালিয়াতির দৃশ্য দেখার পর এবং প্রার্থীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরও কমিশন তা আমলে নেয়নি। উল্টো দাবি করেছে, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। এছাড়া সেনা মোতায়েন নিয়ে ইসি বিভক্ত হয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগ ঘরানার নির্বাচন কমিশনাররা সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিপক্ষে ছিল। পরে সেনা মোতায়েন করা হলেও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে তাদেরকে ক্যান্টেমেন্টেই রাখা হয়।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক (সুজন) ড. বদিউল আলম মজুমদার জাগো নিউজকে বলেন, এই নির্বাচন কমিশন এখন আস্থার সংকটে আছে। শুধু ২০ দল কেন, সুশীল সমাজ ও বিদেশিরাও এখন এই কমিশনের উপর আস্থা রাখতে পারছেন না।
এইচএস/বিএ/আরআইপি