হাওরে বন্যা : জাতীয় ঐক্যের আহ্বান ড. কামালের


প্রকাশিত: ০১:৩৯ পিএম, ২৯ এপ্রিল ২০১৭

হাওরে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘দুর্যোগপূর্ণ হাওরবাসীর পাশে দাঁড়ান’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।

ড. কামাল হোসেন বলেন, হাওরবেষ্টিত জেলাগুলোকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করতে হবে এবং হাওরে বাঁধ নির্মাণ ও সংরক্ষণের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি হাওরের জলমহালের ইজারা বাতিল করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সেখানে অবাধে মাছ ধরার সুযোগ এবং গবাদিপশুর খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি বলেন, এটা একটা জাতীয় সংকট। এ সংকট মোকাবেলার জন্য দরকার জাতীয় ঐক্য। এটাকে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার না করে এবং পাল্টাপাল্টি দোষারোপ না করে সমস্যা চিহ্নিত করা দরকার। সব ধরনের গঠনমূলক প্রস্তাব সামনে আনা দরকার।

‘এই মানসিকতা নিয়ে বলা দরকার, চলেন আমরা কোনো দলীয় পাল্টাপাল্টি দোষারোপ না করে আসুন সবাই মিলে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে বাঁচানো যায়’ বলেন ড. কামাল।  তিনি বলেন, জাতীয় সংকট মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে গঠনমূলক প্রস্তাবগুলো এনে কীভাবে সমন্বয় করে কাজ করা যায় অবশ্যই সে বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া উচিত।

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে গত ২৯ মার্চ সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেটের হাওর অঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়। সরকারি হিসাবে বন্যায় প্রায় দুই লাখ হেক্টর জমির বোরো ধান সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া এক হাজার ৭৬ টন মাছ মারা গেছে। হাঁস মারা গেছে তিন হাজার ৮৪৪টি।

হাওরের পানিতে ইউরেনিয়ামের কারণে মাছ মারা গেছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে তা নাকচ করে দিয়ে বলা হয়েছে, হাওরের পানিতে ইউরেনিয়ামের অপপ্রচার চালিয়ে বিএনপি মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, ‘হাওরাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের নিয়ে বিএনপি নেতারা রাজনীতি করছেন।’ সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এ বিষয়টি তুলে ধরা হলে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন রাজনৈতিক নেতাদের পাল্টাপাল্টি দোষারোপ না করে, সঙ্কট মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

এ সময় নির্বাহী বিভাগ বিচার বিভাগকে ভালো চোখে দেখছে না বলে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার করা মন্তব্যের বিষয়ে এই সংবিধান বিশেষজ্ঞ বলেন, নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইন বিভাগের সমন্বয়ে কাজ হয়। সংবিধান অনুযায়ী সবারই নির্দিষ্ট কাজ আছে। লক্ষ্য অর্জনে সে ব্যাপারে গঠনমূলক ভূমিকা রাখবে। এ নিয়ে কোনো বিতর্কের অবকাশ নেই। মাঝে মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব এখানে সৃষ্টি হয় তা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সুরাহা অবশ্যই হওয়া উচিত। ‘আমি মনে করি এটাকে নিয়ে কোনো ধরনের সংকট করা উচিত নয়।’

‘অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, দুর্নীতি সমাজের অনেক ক্ষতি করছে। দুর্নীতির কারণে যে কাজটা পাওয়া উচিত সেই কাজটা আমরা পাচ্ছি না। দুর্নীতির কারণে কর্মসূচি বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয়। আমাদের শাসনব্যবস্থার মধ্যে জবাবদিহিতার প্রয়োজন আছে, রাজনীতির মধ্যে’ বলেন ড. কামাল হোসেন।

গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য তবারক হোসেনের নেতৃত্বে বন্যাদুর্গত হাওরাঞ্চল পরিদর্শনকারী দলের প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে ড. কামাল হোসেন জানান, বন্যায় আট লাখ হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। ২৪ লক্ষাধিক কৃষক পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। সরকারি হিসাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ চার হাজার ৬২৪ কোটি টাকা হলেও বাস্তবে এ পরিমাণ আরও অনেক বেশি।

এ সময় ত্রাণ বিতরণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরিতে অনিয়ম হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন গণফোরাম সভাপতি। তিনি বলেন, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রাধান্য না দিয়ে উপজেলাওয়ারী জনসংখ্যার ভিত্তিতে তালিকা করে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর খবরে হতাশ ফসলহারা কৃষক।

এমএএস/জেএইচ/ওআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।